প্রেক্ষাগৃহে এবার আসছে ৯টি হিন্দি ছবি

প্রেক্ষাগৃহে এবার আসছে ৯টি হিন্দি ছবি

দেশের সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রকর্মীদের তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনটি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রদর্শনের পর এবার জনপ্রিয় ৯টি হিন্দি চলচ্চিত্র আনা হচ্ছে।

ভারতীয় বাংলা ছবি ‘জোর’, ‘সংগ্রাম’ ও ‘বদলা’র পর প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের জন্য এবার আনা ৯টি হিন্দি ছবির মধ্যে রয়েছে ‌‌‘শোলে, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’, ‘ডন’, ‘ওয়ানটেড’, ‘থ্রি ইডিওটস’, ‘তারে জমিন পার’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘দিলতো পাগল হ্যায়’ ও ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’।

বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মোশন পিকচার ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিডিএ) সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিন জানান, পরিবেশকরা সেন্সর বোর্ডের কাছে এই নয়টি ছবি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জমা দিতে সক্ষম হবেন। আগামী অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ছবিগুলোর রিল বাংলাদেশে চলে আসবে। চলতি বছর ও আগামী বছরের শুরুতে ছবিগুলো একে একে মুক্তি দেওয়া হবে।

মিয়া আলাউদ্দিন জানান, দ্বিতীয় চালানের অংশ হিসেবে ভারত থেকে এদেশে আসছে ছবিগুলো। এর আগে প্রথম চালানে গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে তিনটি ভারতীয় বাংলা ছবি বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।

এ প্রসঙ্গে মিয়া আলাউদ্দিন অরো বলেন, “সামনের দিনগুলোতে নিয়মিতভাবে আরও ভারতীয় ছবি আমদানির অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছে সরকার। আশা করছি এগুলোর সুবাদে ভালো ব্যবসা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এর প্রভাবে দেশের সিনেমা হলগুলোর সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করি।”
Kuch
দেশীয় চলচ্চিত্রের স্বার্থে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে উপমহাদশে তথা ভারতীয় ছবি প্রর্দশন নিষিদ্ধ রাখা হয়। র্দীঘদিন পর ২০১০ সালরে জানুয়ারিতে সরকার ভারতীয় ছবি আমদানি ও প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ভারতীয় ছবি প্রবেশের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি নীতিমালার বাধানিষেধ তুলে নেয়। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দেশীয় চলচ্চিত্রের পরিচালক-প্রযোজক ও শিল্পী কলাকুশলীরা প্রবল আপত্তি জানান এবং আন্দোলন গড়ে তোলেন। চলচ্চিত্রশিল্পী, কলাকুশলী ও  নির্মাতাদের এই আপত্তির মুখে সরকার ভারতীয় ছবি আমদানির ওপর পুনরায় বিধিনিষেধ আরোপ করে।

সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমদানিকারক ও প্রদর্শকরা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন জানান। আমদানীকারকদের আর্থিক ক্ষতির দিক বিবেচনা করে আদালতের নির্দেশে উল্লেখিত সময় যেসব ছবি আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছিল সেসব ছবিকে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ও তথ্য মন্ত্রণালয় অনাপত্তিপত্র দেয়। এই অনাপত্তিপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম দফায় ‘জোর’, ‘সংগ্রাম’ ও ‘বদলা’ নামের তিনটি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রর্দশন করা হয়। এবার দ্বিতীয় দফায় আসছে ৯টি ভারতীয় হিন্দি ছবি।

এদিকে ভারতীয় ৩টি বাংলাছবির পর ৯টি সুপারহিট ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানি ও প্রদর্শনের পায়তারায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।  ভারতীয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের অনিয়ন্ত্রিত আমদানি দেশে বলিউডের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

এছাড়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার পাশাপাশি এ সিদ্ধান্ত ভারতের আগ্রাসী চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক অসম প্রতিযোগিতার সূচনা ঘটাবে বলেও তারা মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’- এর নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকের বলেন, “দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এটি একটি অশনি সংকেত। এ সিদ্ধান্ত দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে অসম প্রতিযোগিতার দিকে নিয়ে যাবে। এছাড়া দেশের প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় বাণিজ্যিক ছবির প্রদর্শন তীব্র সাংস্কৃতিক সঙ্কটের সৃষ্টি করবে।”

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মহম্মদ হাননান এ প্রসংগে বলেন, “বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের অনুমতি প্রদানের পর থেকে আমার আন্দোলন করে আসছি। আমাদের আন্দোলনের কারণে আবারো ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আইনের ফাক গলে ৩টি ভারতীয় বাংলা ছবির পর এবার ৯টি হিন্দি ছবি প্রদর্শনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা থাকায় তীব্র প্রতিবাদ জানানো ছাড়া আপাতত করার কিছু নেই। তবে আমাদের বিশ্বাস, আগের ৩ ভারতীয় বাংলাছবিকে যেভাবে এদেশের দর্শকরা প্রত্যাখান করেছে; তেমনি ৯টি হিন্দি ছবিকেও প্রত্যাখান করবে। তবে নিয়মিতভাবে যদি ভারতীয় ছবি আমদানী শুরু হয় তাহলে অবশ্যই আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করবো।”

বিনোদন