সুরেশ সরিষার তেলে ভেজাল

সুরেশ সরিষার তেলে ভেজাল

আদালতে তথ্য গোপন করে ভেজাল তেল উৎপাদন ও বাজারজাত করার ছয় মাসের অনুমতি নিয়েছে অন্নপূর্ণা অয়েল মিল। আদালতে দায়ের করা রিট পিটিশনের মাধ্যমে ছয় মাসের নির্দেশনা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সুরেশ সরিষার তেল উৎপাদন ও বাজারজাত করছে।

আদালত সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়েরের সময় ভেজাল তেলের কারণে বিভিন্ন সময় বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের দেওয়া শাস্তিমূলক সিদ্ধান্তের তথ্য গোপন করে প্রতিষ্ঠানটি। সরিষার তেলের অপরিহার্য উপাদান ওয়েলিক এসিডের ব্যাপক তারতম্য পাওয়া যায় সুরেশের তেলে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

আদালতকে বিষয়টি অবহিত করার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইন বিভাগকে সুনির্দিষ্ট মতামত দিতে অনুরোধ করেছেন ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জে. মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন।

গত ২৩ জুলাই ডিসিসি দক্ষিণের আইন কর্মকর্তার কাছে ব্রি. জে. মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন এ অনুরোধ জানান।

এতে বলা হয়, চলতি বছর গত ২৯ জুন হাইকোর্ট স্বাস্থ্য পরিদর্শককে সুরেশ সরিষার তৈল ছয় মাস পর্যন্ত না ধরা বা না আটকানোর নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, বিষয়ভুক্ত মামলাটি গত গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে আসামিরা দোষ স্বীকার করে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দেন, বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে এর মামলা নম্বর ১৯৫/১১।

বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের বেঞ্চে অন্নপূর্ণা অয়েল মিলের মালিক সুধীর চন্দ্র সাহা ও তার ছেলে সুরেশ চন্দ্র সাহার পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ রিট পিটিশন দায়ের করেন।

এতে বিবাদী করা হয় আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক, ডিসিসি দক্ষিণের প্রশাসক, ডিসিসি উত্তরের প্রশাসক, ডিসিসি দক্ষিণের স্বাস্থ্য ও খাদ্য পরিদর্শক, অয়েল সিড রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশের পরিচালক ও বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে।

রিট পিটিশনে উল্লেখ করা হয়, বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৬৭-এর ২৫ (ঘ) অনুযায়ী সরিষার তেলে ওয়েলিক অ্যাসিডের যে মাত্রা (১.২৫) উল্লেখ করা হয়েছে তা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০ (অ্যানেক্স-বি)-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেলে ওয়েলিক অ্যাসিডের পরিমাণ ৭.৩ শতাংশ থেকে ২০.৭ শতাংশ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশের (১৯৬৭) বিপরীত।

বিজ্ঞ আদালত রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও বিবাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোকলেসুর রহমানের বক্তব্য শুনে বাদীকে ছয় মাস কোনো প্রকার হয়রানি না করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে একটি রুলনিশি জারি করেন এই মর্মে যে, কেন বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশের উল্লিখিত ধারাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলা হবে না। ৫ জুলাই উচ্চ আদালত এ নির্দেশনা দেয়।

তবে ডিসিসি সূত্র জানায়, রিটকারী কোম্পানি তাদের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে হওয়া মামলা এবং তার শাস্তির তথ্য উচ্চ আদালতে গোপন করে এ রিট আবেদন করে।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ বিষয়ে বলেন, “বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৬৭-তে সরিষার তেলে ওয়েলিক অ্যাসিডের যে আদর্শ মান ধরা হয়েছে তা নতুন গবেষণার মাত্রার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই আদালত আমার মক্কেলকে ছয় মাস কোনো ধরনের হয়রানি না করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, “নতুন রিটের সঙ্গে আগের মামলা এবং তার রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই।”

অর্থ বাণিজ্য