হলমার্ক কেলেঙ্কারি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সোনালী ব্যাংক পর্ষদ

হলমার্ক কেলেঙ্কারি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সোনালী ব্যাংক পর্ষদ

সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলমার্কের কেলেঙ্কারির ঘটনা তদারক করতে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের জন্য সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান চিঠি দেবেন বলে জানা গেছে।

সোনালী ব্যাংকের অসাধু পর্ষদের যোগসাজসে রূপসী বাংলা হোটেল শাখায় জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অখ্যাত কোম্পানি হলমার্ক।

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুভাষ সিংহ রায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক সাইমুম সরওয়ার কামাল এবং মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরি রয়েছেন।

এছাড়া পরিচালক হিসেবে আছেন- মো. শহীদ উল্লাহ মিঞা, মো. আনোয়ার শহীদ, এএসএম নাইম, কেএম জামান রোমেল, কাশেম হুমায়ুন, সত্যেন্দ্র চন্দ্র ভক্ত।

পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক ব্যাংকার কাজী বাহারুল ইসলাম ও পদাধিকারবলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে- নিয়ম অনুসারে ব্যাংকটির পরিচালকদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল, তা পালনে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরিচালকরা কঠোর হলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল।

ভয়াবহ এ জালিয়াতির ঘটনায় এরইমধ্যে ব্যাংকের দুই উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিকুর রহমান ও মাইনুল হক, পাঁচ মহাব্যবস্থাপকসহ ৩১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছেও একই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সূর চৌধুরী বলেন, ‘‘যারা দায়ী প্রমাণিত হয়েছেন, তাদের সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে রয়েছে।’’

এর আগে গত ২০ ও ২৫ মে আলাদা দুটি চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দেয়, জালিয়াতির এ ঘটনায় শাখার ব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম আজিজুর রহমান ও সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক সাইফুল হাসানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও সাময়িক বরখাস্ত করতে হবে। এরই মধ্যে এ দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ওই দুই চিঠিতে আরও নির্দেশ দেওয়া হয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা দল দিয়ে তদন্ত করিয়ে একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করার।
পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শাখা পর্যায়ে তদারকিতে সংশ্লিষ্ট মহাব্যবস্থাপক অফিস, প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা পর্যায় পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট দায়দায়িত্ব নিরূপণ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলকৃত নিরীক্ষা দলের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম সাইফুল শামসুল আলম অ্যান্ড কোম্পানির করা ওই অডিট প্রতিবেদনে তত্কালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৩২ কর্মকর্তাকে এ জালিয়াতিতে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তত্কালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবসরে যাওয়ায় তার নাম বাদ দিয়ে বর্তমান দুই উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৩১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এত বড় একটা ঘটনায় শাস্তি না হয়ে পারে না। তবে শুধু সাময়িক বরখাস্ত করলেই চলবে না, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার; কিন্তু তা হয়নি। এত বড় ঘটনার দায় পরিচালকরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। পর্ষদ পুনর্গঠন খুবই সময়োপযোগী হবে।’

অর্থ বাণিজ্য