1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন

সম্প্রচার নীতিমালা সম্পূর্ণভাবে হস্তক্ষেপমূলক: মাহফুজ আনাম

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৪
  • ৬৯ Time View

জাতীয় সম্প্রচার নীতিমাল সম্পর্কে ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, “এই নীতিমালা সম্পূর্ণভাবে হস্তক্ষেপমূলক। এটা বিভিন্নভাবে সম্প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করবে। এতে যেসব ধারা আছে, সেগুলোর অধিকাংশই সম্প্রচারের বিষয় বা আধেয় (কনটেন্ট) সম্পর্কে। কী প্রচার করা যাবে আর কী প্রচার করা যাবে না, তা এমনভাবে নির্দেশ করা হয়েছে যে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ধারাগুলো নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে যেকোনো কিছুকেই নীতিমালার পরিপন্থী বলে অভিযোগ করতে পারবে।”image_94652_0

দৈনিক প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহফুজ আনার তার বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “যেমন একটি ধারা আছে এ রকম: রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে—এমন ধরনের সামরিক, বেসামরিক বা সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না। এখন এটার সংজ্ঞা কে দেবে? কী ধরনের তথ্য প্রচার করলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এটা নির্ধারণ করবে কে? এটা তো যেমন ইচ্ছা তেমন করে ব্যাখ্যা করা যায়। ধরুন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভীষণভাবে নেমে যাচ্ছে, এর ফলে ভীষণ খরা হতে পারে, কৃষিতে সেচসংকট হতে পারে, ফসল উৎপাদন ভীষণভাবে কমে গিয়ে দুর্ভিক্ষ লেগে যেতে পারে। আপনি তো বলতে পারেন, এই তথ্যে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে; কারণ, খাদ্যসংকট আর দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রচার করা হচ্ছে। এ রকম নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে সম্প্রচারমাধ্যমের যেকোনো আচরণকেই নীতিমালা পরিপন্থী বলার হাতিয়ার তৈরি করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “একটি ধারায় লেখা আছে, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও অপরাধীদের দণ্ডবিধানে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে—এমন কোনো দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। এ রকম নীতিমালা থাকলে ১০ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই প্রচার করা যেত না, কারণ ওই ঘটনায় এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল। এটা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকেই জানা গেছে। এ রকম নীতিমালা থাকলে সেটা মানতে হলে ২০০৫ সালে শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে সম্প্রচারমাধ্যমে কিছুই প্রচার করা যেত না। কারণ, তাতে এ ঘটনায় পুলিশের তিন সাবেক মহাপরিদর্শক, এনএসআইয়ের দুজন সাবেক প্রধান ও সিআইডির তিন সাবেক কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং এ-সংক্রান্ত মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। ডিজিএফআই, এনএসআই ইত্যাদি সরকারি সংস্থা ও সরকারের অনেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ভাবমূর্তি বিনষ্ট হতো।”

তিনি আরো বলেন, “একইভাবে নারায়ণগঞ্জে সাত ব্যক্তির অপহরণ ও খুনের ঘটনায় জড়িত র্যা বের সদস্যদের বিষয়ে সম্প্রচারমাধ্যমে কিছুই প্রচার করা যেত না, কারণ তাতে র্যা বের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতো। এই নীতিমালা মানতে হলে পুলিশ বা র্যা বের হেফাজতে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্ষমতার অপব্যহার ইত্যাদি সম্পর্কেও কিছু সম্প্রচার করা যাবে না, কারণ তাতে ওই সংস্থাগুলোর ‘ভাবমূর্তি বিনষ্ট’ হবে। এই নীতিমালা থাকলে র্যাবের সদস্যদের গুলিতে পা হারানো কিশোর লিমন সম্পর্কে, কিংবা মিরপুর থানার পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টরের নির্যাতনে এক ঝুট ব্যবসায়ীর মৃত্যুসহ অজস্র ক্ষমতা অপব্যবহারের ঘটনা সম্পর্কে সম্প্রচারমাধ্যমে কিছুই প্রচার করা যেত না।”

সরকার কেন এই নীতিমালা করতে গেল-এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র এই সাংবাদিক বলেন, “দেশে অনেকগুলো ক্ষেত্রে গুরুতর জাতীয় সমস্যা আছে। যেমন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ, প্রতিবছর বর্ষাকালে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে, খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে, ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব, নকল প্যারাসিটামল খেয়ে অনেক শিশু মারা গেছে। এগুলোই হওয়া উচিত সরকারের অগ্রাধিকার। কিন্তু এসব দিকে নজর না দিয়ে কেন সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে তারা এত উৎসাহিত হয়ে উঠল, এটাই প্রশ্ন। এমনিতেই কিন্তু গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্য মানহানি-সম্পর্কিত আইনসহ বিভিন্ন রকমের আইন ও বিধিবিধান আছে। সেগুলোই কিন্তু যথেষ্ট। সম্প্রচারমাধ্যমের জন্য নতুন করে এই নীতিমালার প্রয়োজন ছিল না।”

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এ রকম একটা নীতিমালাকে যদি সম্প্রচার আইন প্রণয়নের ভিত্তি ধরি, তাহলে সেই আইন হবে স্বাধীন সাংবাদিকতার সম্পূর্ণ বিরোধী; সম্প্রচারমাধ্যমের ওপর একটা কালাকানুন চাপিয়ে দেওয়া হবে। তাই আমি সম্পূর্ণভাবে এর বিরোধী। আসলে কোনো শিল্প সম্পর্কে নীতিমালা বা আইনে এমন কিছু প্রতিশ্রুতি থাকতে হয়, যা ওই শিল্পের জন্য বিধিনিষেধের পাশাপাশি ওই শিল্পকে কিছু সুরক্ষাও দেবে। এই সম্প্রচার নীতিমালায় সম্প্রচারমাধ্যমের সুরক্ষা সম্পর্কে একটি প্রতিশ্রুতিও নেই। যাঁরা এই শিল্পে বিনিয়োগ করবেন, তাঁদের বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেওয়া বা উৎসাহিত করার কোনো প্রসঙ্গই এতে নেই। এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে এ দেশের সম্প্রচারমাধ্যমের বিকাশ থেমে যাবে; বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোও বিটিভির মতো হবে। ফলে দর্শক দেশি টিভি চ্যানেলগুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বিদেশি চ্যানেলগুলোর প্রতি আরও বেশি মাত্রায় ঝুঁকে পড়বে। তাতে সম্প্রচারমাধ্যমের ভীষণ ক্ষতি হবে।”

সরকারের কী করা উচিত-এমন প্রশ্নের জবাবে ডেইল স্টার সম্পাদক বলেন, “এই নীতিমালা প্রণয়ন ও গ্রহণের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তাও ঠিক নয়। প্রথমে একটি আইনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন করা উচিত, সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব হবে সেই কমিশনের। কমিশন সম্প্রচারমাধ্যমের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা-পরামর্শ করে এমন একটি সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যেটি হবে সম্প্রচারমাধ্যম বিকাশের সহায়ক, উল্টোটা নয়, নিয়ন্ত্রণমূলক নয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই নীতিমালার আলোকে একটি সম্প্রচার আইন প্রণীত হবে, যার লক্ষ্য হবে সম্প্রচারমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাকে সুরক্ষা দেওয়া। সম্প্রচার আইনটিকে হতে হবে এমন, যা সম্প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে, তা কোনোভাবে খর্ব করবে না বা সম্প্রচারমাধ্যমের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করবে না। বরং সরকার বা যেকোনো পক্ষ সম্প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা করলে সম্প্রচার আইন তার স্বাধীনতা রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