ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন, রাজনীতি হোক মানুষের কল্যাণে

ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন, রাজনীতি হোক মানুষের কল্যাণে

মাহবুব-উল-আলম খান

মাননীয় রেলমন্ত্রী জনাব সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এক অনন্য সাধারণ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকায় হয়তো আরো আগে পদত্যাগ করতে পারেননি। বিষয়টি হলো তার এপিএস, রেলের জিএম, এক কমানডেন্ট এবং ড্রাইভারের দু:স্কর্মের কাহিনী। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কি ষড়যন্ত্রের শিকার? ৭১ এর পরাজিত শক্তি, ৭৫ এর হত্যাকারীরা, ২১ আগষ্টের ঘাতক বাহিনী, ২৫ ফেব্রুয়ারীর বিডিআর হত্যাকারীরা, সারাদেশে বোমা হামলাকারীরা, জঙ্গী, মৌলবাদ ইবলিসের প্রেতাত্মারা এবং দালাল, রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী আর পেয়ারে পাকিস্তানী আইএস আই এর চরেরা এখন গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। জনাব সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অত্যন্ত সভ্রান্ত ও বনেদী পরিবারের সন্তান। যতদূর জানি তার অর্থ প্রাচুর্য্যরে কোন অভাব নেই। তিনি এই মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর হতেই অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করছেন এবং উন্নয়নমূলক ও কল্যাণকর কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখছেন। মাত্র ৪ মাসেই এর প্রমান শুরু হয়েছে। একটি ঘুনে ধরা দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত প্রতিষ্ঠানকে এত সহজেই ঠিক করা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। দীর্ঘ ৩০ বছর বিএনপি জামাত সামরিক ও সামরিক লেবাসধারী সরকার এই দেশ শাসন করেছে। সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে যে দুর্নীতি তারা ঢুকিয়েছে তা সহজেই শেষ হবার নয়। রাষ্টযন্ত্রের সর্বক্ষেএই তারা কলুষিত করেছে। জাতির জনক হত্যার আসল সুবিধাভোগী জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে জনগণের পয়সায় রাজনৈতিক দল গঠন করে উচ্চারণ করেছিলেন ও রিষষ সধশব ঢ়ড়ষরঃরপং ফরভভরপঁষঃ ভড়ৎ ঃযব ঢ়ড়ষরঃরপরধহং. তখন হতে রাজনীতি দুর্নীতিগ্রস্থ হতে শুরু হয়েছে। রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী ও দালালদের ক্ষমা করে দিয়ে দালাল আইন তুলে দিয়ে, শ্রেষ্ঠ দালাল যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দিয়ে এদেশ ও জাতিকে কলুষিত করেছেন। রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীন এই দেশটিকে জিয়াউর রহমান অপবিত্র করেছেন। এর আগে ৭১ এর নয় মাস তার স্ত্রী জিয়ার সাথে না গিয়ে পাকিস্তানীদের সাথে কেণ্টনমেন্টে মেসে সহবাস করে আরো কলুষিত করেছেন। মাননীয় সাবেক রেলমন্ত্রী যদি ঘুষই খাবেন তাহলে রেলের এই জিএম, তার এপিএস, কমানডেন্ট ও ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে বিজেবি’র ভিতর ঢুকবেন কেন? এটা অত্যন্ত রহস্যজনক। আর সাথে সাথে বিরোধীদলের মীর্জারা, খন্দকারেরা, মওদুদেরা নজরুলেরা সমস্বরে কাড়া নাকাড়া সহ সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শুরু করলেন। তা হলে কি এসব তাদের জানা ছিল এবং এইসব লোকদের তারা ম্যানেজ করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন এবং বেকায়দায় ফেলার প্ল্যান খুঁজছিলেন। প্ল্যান সৃষ্টি করলেন এবং সাথে সাথে চিৎকার হৈ চৈ শুরু করে দিলেন। কতিপয় মিডিয়া যেন আগেই প্রস্তুত ছিলেন। বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের