রেমিটেন্স বেড়েছে সোয়া বিলিয়ন ডলার

রেমিটেন্স বেড়েছে সোয়া বিলিয়ন ডলার

 সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি কমলেও গত অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার (রেমিটেন্স) পরিমাণ ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে ১২ বিলিয়ন ৮৪৬ দশমিক ০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৫৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা আগের বছরে ছিল ১১ বিলিয়ন ৬৫০ দশমিক ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর গত অর্থবছরের (২০১১-১২) কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থাপন করা বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে।

সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইয়া প্রতিবেদনটি সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান এবং এর অনুলিপি সরবরাহ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরে ছয় লাখ ৯১ হাজার ৪০২ জন চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন। যা আগের ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল চার লাখ ৩৯ হাজার ৩৭৫ জন। জনশক্তি রপ্তানির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এতে আয়ও বেড়েছে।

এতে বলা হয়, গত অর্থবছরে বিদেশ থেকে কর্মী ফিরে আসার প্রবণতাও কমেছে। এ বছর ফিরে এসেছে মাত্র ২৮ হাজার ৮৫৮ কর্মী। এর আগের বছরে এ কর্মী ফিরে আসার প্রবণতা ছিল বেশি। ওই বছরে ফিরেছে ৪২ হাজার ২৮৪ জন।

মন্ত্রিসভায় তোলা প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৩২ ডলার বেড়ে ৮৪৮ মার্কিন ডলার হয়েছে। আগের বছর মাথাপিছু আয় ছিল ৮১৬ মার্কিন ডলার। এতে মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিন দশমিক ৯২ শতাংশ।

গত অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ পাঁচ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে ২৪ বিলিয়ন ২৮৭ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। আগের বছরে এর পরিমাণ ছিল ২২ বিলিয়ন ৯২৮ দশমিক ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এ সময় বেড়েছে আমদানির পরিমাণও। যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ বিলিয়ন ৪৪১ দশমিক ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৩৩ বিলিয়ন ৬৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৃদ্ধির পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৩০ শতাংশ।

গত অর্থবছরে দেশে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৯৪ হাজার ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের বছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭৯ হাজার ৪০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। এতে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৮ দশমিক ৯৬ বা ১৯ শতাংশ।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এ সময়ে ব্যয় হয়েছে ৩৭ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। উন্নয়ন খাতে এ সময়ে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এ সময় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার ২৭৯ কোটি দুই লাখ টাকা। এতে ১০৪টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগের বছর এ কর্মসূচিতে ব্যয় হয় ১৫ হাজার ৫৬৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এ সময় কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয় ৬৯টি।

বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনও এ সময় বেড়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মাত্র এক বছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে এক হাজার ১৭৫ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট। ১৮টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করেছে।

এতে বিদ্যুতের উৎপাদন চার হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ছয় হাজার ৬৫ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ২৪ দশমিক ০৪ শতাংশ।

গ্যাসের উৎপাদন তিন দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে ৭৪৭ দশমিক ৯৬৬ বিসিএফে উন্নীত হয়েছে। আগের বছর এ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭২১ দশমিক ০২৭ বিসিএফ।

গত অর্থবছরে দেশে বিদেশি পর্যটক আসার হারও বেড়েছে ১৬৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ বছর দেশে পর্যটক এসেছে দুই লাখ দুই হাজার ১২৫ জন। আগের বছর পর্যটক এসেছিল ৭৪ হাজার ৯৬৮ জন।

জনপ্রশাসনের বিভিন্ন শূন্যপদে এ সময় নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১২ হাজার ১৬ জনকে। আগের বছর শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল নয় হাজার ৫৫৯ জনকে। শূন্যপদে নিয়োগ দেয়ার হারও বেড়েছে ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ।

ওই অর্থবছরে দেশে মোট ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৯০০ অনুমোদিত পদের মধ্যে শূন্যপদ ছিল দুই লাখ ৪২ হাজার ২৩৬টি। এর আগের বছর অনুমোদিত পদ ছিল ১১ লাখ ৭৩ হাজার। ওই সময় শূন্যপদ ছিল দুই লাখ ১৪ হাজার ৩৭০টি।

অর্থ বাণিজ্য