গাড়ি পোড়ানো মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে আবেদন

গাড়ি পোড়ানো মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে আবেদন

মির্জা ফখরুলসহ বিরোধী জোট নেতাদের বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানোর মামলার বিচার যে আদালতে চলছে, সে আদালতের (দ্রুত বিচার আদালত-৫) কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

রোববার সকালে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদন উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আদালত আবেদনটি শুনানি ও আদেশের জন্য রেখেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন  আবেদনকারী ডেপুট অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক।

এ ব্যাপারে রোববার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, গাড়ি পোড়ানো মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আমরা আজকে একটি আবেদন করেছিলাম। আদালত আবেদন গ্রহণ করেছেন এবং আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।
প্রসঙ্গত, আইন অনুয়ায়ী দ্রুত বিচার আদালতের  গেজেট না দেখাতে পারায় বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ আগস্ট সোমবার ওই আদালতের কার্যক্রমের ওপর (দ্রুত বিচার আদালত-৫) আট সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। পরদিন মামলার  সাক্ষ্য গ্রহণের কথা থাকলেও দ্রুত বিচার আদালত- ৫ এর হাকিম এজলাসে বসেননি।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত শনিবার বাংলানিউজকে বলেন,“দ্রুত বিচার আদালত গঠন নিয়ে  ২০০৯ সালের ১৯ মার্চের গেজেট আমাদের হাতে এসেছে। আমরা ওইদিন আদালতের কাছে সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত আমাদের সময় দেননি। রোববার এ স্থগিতাদেশ তুলে দেওয়ার জন্য আমরা আবেদন করবো।”
হাইকোর্টে মাহবুব উদ্দিন খোকনের আবেদনের শুনানির দিন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, “আইন শৃংখলা বিঘ্নকারী (দ্রুত বিচার) আইন-২০০২ এর ৮ ধারা অনুযায়ী সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেশের যে কোনো জেলায় এক বা একাধিক দ্রুত বিচার আদালত গঠন করতে পারবে। একই আইনে বলা হয়েছে, সরকার সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক নিয়োগ করবে ও বিচারকের বিচারিক অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করবে। কিন্তু ঢাকার ৫ ও ৭ নম্বর দ্রুত বিচার আদালত গঠনের ক্ষেত্রে সরকার কোনো গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) একটি আদেশ দিয়ে আদালত গঠন ও এর বিচার নিয়োগ করেছেন, যা বেআইনী। আর এ কারণেই রিট আবেদনটি করা হয়েছে।”

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেন, “আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী সরকার আদালত গঠন করবে ও বিচারক নিয়োগ করবে। ২০০২ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম আইনটি করা হয়। এ আইনে একই বছরের ৮ মে ঢাকায় চারটি আদালত গঠন কর হয়।” এসময় তিনি এ সংক্রান্ত গেজেটের কপি আদালতে দাখিল করেন।
এরপর তিনি বলেন, “২০০৮ সালে সিএমএম এনামুল হক দ্রুত বিচার আইনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিচারকদের (ম্যাজিস্ট্রেট) নাম উল্লেখ করে তাদের জন্য দ্রুত বিচার আদালত গঠনের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এরপর সরকার সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে তা অনুমোদন করে। এটা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হয়।”

উল্লেখ্য, বর্তমানে গেজেটটি সরকারের হাতে রয়েছে। আর এ গেজেট নিয়ে রোববার আদালতের কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার আবেদন করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোট নেতাদের আইনজীবী আহসানুল করিম জানান, “ওনারাতো (রাষ্ট্রপক্ষ) শুনানির দিন কোনো গেজেট দেখাতে পারেননি। আর শুধু গেজেট নিয়ে আসলে হবে না। গেজেটে দ্রুত বিচার আদালত-৫ ও ৭ এর হাকিমের নাম আছে কিনা সেটা দেখতে হবে।”

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিলের হরতালে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ তেজগাঁও থানায় বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে। এ মামলায় ৩১ জুলাই দ্রুত বিচার আদালত-৭ এ অভিযোগ গঠনের জন্য তারিখ নির্ধারিত ছিল। ওইদিন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা হাকিম মোহাম্মদ এরফান উল্লাহর আদালতের (দ্রুতবিচার আদালত-৭) ওপর অনাস্থা জানান। এরপর মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহা মামলাটি দ্রুত বিচার আদালত-৫ এ পাঠান। এ আদালতের হাকিম হারুন-অর-রশিদ সেদিনই মামলায় ৪৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। পাশাপাশি ৭ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।

এর আগেই ৬ আগস্ট মাহবুবউদ্দিন খোকনের রিট আবেদনের কারণে ৫ নম্বর আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করে দেন হাইকোর্ট।

 

রাজনীতি