পদত্যাগ দাবী করতে লাগলেন। প্রতিদিন টেলিভিশনে যেভাবে মীর্জা ফখরুল চিৎকার করতে করতে বেহুস হচ্ছেন ভয় হয় তার মাথা খারাপ না হয়ে যায় এবং খন্দকার দেলোয়ারের অনুসারী না হন। রেলের অভ্যন্তরীণ সব অঘটন, অকাজ, দুর্নীতি সব তাদের জানা। কেননা সেখানে নাজমুল হুদা সালাহ উদ্দিন আব্বাসদের ভাবদর্শ ও সুবিধাভোগীরা সদর্পে বিচরণ করছে। বিএনপি-জামাতের ২০০১-২০০৬ আমলে রেলে কত পুকুর চুরি ও সমূদ্র ডাকাতি হয়েছে তা দেশবাসী জানে। রেলের জায়গা কিভাবে বিএনপি-জামাতের আমলে নিজেরা দখল করেছেন তা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত, প্রমাণিত। অতএব এই মোক্ষম জায়গা হতে উপকরণ নিয়ে তাদের নানাবিধ কু-কর্মের সাথী কর্মকর্তা দিয়ে একজন ভাল মন্ত্রীকে কিভাবে বেকায়দায় ফেলে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা যায় তাই তারা এত দিন ভাবছিলেন। নিজেদের ভাবদর্শের দুর্নীতিবাজ লোকদের দিয়ে এই কাজ করিয়ে মওদুদ বলে উঠলেন সুরঞ্জিত বাবু ধরা খেয়েছেন। কিভাবে যে মানুষের সৎ প্রয়াসকে ধ্বংস করা যায় বিএনপি-জামাতের এইসব রাজনীতিবিদরা উহার বলিষ্ঠ উদাহরণ। মন্ত্রী যদি ঘুষই খাবেন তাহলে তার কর্মকর্তার গাড়ি বিজেবি গেটের ভিতর কেন ঢুকবে, কিভাবে ঢুকল বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। এখানে একটি গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে বললে ভুল হবেনা। আর সাথে সাথেই মিডিয়া, বিরোধী দলীয় নেতা-নেত্রী সমস্বরে মন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেললেন। সঠিক তদন্তে আশা করি সত্য উদঘাটিত হবে। ভারপ্রাপ্ত মীর্জারা ভারমুক্ত হবার জন্য এখন পাগল হয়ে গেছেন। এখানে উল্লেখ্য আলোচ্য দুর্নীতিবাজ জিএম নাকি একজন মার্কামারা বিএনপি জামাত ঘরানার লোক। এখন আওয়ামীলীগ ঘরানা সেজে ঘাপটি মেরে আছেন এবং নানা প্রকার ফন্দি ফিকির করছেন। বর্তমান প্রশাসন এখানেই চরম ব্যর্থ। তারা চোর ডাকাতকেও চিহ্নিত করতে পারছেননা। কে কি তাও জানেনা, বুঝেন না।

পাশাপাশি বিগত ২০০১-২০০৬ এর বিএনপি-জামাতের শাসনকাল তুলনা করলে চিন্তা করলে, মীর্জারা, খন্দকারেরা, মওদুদেরা, আনোয়ারেরা কি বলবেন? যত প্রকার অপরাধ আছে, যত প্রকার দুর্নীতি আছে, যত প্রকার বদনামি আছে, যত প্রকার ইতরামি আছে সবই তারা সে আমলে করেছেন। মানুষ এক নরক রাজ্যে ছিল তখন। দুর্নীতিতে চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সে সরকার। তখনকার সরকার প্রধান যেখানে অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থাৎ ঘুষ বা অসৎ উপায়ে আয়ের করদেন, কালো টাকা সাদা করেন, তাদের অর্থমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী নেতানেত্রী এইসব কুকাম করেন তাহলে অন্যান্যদের কি দোষ দেয়া যায়? এইভাবেই দেশকে তারা তিলে তিলে নিঃশেষ করেছে। অসহায় জনগণের রক্ত চুষে খেয়েছে। নিজেরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে, বিদেশে পাচার করেছে। মানুষ নীরবে এসব সহ্য করেছে এবং ব্যালট বিপ্লবে তার জবাব দিয়েছে ২০০৮ এর নির্বাচনে। এখানে তারা ইতিহাস হতে শিক্ষা নেয়নি। ষড়যন্ত্রের নীল নকসায় ডালপালা খুঁজছে কিভাবে চোরাপথে ক্ষমতায় যাওয়া যায়। তারা বিদেশি আদালতে দুর্নীতির জন্য সাজা পায়। আই এস আই হতে ঘুষ নিয়ে নির্বাচন করে। বিদেশি পত্রিকায় সবই প্রকাশিত। এই যদি এইসব রাজনীতিবিদদের কর্মকান্ড হয় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? প্রশাসন কাজ করবে সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও দেশপ্রেম নিয়ে। না হলে সুশাসন, আলোকিত