মা-বাবার খেদমতে হজরত আলকামাহ-এর মর্মস্পর্শী ভাষণ

মা-বাবার খেদমতে হজরত আলকামাহ-এর মর্মস্পর্শী ভাষণ

হজরত আলকামা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবি। তিনি মৃত্যুর সময় কালেমা বলতে পারছিলেন না। সে খবর শুনে প্রিয়নবি তার শয্যাপাশে উপস্থিত হন। অবশেষে হজরত আলকামা মৃত্যুর সময় ঈমানী কালেমা পড়েই ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু বরণ করেছিলেন।

মৃত্যুর আগে হজরত আলকামা রাদিয়াল্লাহু আনহু মুসলিম উম্মাহর জন্য নসিহত স্বরূপ মর্মস্পর্শী কথা বলে যান। হজরত আলকামার ঘটনা সম্বলিত হাদিসটি তুলে ধরা হলো-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুবক সাহাবার নাম আলকামাহ। সে বিভিন্নভাবে দ্বীনের সাহায্য করত। হঠাৎ একদিন সে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাঁর স্ত্রী কোনো এক মাধ্যমে বিশ্বনবির নিকট আলকামাহ’র অসুস্থতার সংবাদ পৌঁছায়।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ খবর শুনে হজরত আলি, হজরত বেলাল এবং হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে তাঁর অবস্থা দেখার জন্য পাঠান। তাঁর গিয়ে দেখলো, আলকামাহর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের অবস্থা। তাঁরা তাঁকে কালেমারে তালকিন দিলেন অথচ কিছুতেই সে তাওহিদের কালেমা পড়তে পারছে না।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দিয়ে এ সংবাদ পাঠানো হলো।
(সংবাদ শুনে) তিনি (বিশ্বনবি) জানতে চাইলেন, আলকামাহ’র পিতা-মাতা জীবিত আছে কিনা?
হজরত বেলাল জানালেন, শুধুমাত্র তাঁর বৃদ্ধা মা জীবিত আছেন।

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত বেলালকে তাঁর মায়ের নিকট এ সংবাদ দিয়ে পাঠালেন যে, যদি সম্ভব হয় সে যেন বিশ্বনবির দরবারে আসে, আর যদি সে আসতে অপারগ হয় তবে বিশ্বনবি নিজেই তাঁর বাড়িতে যাবেন। হজরত বেলাল বৃদ্ধার কাছে গিয়ে বিশ্বনবির এ সংবাদ জানালেন।

আলকামাহ’র মা এ কথা শুনেই বললেন, আমার জীবন বিশ্বনবির জন্য কুরবান হোক। আমি নিজেই বিশ্বনবির দরবারে উপস্থি হবো।

অতঃপর বৃদ্ধা মহিলা লাঠির ওপর ভর করে বিশ্বনবির দরবারে উপস্থিত হয়ে বিশ্বনবিকে সালাম করে বসে পড়লেন।

প্রিয়নবি বৃদ্ধার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ‘আমি যা কিছু জিজ্ঞাসা করি তার ঠিক ঠিক উত্তর দিবে। যদি মিথ্যা বল তবে আমি তা ওহির মাধ্যমে অবগত হবো। বিশ্বনবি জানতে চাইলেন, আলকামাহ’র জীবন কাল কেমন ছিল?

বৃদ্ধা বলতে লাগলো, সে বেশি বেশি নামাজ পড়ত, রোজা রাখত; আর দান-সাদকা করার ক্ষেত্রে তো সীমা ছিল না। বিশ্বনবি তাকে আবার জিজ্ঞাসা করল, তোমার এবং তাহার সম্পর্ক কেমন ছিল? বৃদ্ধা উত্তর দিল- আমি তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কেন? বৃদ্ধা উত্তর দিল- সে তার স্ত্রীকে আমার ওপর প্রাধান্য দিত এবং স্ত্রীর কথা মতো চলত।

তখন বিশ্বনবি উত্তর দিলেন, ‘মাতার অসন্তুষ্টি তাকে কালেমা পড়া থেকে বিরত রেখেছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত বেলালকে বললেন, হে বেলাল! শুকনো কাঠ সংগ্রহ কর। আমি আলকামাহকে আগুনে জালিয়ে দিব।

তখন বৃদ্ধা মাতা সন্তানের কঠিন শাস্তির কথা শুনে অস্থির হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার সামনে আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে আগুনে পোড়াবেন! আমি ইহা কিভাবে সহ্য করব?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর শাস্তি ইহা অপেক্ষা কঠিন এবং দীর্ঘস্থায়ী। তুমি যদি চাও যে, আল্লাহ তোমার সন্তানকে ক্ষমা করুন; তাহলে তুমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমার সন্তুষ্টি ব্যতিত তার নামাজ রোজা ও অন্যান্য ইবাদাত কোনো কাজে আসবে না।

এ কথা শুনে বৃদ্ধা বলতে লাগলো, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনাকে, আল্লাহকে এবং উপস্থিত সকলে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি আলকামাহ’র প্রতি সন্তুষ্ট।

বিশ্বনবি হজরত বেলালকে বললেন, ‘আলকামাহ’র নিকট গিয়ে দেখ সে কালেমা পড়ছে কিনা? হতে পারে বৃদ্ধা আমাদের সম্মানার্থে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে, আন্তরিকভাবে সন্তুষ্ট নয়।

হজরত বেলাল আলকামাহ’র দরজায় পৌছা মাত্র তাঁর কণ্ঠ থেকে কালেমা (لَا اِلَهَ اِلَّا الله) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করার শব্দ পেল। হজরত বেলাল ঘরে প্রবেশ করে সবাইকে জানাল যে, তাঁর মা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল বিধায় তার বাক-শক্তি রুদ্ধ হয়েছিল।

হজরত আলকামাহ এক মর্মস্পর্শী ভাষণ দেন- 

হে মুহাজির ও আনসারগণ! ভালো করে শুনে রাখ! যে ব্যক্তি স্ত্রীকে মায়ের ওপর প্রাধান্য দিবে, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। তার ফরজ এবং নফল আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে কবুল নহে।

পরিশেষে…
পিতা-মাতাকে সর্বাবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাধন্য দিতে হবে। এ হাদিসের আলোকে মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান, পিতা-মাতার প্রতি অন্যায় আচরণ নয়; বরং পিতা-মাতার সর্বাধিক খেদমত তথা সেবা করা। কেননা পিতা-মাতার অসন্তুষ্টি ঈমানহীন মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তাই তাদের জন্য সন্তুষ্টিমূলক কাজ করতে হবে। তাদের খেদমত করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ঈমানের মৃত্যু লাভসহ দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলামী জগত