হৃদয় আর মস্তিষ্কের দ্বন্দ্বে পড়েছি! ব্রাজিলিয়ান বলে দেশের জন্য গলা ফাটাতে ইচ্ছা করছে। স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা করছে, নেইমারদের হাতেই যেন বিশ্বকাপটা দেখতে পাই। কিন্তু কোচিংসত্তাটা প্রবলভাবে বিরোধিতা করছে। বারবার বলছে, হলুদ-সবুজ টিমটার ভবিষ্যৎ ততটা উজ্জ্বল নয়, যতটা শুরুতে মনে হচ্ছিল। আমি এখন রিও ডি জেনিরো থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে, দেশের বাড়িতে। স্ত্রী পেনহার শরীরটা খারাপ। ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটতে হচ্ছে। তার পরও ব্রাজিলের খেলা থাকলে বসে পড়ছি টিভির সামনে। ভাবছিলাম, একদিন মাঠে যাব। কিন্তু সেই সুযোগ কি হবে? লোকে বলে, সকালের সূর্যটা দেখলে বোঝা যায় দিন কেমন যাবে। তাই যদি হয়ে থাকে, তা হলে বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার হিসেবে দুটি টিমকে তালিকার একেবারে ওপরে রাখতে হবে_ নেদারল্যান্ড আর জার্মানি। স্পেনের বিরুদ্ধে ডাচরা দেখিয়েছে, আধুনিক ফুটবলটা কেমন হওয়া উচিত। কীভাবে ব্যবহার
করতে হয় উইং। কীভাবে মাঝমাঠ থেকে খেলা তৈরি করা উচিত। নেদারল্যান্ড মন ভরিয়ে দিয়েছে। আর জার্মানরা দেখিয়ে দিয়েছে, অ্যাটাকিং ফুটবল দিয়ে যে কোনো ম্যাচ সহজে পকেটে পুরে নেওয়া যায়। কমপ্লিট ফুটবল তো টমাস মুলাররাই দেখাল। আমার মনে একটা আতঙ্ক কাজ করছে, ব্রাজিল যদি নেদারল্যান্ড কিংবা জার্মানির মুখে পড়ে, কী হবে! ব্রাজিলিয়ান হলেও আবেগ সরিয়ে রেখে বলতে হবে, নেইমাররা হেরেই যাবে। অন্তত গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় ম্যাচটার পর তো তাই মনে হচ্ছে প্রবলভাবে। ফোর্তালেজাতে ব্রাজিলের খেলার মধ্যে বেশ কিছু ফাঁক বেরিয়ে পড়ল, যেগুলো অবিলম্বে ভরাট করা দরকার। সেগুলো কী কী? সবে বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলেছে ব্রাজিল। এর মধ্যেই কেন টিমটাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে, বুঝতে পারছি না! প্রথম ম্যাচে যে সমস্যাটা ধরা পড়েছিল, দ্বিতীয় ম্যাচেও সেটাই ফের দেখলাম। মাঝমাঠ আর ফরোয়ার্ডদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। যে কোনো টিমের দুটি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের ওপর সেই টিমের সাফল্য নির্ভর করে। পওলিনহো আর গুস্তাভো_ ব্রাজিলের মাঝমাঠের মেরুদ দ্বিতীয় ম্যাচেও তাই। তার পরও কেন ওকে বয়ে বেড়াচ্ছেন স্কোলারি, জানি না। ভবিষ্যতের কথা যদি ভাবতে হয়, ফ্রেডকে বাদ দিতে হবে টিম থেকে। নেইমারের ওপর টিমটা অনেকাংশে নির্ভরশীল। বার্সেলোনায় খেলে ও এখন অনেক পরিণত। প্রথম ম্যাচে দুটো গোলও করেছে। অনেক কনফিডেন্ট, সন্দেহ নেই। নেইমারের কাছে আরও গোল দেখতে হলে ওকে অনেক বেশি সাপোর্ট দিতে হবে। এই টিমটাতে দু’জন প্লেয়ার আছে, যাদের অ্যাটাকিং কোয়ালিটি গোল এনে দিতে পারে। দানি আলভেজ আর মার্সেলোকে কেন জানি না তেমন ধারালো দেখাচ্ছে না। তবে এটাও স্বীকার করে নিতে হবে, ব্রাজিল ডিফেন্স আগের ম্যাচের তুলনায় ভালো ফুটবল খেলেছে। ব্রাজিলের একটা নামি টিভি চ্যানেলে বসে কার্লোস আলবার্তো পাহিরা ব্রাজিল-মেক্সিকো ম্যাচটার কাটাছেঁড়া করছিল। ফার্স্ট হাফের বিরতিতে ও বলছিল, স্কলারির টিমটা খুব বেশিই নেইমার-নির্ভর। আধুনিক ফুটবলে এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিপক্ষ যদি কড়া মার্কিংয়ে রাখে নেইমারকে, ব্রাজিল আটকে যাবে। একমাত্র টিম গেমই তখন উতরে দিতে পারে স্কলারিকে। কার্লোস আলবার্তো পাহিরার কথা পরের ৪৫ মিনিটে ফলে গেল। মেক্সিকো টিমটা বরং মন ভরিয়ে দিল। ব্রাজিলের মতো টিমের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে যে কেউ একটু অতি রক্ষণাত্মক হবে, স্বাভাবিক। মেক্সিকো সেটাই করে গেল সারা ম্যাচ। কিন্তু ওদের গোলকিপার অসাধারণ ফুটবল খেলল। শুনলাম, ঝাঁকড়া চুলের ছেলেটা ফ্রান্সের একটা দ্বিতীয় ডিভিশন টিমে খেলে। নেইমারের সাইডভলি আর থিয়াগোর হেডটা যেভাবে আটকাল মেক্সিকোর গোলকিপার, ওকে নিয়ে এবার হামলে পড়বে বিশ্বের বড় ক্লাবগুলো। ম্যাচের পর মেক্সিকো কার্যত উৎসব করছিল। কী আশ্চর্য, নেইমার-থিয়াগো-দানি আলভেজদের মুখেও যেন তৃপ্তির ছায়া দেখলাম! ব্রাজিল মানে আমরা যা বুঝি, ড্রয়ের কোনো মূল্য নেই। শুধু জয় চাই। নেইমারদের খেলা দেখে কিন্তু সাপোর্টাররা বেশ অসন্তুষ্ট। সত্যিই তো। ঘরের মাঠে যখন খেলা, হোম টিমের এই খেলা দেখলে যে কেউ বিরক্ত হবে। শেষ দিকে ব্রাজিল অনেক সুযোগ তৈরি করেছে। মেক্সিকো বক্সে বারবার হানা দিয়েছে। গোল হতেও পারত। লোকে কিন্তু সেটা মনে রাখবে না। মনে রাখবে, মেক্সিকোকে হারাতে পারেনি নেইমারের ব্রাজিল। ম্যাচের পর স্কলারিকে দেখে মনে হলো, খুব রেগে রয়েছেন। সকালে কাগজে দেখছিলাম, ব্রাজিল কোচ কিছু বদল আনতে চাইছেন টিমে। অভিজ্ঞ লোক। দু’বার বিশ্বকাপ জেতা কোচ। বুঝে গেছেন, এই ফুটবল নিয়ে বেশি দূর যাওয়া যায় না!