মাটির ময়না লড়াই করে জিতেছে : জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

মাটির ময়না লড়াই করে জিতেছে : জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

১৯৮০ সালের প্রথম দিকে তারেক মাসুদের প্রথম চলচ্চিত্র ডানা মেলতে শুরু করে। শিল্পী এসএম সুলতানকে নিয়ে তারেক মাসুদ একটি ছবি তৈরি করেছিলেন, ১৯৮৯ সালে। নাম আদমসুরত। তখন থেকে আমি তারেকের সঙ্গে জড়িত।

সত্যি বলতে তিনদশক তার সঙ্গে প্রতিদিনই একটা স্মৃতি। আদমসুরত ছবিতে আমি ধারাবর্ণনা করেছিলাম। এরপর তাঁর প্রায় সব ছবিতেই আমি বিভিন্নভাবে যুক্ত থেকেছি।

অভিনয় করেছি মাটির ময়না (২০০২), অর্ন্তযাত্রা (২০০৬০ এবং সর্বশেষ রানওয়েতে (২০১০)। তারেকের চলচ্চিত্র ভাবনাটা সত্যিই অন্যরকম। কাগজের ফুল ছবিটি নিয়ে তিনি প্রায় ১০ বছর পরিকল্পনা করেছেন। কাজ ছাড়া অন্য কিছুই বুঝতেন না।

মনে পড়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়ার ঘটনা। আমি তখন কক্সবাজার। আমাকে হঠাৎ ফোন করে বললেন, কাউকে বলবেন না। কান ‘ক্রিয়েটিভ ইভেন্ট’-এ ৫১১টি ছবির মধ্যে ২২টি সিলেকশন হয়েছে। এর মধ্যে ‘মাটির ময়না’ রয়েছে।

আমি তো শুনে অবাক। কারণ প্রায় ৫৬ বছর আগে ‘হিউম্যান ডিরেক্টরি’(বেস্ট) হয়েছিল কান-এ। এরপর এরকম একটি বংলা ছবি, সত্যিই স্বপ্নের মত। যেহেতু এটি বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ উদ্যোগের ছবি ছিল, তাই ফরাসি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কান চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক আমাদের নিমন্ত্রণ করলো।

আমরা বিমানে ওঠা পর্যন্ত বাংলাদেশের কাউকে জানাইনি। ওখানে আমরা ১৫ দিন ছিলাম, প্রাচী কিছুদিন আগে চলে আসে। তবে আমি পুরস্কার দেওয়া পর্যন্ত ছিলাম। আমরা অনুষ্ঠানস্থল থেকে প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার দূরে থাকতাম। যখন তারেক শেষ মুহূর্তে জানল যে আমরা পুরস্কার পেতে যাচ্ছি, তখন দৌড়ে আমার কোলে উঠে পড়ল। আমরা রেডি হলাম যাওয়ার জন্য। কিন্তু উত্তেজনার মুহূর্তে পৌঁছে দেখলাম ক্যাথরিন ও তারেক দুজনেই ভুলে আমন্ত্রণপত্র  রেখে এসেছে। শেষ পর্যন্ত উৎসব কমিটির পরিচালককে ফোন দিয়ে একটি নতুন কার্ড ইস্যু করা হল।

৫৬ বছরের ইতিহাসে কানে ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছিল। সত্যি বলতে মাটির ময়না লড়াই করে জিতেছে। আমার জীবনের অনেক বড় একটি মুহূর্ত। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের হঠাৎ চলে যাওয়াটায় শুধু চলচ্চিত্রের নয়, দেশেরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।

বিনোদন