বাংলাদেশকে এখন অনেকে আদর্শ মনে করে: অমর্ত্য সেন

বাংলাদেশকে এখন অনেকে আদর্শ মনে করে: অমর্ত্য সেন

নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বলেছেন, বাংলাদেশকে যারা এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলত, তারা আজ বাংলাদেশকে আদর্শ (আইডেল) হিসেবে মানে। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। পৃথিবীতে বাংলাদেশের সম্মান অনেক বেড়েছে।

তবে সামগ্রিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নারীর অংশ গ্রহণ আরো বাড়াতে হবে। আর জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলাতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে হবে। বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

শুক্রবার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সিপিডি ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য ও আইন সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর- একাত্তরের ভাবকল্প ও চার দশকের যাত্রা’ শীর্ষক স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

অমর্ত্য সেন বলেন, বাংলাদেশ নারী উন্নয়নে অনেক এগিয়েছে। তবে তাদের আরো এগিয়ে নিতে হবে। সমাজে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব সব ধর্মকে সমান গুরুত্ব দেওয়া। কোন ধর্মকে প্রাধান্য বা বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। এতে করে বিভেদ বাড়ে।

তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকাতে অসাম্প্রদায়িকতার ধরন ভিন্ন বলে তাদের ওখানে ঝগড়া-বিবাদ হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এর ধরন আবার ভিন্নতর। ফলে এ অঞ্চলে ঝগড়া হয় না।

এ কে খন্দকার বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। অর্জন-ব্যর্থতার খতিয়ানে অর্জন অনেক। তবে সময় এসেছে মূল্যায়ন করে দেখার আরো কী পেতে পারতাম।

তিনি আরো বলেন, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমানে তা প্রায় সাড়ে সাতশ’ ডলার। তবে বেড়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। তাই অর্জিত প্রবৃদ্ধির একটা অংশ সাধারণকে সরবরাহ করতে হবে। যেটি এখন দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর এর মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশ গড়তে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলার দিন শেষ। তা আমরা বিশ্ব দরবারে প্রমাণ করতে পেরেছি। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূণ হতে পেরেছি, গত এক দশকে প্রবৃদ্ধির গড় ৬ শতাংশ। এখন আর বিদেশিদের দিকে সাহায্যের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় না। স্বাধীনতার সময় যেখানে বিদেশি অনুদানের অবদান ছিলো ৭১ শতাংশ। এখন তা মাত্র ছয় শতাংশ। নারী-পুরুষ সমতা, শিক্ষা ক্ষেত্র, দারিদ্র দূরীকরণে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। তবে আমাদের শহর ও গ্রামের সম উন্নয়ন পরিকল্পনা দরকার।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার বক্তব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং চার দশকে অর্জন এবং সামনে এগিয়ে চলার বিষয়ে বলেন, গত ৪০ বছরে আমাদের অর্জন আছে। গণতন্ত্র, জাতীয়তা, অসাম্প্রদয়িকতা এবং সমাজতন্ত্র এসব ক্ষেত্রে এগিয়ে। তবে সমস্যাও রয়েছে অনেক। আগামী দিনগুলোতে সবার অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্ধের কারণে গণতন্ত্র ব্যাহত হচ্ছে। তারা সাধারণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছে না। আর ফলে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দূর্বল হয়ে পরছে। প্রশাসনে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। আইন শৃংখলা বাহিনী রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের বাইরে সরকারের নিরাপত্তায় কাজ করছে। বিচারবিভাগেও ক্ষমতাসীন দলগুলো রাজনীতিকরণ করেছে। ফলে রাষ্ট্রের যে অঙ্গ গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করবে তা করতে পারছে না।

রেহমান সোবহান বলেন, নির্বাচন কমিশনেও রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় নতুন কমিশনাররা কিভাবে নিয়োগ পান। যার ওপর নির্ভর করবে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে তত্ত্ববধায়ক সরকারের অনুপস্থিতি প্রমাণ করে আমরা আবার পাকিস্তানের শাসনের দিকে যাচ্ছি।

তিনি হতাশা নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক দাতারা ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ আর সহায়তা নির্ভর নয়। তারপরও তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করে।

মূল বক্তব্য এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে আইন শৃংখলা এখনো ঝামেলা পূর্ণ যতনা নিরাপত্তা দেয়। তারা দেখে কে সেবা চাইছে। তাই ধনীদের জন্য এক আইন। আর গরীবের জন্য আরেক।

তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য সম্পদ সবার মধ্যে বন্টন করে দিতে হবে। সবাইকে সম্পদের মালিকানা দিতে হবে। গরীবকে করপোরেট কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ বাড়াতে হবে।

অর্থ বাণিজ্য