প্রশাসন গড়ে উঠবে কিভাবে। ২০০১ সনে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই বিএনপি জামাত জোট সরকার শতশত দক্ষ, সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের অকারণে চাকুরিচ্যুত করেছে, পদোন্নতি বঞ্চিত করেছে এবং বছরের পর বছর ওএসডি করে রেখেছে। কোন সৎ ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল এহেন কাজ করতে পারেনা। রাজনৈতিক দল তার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করবে প্রশাসন চলবে নির্দিষ্ট গাইড লাইন মেনে। সেখানে যদি অশুভ শক্তি, অশুভ চিন্তা কাজ করে তাহলে জনকল্যাণ কর্মকান্ড স্থবির হয়ে যাবে। বিএনপি জামাত জোট তাই করেছে। প্রশাসনে যে অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়েছে তা হতে জাতি কবে মুক্তি পাবে জানিনা। একটি সুষ্ঠু ও সৎ প্রশাসন ছাড়া কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন কঠিন। আলোচ্য ক্ষেত্রে ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে এর নাটের গুরু অবশ্যই মৃধা নামক এই জিএম। তিনিই এই নিয়োগ ব্যাপারে দায়িত্ব প্রাপ্ত। তার দুর্নাম নাকি সর্বজন বিদিত। মন্ত্রীর এপিএসকে হয়তো এই ব্যক্তি ম্যানেজ করেছে। এর পেছনে কার ইংগিত আছে উহাই আসল ব্যাপার। নইলে মন্ত্রীর নামে ঘুষ নিয়ে মাঝ রাতে বিজিবি’র ভিতর ঢুকে নাটক সৃষ্টির রহস্য কি উহা এক অজানা ষড়যন্ত্র। দুদক, এনবিআর ও প্রশাসন হতে বিভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আসল রহস্য শ্রীঘ্রই প্রকাশিত হোক উহাই জনগণের প্রত্যাশা। একটি অশুভ শক্তি সরকারের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার জন্য গভীর ষড়যন্তে লিপ্ত। এই অশুভ শক্তিতে চিহ্নিত করে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারলে দেশ ও জাতি সুষ্ঠু গতিতে এগুতে পারবেনা। ১৯৭৫ এ জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর বাংলার দুই মীরজাফর জিয়া ও মোশতাক স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও হাজার বছরের বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্যকে একে একে ধ্বংস করেছে।  যে চিন্তা, চেতনা, আশা, আকাঙ্খা ও স্বপ্ন নিয়ে জাতি এগুতে চেয়েছিল সেই মূলধারাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। রনাঙ্গনের অমিততেজ জাতীয় শ্লোগান ‘জয়বাংলা’কে তারা কুঠারাঘাত করেছে। অথচ জিয়াউর রহমান ১৯৭১ এ নিজেও এই শ্লোগান দিয়েছে। একজন চেতনার মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে নিজের শ্লোগানকে বিসর্জনদেয় বোধগম্য হয় না।

১৯৭৫ সনের ইতিহাসের ট্রাজিক ঘটনার পর জাতি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও আমাদের মৌলিক চাহিদার নিশ্চয়তা বিধান হয়নি। মানুষের আশা আকাঙ্খা গুলো আজও আহত হচ্ছে। মৃধা নামক রেলের এই জাতীয় জিএমরা প্রশাসনকে দিন দিন কলুষিত করছে। এর পেছনে কাজ করছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি। বিরোধী দলীয় নেতা নেত্রীগণ অনুগ্রহ পূর্বক উহা অনুধাবন করবেন কি? রাজনীতিতে, প্রশাসনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অশুভ শক্তি কাজ করে যাচ্ছে বিরামহীনভাবে। পরাজিত শক্তি তাদের মদদ দিচ্ছে। না হলে বিজেবি গেইটের ভিতর গাড়ি ঢুকল কেন, কি জন্য? একটি মাত্রই উদ্দেশ্য সরকারের, বিশেষ করে রেলের উন্নয়ন ও সংস্কার মূলক কাজকে বাধাগ্রস্থ করা ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। তারা বুঝেছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত থাকলে তাদের অপকর্ম চালানো কঠিন হবে। তারা ২০০১-২০০৬ এর আমলকে অত্যন্ত নিরাপদ মনে করেছে। তাই মাঝ রাতে ঘটনা ঘটিয়ে মিডিয়া ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা এখন ২৪ ঘন্টা ঢোল বাজিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দাবী সরকারের পদত্যাগ। