1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৮ অপরাহ্ন

বিড়ির শুল্ক প্রত্যাহারে অর্থমন্ত্রীকে সাংসদদের অনুরোধ!

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৬ মে, ২০১২
  • ৭৯ Time View

জনস্বাস্থ্যের জন্যে হুমকি বিড়ি শিল্পের ওপর আসন্ন বাজেটে নতুন করে কোনো কর আরোপ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের কয়েকজন সদস্য। এমনকি বিড়ির উপর থেকে বিদ্যমান আবগারী শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধও জানিয়েছেন তারা।

গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী ড. আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছে এ অনুরোধ জানিয়ে চাহিদাপত্র (ডিও লেটার) দেন ১১ সাংসদ।

বিড়ি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও ধূমপায়ীদের জন্যে হুমকি হওয়া সত্ত্বেও শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের দোহাই দিয়ে বিড়ির উপর থেকে আবগারী শুল্ক প্রত্যাহারের জন্যে অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান ১১ সাংসদ।

এই ১১ সাংসদ হলেন- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল ডা. মো. আব্দুল কাদের খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আব্দুল কাদের খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শাহ আলম, কাজী ফারুক কাদের, রণজিৎ কুমার দাশ, কর্নেল (অব.) এ এ মারুফ সাকলান, আফাজউদ্দিন আহমেদ, আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট শফিকুল আজম খান, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নুর জাহান বেগম ও বেগম মাহেজাবীন মোরশেদ।

পাঠানো ডিও লেটারগুলো প্রায় একই ধরনের।

আর এসব আবেদনের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সদস্য (আবগারী শুল্ক) ও মূসক নীতি ও বাজেটের প্রথম সচিব বরাবর।

প্রায় প্রতিটি ডিও লেটারেই বিড়িকে ‘আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।’

বলা হয়েছে, ‘প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলা শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্যে বিড়িশিল্প অতি বলিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। সমগ্র বাংলাদেশের লাখ লাখ হতদরিদ্র শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার স্বার্থে আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে বিড়ির ওপর থেকে বিদ্যমান আবগারী শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বিড়ির ওপর অগ্রীম ৬ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছি যা সিগারেট শিল্প থেকে আদায় হয় না।’

তামাক শিল্পের উপকারিতা উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘গ্রামীণ কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকার শ্রমিকের সংখ্যা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে লাখ লাখ শ্রমিক দরিদ্র থেকে হতদরিদ্রে পরিণত হচ্ছে। গত বছর বিড়িশিল্প থেকে সম্ভাব্য রাজস্ব আদায় হবে ২৩০ কোটি টাকা পক্ষান্তরে সিগারেট শিল্প থেকে হবে ৭ হাজার কোটি টাকা।’

‘বিড়িশিল্পকে কুটির শিল্পের আওতায় রেখে দরিদ্র মানুষের আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচনা’ করার অনুরোধও জানানো হয় অর্থমন্ত্রীর কাছে।

অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া কয়েকটি চাহিদাপত্রে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলা শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্যে বিড়িশিল্প অতি বলিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। যেকোনো মূল্যে বিড়িশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতাসহ সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই তামাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছেন। তামাকজাতীয় পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধিকে জনগণকে তামাক সেবনে নিরুৎসাহিত করার কৌশল হিসেবে দেখে আসছেন তারা। সেই সঙ্গে এ শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যক্ষতি অর্জিত আয়ের চেয়ে অনেক বেশি বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।

তাই অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সংসদ সদস্যদের এ ধরনের চিঠিতে তারা বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।

গত ফেব্রুয়রিতে সরজমিন রংপুরের হারাগাছা উপজেলার কয়েকটি বিড়ির কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, খুবই ঝুকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছেন বিড়ি শ্রমিকেরা। যে বদ্ধ কক্ষে তারা বিড়ির খোলে তামাক ঢোকান, সেখানে নিঃশ্বাস নেওয়া দায়। এর মধ্যেই কাজ করে দরিদ্র নারী ও শিশুরা।

পরে হারাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাপনিসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা এর সমস্যায় ভুগা বিড়ি শ্রমিক সেখানে ভর্তি আছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিড়ি শ্রমিকদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে।

এছাড়া সারাদিন হাড়খাটুনির পর বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি খুবই কম। প্রতি হাজার বিড়ি উৎপাদনের জন্যে তাদের মুজুরি দেওয়া হয় মাত্র ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার(ডব্লিউএইচও) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫৭ হাজার মানুষ মারা যান শুধু ধূমপানজনিত রোগে। এছাড়াও ধূমপানের ফলে বছরে দেশে স্বাস্থ্য ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকারও বেশি।

ধুমপান বিরোধী সংগঠন মানস’র সভাপতি ও বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, মূলত বিড়ির গ্রাহক দরিদ্র শ্রেণী। তামাক সেবনের ফলে তাদের চিকিৎসা খরচ জোগানেরও সামর্থ্য কম থাকে। তাই অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যান।

তিনি বলেন, বিড়ি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা ক্যান্সার, হাঁপনিসহ অনেকগুলো রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের আয়ু কমে যায়। তাই বিড়ি কারখানাকে কখনোই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে ভাবার কারণ নেই।

সংসদ সদস্যরা তাদের চাহিদাপত্রে লাখ লাখ বিড়ি শ্রমিকের কথা বললেও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো-ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বিড়ি ইন বাংলাদেশ: মিথস অ্যান্ড রিয়েলিটি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমানে দেশে বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা মোটেও বেশি নয়।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিভিন্ন সময় দেশে বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ বলে উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার। তার মধ্যে মূল শ্রমিকের সংখ্যা মাত্র ৬৫ হাজার। যা দেশের শ্রমশক্তির দশমিক ১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি হিসাব করা হয় উৎপাদিত শলাকার সংখ্যার ভিত্তিতে। একজন পূর্ণকালীন শ্রমিকের দৈনিক গড় মজুরি ১০০ টাকার কম যা বর্তমানে গড় মজুরির তুলনায় অনেক কম। তাই বিড়ি কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের বেকার হওয়ার যে শঙ্কা বিভিন্ন সময় উল্লেখ করা হয় তা সত্যি নয়।

সংগঠনটি দরের অনুপাতে ৭০ শতাংশ করারোপের দাবি জানিয়ে বলে, মাত্র ৬৫ হাজার শ্রমিকের জন্য ৫৭ হাজার মানুষের মৃত্যু কাম্য হতে পারে না। সরকারকে বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনার ভিত্তিতে নতুন করে বিড়ির ওপর উচ্চকর আরোপ করতে হবে। যাতে করে বিড়ি বা ধূমপানে মানুষ নিরুৎসাহিত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