প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চে আনছে ‘আওরঙ্গজেব’

প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চে আনছে ‘আওরঙ্গজেব’

বাংলাদেশের প্রথম সারির নাট্যদল ‘প্রাঙ্গণেমোর’। জন্মলগ্ন থেকে মঞ্চে নিয়মিতভাবে রবীন্দ্রনাট্যের পাশাপাশি মানসম্পন্ন নাটক মঞ্চায়ন করে আসছে। প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদল ৭ম প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চে আনছে মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের রচনা ও অনন্ত হীরার নির্দেশনায় নাটক ‘আওরঙ্গজেব’।

প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদল এরই মধ্যে রবীন্দ্রনাথের চারটি নাটক মঞ্চে এনেছে। শ্যামা নৃত্য অবলম্বনে ‘শ্যামাপ্রেম’, চার অধ্যায় উপন্যাস অবলম্বনে ‘স্বদেশী’, ‘রক্তকরবী’ ও শেষের কবিতা উপন্যাস অবলম্বনে ‘শেষের কবিতা’। এছাড়াও চারণকবি মুকুন্দ দাসের জীবন নাট্য ‘লোকনায়ক’ ও কাজী নজরুল ইসলামের আলেয়া গীতিনাট্য অবলম্বনে ‘দ্রোহ প্রেম নারী’ নাটক মঞ্চে এনেছে যা দেশ ও দেশের বাইরে দর্শক নন্দিত হয়েছে।

প্রাঙ্গণেমোরের ৭ম প্রযোজনায় আসছে বাংলা ভাষার একজন উল্লেখযোগ্য নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের রচনা ও অনন্ত হীরার নির্দেশনায় ‘আওরঙ্গজেব’ নাটকটি। সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখ সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে। এর আগে নাটকটির দু’টি কারিগরি মঞ্চায়ন করা হবে।

বর্তমানে ‘আওরঙ্গজেব’ নাটকটির সঙ্গীতের কাজ শেষ হয়েছে। সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন রামিজ রাজু। বর্তমানে সেট, কস্টিউম, প্রপস ও গেটআপ তৈরির কাজ চলছে। নাটকটির মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করছেন ফয়েজ জহির ও পোষাক নূনা আফরোজ। এতে অভিনয় করেছেন অনন্ত হিরা, নূনা আফরোজ, রামিজ রাজু, ইউসুফ পলাশ, সরোয়ার আলম সৈকত, মাইনুল তাওহীদ, শুভেচ্ছা, রিগ্যান রতœ, সাগরসহ আরো ১৬ জন নাট্যকর্মী।

ঐতিহাসিক নাটক ‘আওরঙ্গজেব’-এর কাহিনীতে দেখা যাবে, ভারতবর্ষে তৈমুরলঙ্গ আর চেঙ্গিস খাঁ মুঘল সম্রাজ্যের পত্তন করেছিল। সেই তৈমুর বংশের প্রথা ছিলো মসনদে প্রত্যেক শাহাজাদার সমান অধিকার, যার তলোয়ার যত দীর্ঘ, যত ধাঁরালো, যত সফল ততই মসনদে তার অধিকার। এটাই চলেছে মুঘল রিয়াসতে যুগের পর যুগ। সম্রাট হুমায়ূন তার ভাই কামরান, আশকরী ও হিন্দালের বিরুদ্ধে লড়াই করে মসনদ দখল করেছিল। শাহেনশাহ আকবর তার ভাই মির্জা মুহম্মদ হাকিমের বিরুদ্ধে মসনদের জন্য অস্ত্র ধারণ করেছিলো। বাদশা জাহাঙ্গীর নিজের আব্বাজানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলো। বাদশা শাহজাহান আপন ভাই খসরু শাহ্রিয়ারের রক্তপাত ঘটিয়ে মসনদ দখল করেছিলো। কিন্তু সেই শাহজাহানই শেষ বয়সে নিজ পুত্র আওরঙ্গজেবের হাতে বন্দি জীবন কাটান। আওরঙ্গজেব একজন ধর্মপ্রাণ সুন্নি মুসলমান হয়েও নিজ পিতাকে বন্দি করে মসনদ দখল করেন এবং মসনদের অন্য দাবীদার আপন ভাই দারা, মুরাদ আর সুজাকে একে একে হত্যা করেন। মসনদ আর রাষ্ট্র ক্ষমতার লড়াই তো যুগে যুগে একই বৃত্তে ঘুরতে থাকে।

মৃত্যুর পূর্বে নব্বই বছর বয়সে বৃদ্ধ আওরঙ্গজেবের উপলদ্ধি হয়েছিল,  “পবিত্র কুরআন বুকে নিয়েও কেউ যদি হৃদয়হীন হয় তাহলে তার ক্ষমা নেই, কারণ আল্লাহ্ এবং পবিত্র কোরআন কাউকে জল্লাদ হতে বলে না”।

যুগে যুগে দেশে দেশে মসনদ বা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, ধর্মের নামে নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা বা যে কোনো অমানবিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদের নাম ছিল ‘আওরঙ্গজেব’।

বিনোদন