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে এর রহস্য আঁচ করা যাবে। দেশে অনাহুত অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে এর সুযোগ গ্রহণের অপেক্ষায় তারা। ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ বিডিআর হত্যা দিয়ে এই ষড়যন্ত্রের শুরু। এ ঘটনার পর তিনদিন বিরোধী দলীয় নেত্রী কোথায় ছিলেন জনগণ জানেনা। তারপর নানাবিধ অশুভ কর্মকান্ড, সর্বশেষ গত ডিসেম্বর সেনা বিদ্রোহের পায়তারা। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী উহা নস্যাৎ করে দিয়েছে। পাকিস্তানী আইএসআই এদের সাথে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ৭১ এর পরাজয় তারা ভুলতে পারেনি। এই ষড়যন্ত কবে শেষ হবে জানিনা। তাই এখই সময় দ্রুত সকল অনাসৃষ্টি ও ষড়যন্ত্র সরকারকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের উচ্ছেদ করতে হবে। ২০০১ এ অন্যায় ভাবে চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তাদের কেন কি জন্য চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তার পেছনের শক্তিকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে। প্রশাসনকে নষ্ট করার অধিকার কারো নাই। আজ ও ঐ প্রেতাত্মারা সদর্পে আছে। সরকারকে ভুল বুঝিয়ে বিপথগামী করছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এতে দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরলে আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপকর্মও উপলব্ধি করা যাবে। বিদ্যুৎ সেক্টরে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় গতিশীলতা আনায়নের জন্য কতিপয় কোম্পানি গঠিত হয়েছে ২০০৮ সনে। সেখানে কোম্পানির নিজস্ব আইন ও সার্ভিস রুল রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাগণ মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাকে ভুল বুঝিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সার্ভিস রুলকে উপেক্ষা করে অযাচিত ও  বেআইনীভাবে কোম্পানির কাজে হস্তক্ষেপ করে কাজে বিঘœতা ও বিলম্বিতা ঘটাচ্ছে। বিদ্যুতের কাজ চলবে বিদ্যুৎ গতিতে উহাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে কোম্পানি আইনে ও সার্ভিস রুলে পরিচালনা পর্ষদ কোন কাজ সম্পন্ন করতে ক্ষমতাবান সেখানে নির্বাহী আদেশ দিয়ে বোর্ডের কাজে অনাহুত হস্তক্ষেপ করে সেই কাজকে মাসের পর মাস ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। এই মূহুর্তে অতি দ্রুততার সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন একান্ত অপরিহার্য্য। তা না করে বোর্ডের কাজে অনাহুত হস্তক্ষেপ মোটেও কাম্য নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘ ১ বছরের উপর প্রাপ্ত প্রস্তাব নিয়ে কি গবেষণা বা হিসাব নিকাশ করেছে বোধগোম্য নয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ হয় কোন অশুভ চিন্তা ও চেতনা এখানে কাজ করেছে। তাহলে কোম্পানি করে কি লাভ হলো? এমন সব নানাবিধ কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ ও বিলম্বিতা কোম্পানির স্বাভাবিক কাজকর্ম ও সুষ্ঠু কাজকর্মের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। তাদের ইচ্ছাকে আরো পাকাপক্তো করার জন্য গত ২/১/২০১২ তারিখে বিভিন্ন কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যানদের বিতাড়িত করে নিজেরাই কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান পদ দখল করে নিয়েছে। বিদ্যুৎ সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব একেকজন দুইটা করে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। অথচ মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিক্যালস অব এসোসিশেন ও কোম্পানির  বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্তে আছে মন্ত্রণালয়ের সচিব/কর্মকর্তা বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন না। অবসর প্রাপ্ত সচিব/বিশিষ্ট নাগরিক বা অন্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যে সকল অবসর প্রাপ্ত সচিব/অতিরিক্ত সচিবদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছিল মাননীয় উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে তাদেরকে বাদ দেয়া হয়। এখন তারা খেয়াল খুশী মতো বোর্ডের কাজ চালাচ্ছেন ও মনের আনন্দে আছেন। বিদ্যুৎ সমস্যা বর্তমানে প্রধান সমস্যা। আগামী নির্বাচনে হার-জিৎ বিদ্যুত্যের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। মন্ত্রণালয়ের সচিব/অতিরিক্ত সচিবদের যেখানে তাদের মূল কাজেই ব্যস্ত থাকার কথা, সেখানে বোর্ডের চেয়ারম্যান পদের জন্য এত লালসা হল কেন? বিদ্যুৎ উৎপাদনই এখন মুখ্য কাজ। তা না করে বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়ে কোম্পানির কাজে বিলম্বিতা সৃষ্টির জন্যই কি এই প্রয়াস। গত ১২/০৪/২০১২ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিন কাগজে ডেসকোর এক দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মন্ত্রী হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসব আছে কি? জানিনা কে কোন সর্বনাশের জন্য কাজ করছেন? মাননীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা মহোদয়কে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সমূহের আইন ও সার্ভিস রুল ও বোর্ড গঠনের গাইড লাইন দেখতে অনুরোধ জানাচ্ছি। অশুভ শক্তির কারসাজিতে নিজের মন্ত্রণালয়ের ক্ষতি যাতে না হয় এ ব্যাপারে রাজনীতিবিদদের সজাগ থাকতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে প্রশাসনে বিরোধীরা ঘাপটি মেরে আছে সর্বনাশের জন্য। সময় মতো সজাগ না হলে পস্তাতে হবে।

রেলমন্ত্রীর দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চলছে। দুদকে রেলের জিএম, কমানডেন্ট ও এপিএস বক্তব্য রেখেছেন। এতে মন্ত্রীর কোনই সংশ্লিষ্টতা নেই বলে সবাই এক বাক্যে বক্তব্য দিয়েছেন। গাড়িচালক কেন বিজেবির ভিতর গাড়ি ঢুকিয়ে এই ঘটনার সৃষ্টি করল, এর পেছনে যে ষড়যন্ত্র আছে, রহস্য আছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এর রহস্য ও কারণ উদঘাটন করতে হবে। সঠিক তদন্তে আসল ঘটনা অবশ্যই বেরিয়ে আসবে। ঘটনার দিন হতেই যেভাবে বিএনপি নেতা নেত্রীরা চিৎকার শুরু করেছে। মনে হয় এটা একটি সাজানো নাটক। এই গাড়িচালক কোন কাননের পাখি, কি এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে অবশ্যই তলিয়ে দেখতে হবে। তা না হলে মওদুদ সাহেব কিভাবে বললেন সুরঞ্জিত বাবু এবার ধরা খেয়েছেন। একটি সুদুর প্রসারী নীল নকসা ও ষড়যন্ত্র এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাজ করছে। ২১ শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলার হোতারা সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারেনি। সুরঞ্জিত বাবুসহ অনেকে আহত হয়েছেন। তাঁর শরীরে এখনো স্প­ীন্টার আছে। বাকী জীবন এই ঘা নিয়েই বাঁচতে হবে। একজন সৎ মানুষের, উচুমানের রাজনীতিবিদের সৎ প্রয়াসকে কিভাবে ধ্বংস করা যায় ষড়যন্ত্রীদের এই কাজ উহার উদাহরণ। মওদুদ সাহেবরা , মীর্জারা, খন্দকারেরা যুগে যুগে দেশে দেশে এভাবেই দেশ ও জাতির অকল্যাণ ডেকে আনেন। মীরজাফর হতে মোশতাক ও জিয়া ষড়যন্ত্রের উদাহরণ। ৭১ এ যে নেত্রী বাংলাদেশই চাননি তাকে দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অবাস্তব। গত ১৭/৩/২০১২ তারিখের জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশ পাকিস্তান আইএসআই এর সাবেক প্রধান ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে খালেদা জিয়া তথা বিএনপিকে ৫০ কোটি রূপী তহবিল যোগাতে সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন। এ তহবিল ব্যবহার করে বিএনপি নির্বাচনে জয়লাভ করে ও সরকার গঠন করে। তাহলে বুঝুন তিনি কোন কাননের পাখি। জনাব এম.কে. আনোয়ার ১৯৯১ সনে প্রথম আওয়ামীলীগের মনোনয়ন লাভের জন্য শেখ হাসিনার কাছে যান। শেখ হাসিনা একটি প্রক্রিয়ার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। বিগত সংসদ অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এম.কে. আনোয়ার অপেক্ষা না করে ঐ আইএসআই এর গন্ধ পেয়ে খালেদা জিয়ার কাছে ছুটলেন। মনোনয়ন সংগ্রহ করেন এবং মন্ত্রীত্বও পান। রাজনীতিতে যারা অর্থের সন্ধান খোঁজেন তাদের কাছে নীতি আদর্শ, নিয়ম-কানুন কিছুই না। জাতির জনক অনেককে নতুন জীবন দান করেছেন, আর অকৃতজ্ঞ রাজনীতিবিদরা, মানুষেরা তাকে হত্যায় সহায়তা করেছেন। সত্যি স্যালুকাস বিচিত্র এদেশ। আলেকজান্ডার দি গ্রেট ঠিকই বলেছেন। তবে আদর্শবান ও সৎ রাজনীতিবিদরা স্বমহিমায়ই বেঁচে থাকবেন আবহমান কাল। ইতিহাসে তারা অমর থাকবেন। যারা সুরঞ্জিত বাবুকে বিপদে ফেলতে চেয়েছেন তারা অচিরেই আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। উল্লিখিত তিনজন কর্মকর্তার বক্তব্যে তাই স্পষ্ট হয়েছে। হে কাল নাটকের ইবলিসেরা, অশুভ শক্তির দোসরেরা, আইএসআই এর চরেরা হুশিয়ার সাবধান। জনতার রুদ্ররোষে তোদের ষড়যন্ত্র ভেসে যাবে। এখনো সময় আছে নেমে আসুন মানুষের কাতারে জনগণের কল্যাণে। রাজনীতি হোক মানুষের কল্যাণে, দেশ ও জাতির উন্নয়নে। আর তদন্তে যদি মাননীয় মন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায তবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হোক।

সরকারের হাতে এখন মাত্র দেড় বছর সময় আছে। বিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্রে সরকারকে ঘায়েল করতে চাইবেই। সরকারকে চলতে হবে দৃঢ় পদক্ষেপে। নির্বাচনী অঙ্গীকার দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। নইলে কঠিন বিপদ। প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার বাগানটাকে সুন্দর করে সাজান। গোলাপের সমাহারে গোলাপের সুগন্ধে চারিদিক আমোদিত হোক। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত কাজ করতে চাই একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার জন্য। রেলের যড়যন্ত্রটি দ্রুত উšে§াচিত হোক। রাজনীতির কালো বিড়ালগুলি ধরা পড়–ক অচিরেই। একজন সৎ, দক্ষ, নীতিবান ও আদর্শবান রাজনীতিবিদের জয় হউক। গাড়িচালক, জিএম, কমানডেন্ট ও এপিএস তোমরা কোন অশুভ শক্তির হাতিয়ার হয়ো না। সত্য ও সততার জয় হউক। জাতির জনকের বজ্রকণ্ঠ অনুরণিত হোক সারা বাংলায় টেকনাফ হতে তেতুলিয়ায়। আগামী প্রজš§ মনের মাধুরী দিয়ে গেয়ে উঠুক আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।

জয়বাংলা।

(লেখক সাবেক সচিব)

পাঠক মতামত