চলতি অর্থবছরের শেষ পাদে এসে সরকারের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ আবারও বাড়ছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দুই হাজার ৮২১ কোটি টাকা। আর অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ১৩ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। যা গত ৩ মার্চ ছিল ১৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।
অবশ্য এপ্রিলের শুরুতে এর পরিমাণ ছিল আরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের শুরুতে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ১৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যনুযায়ী, ২০১২ সালের প্রথম চারমাসে (এপ্রিল পর্যন্ত) সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গড়ে ৪২ শতাংশ বেশি। অথচ মুদ্রানীতিতে তা ৩১ শতাংশে সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। তবে এসময়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের শুরুতে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ১৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা। যা গত ৩ মার্চে ছিল ১৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে সরকার ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
তবে গত মার্চে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ৪৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হওয়ায়। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ২৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ করবে। ফলে অর্থ বছরের বাকি এই সময়টাতে সরকারের ব্যাংক ঋণ আবার বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আল্লাহ মালিক কাজমি বাংলানিউজকে জানান, সরকার ধার চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক দিতে বাধ্য। সরকারের প্রয়োজনে অর্থ লাগলে তার যোগান দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এখানে না বলার কোনো বিধান নেই।
তিনি আরও বলেন, অর্থ বছরের প্রায় শেষ। সরকারের ঋণ যে পরিমাণ অপরিশোধিত থাকবে তা পরের বছরের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এটা মোট ঋণ হিসেবে ধরা হবে। তাছাড়া সব ঋণ এক সঙ্গে পরিশোধযোগ্য হয় না। তবে সরকারকে ঋণের বিপরীতে নিয়মিত হারে সুদ পরিশোধ করে যেতে হয়। প্রতি ছয় মাসে সরকার সুদ দিয়ে থাকে।
মূল বাজেট অনুযায়ী, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ এপ্রিল-জুন সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বর্তমানে এ লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে অতিরিক্ত ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা তুলে নেবে।
এদিকে বিশ্লেষকদের ধারণা, সরকারের এ ধরনের পরিমাণ বাড়লে ব্যাংকিং খাতে চলমান তারল্য সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠবে। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে দেশের বিনিয়োগ বাধার মুখে পড়বে।
এমনিতেই ব্যবসায়ীরা অর্থ বছরের পুরো সময়টা বলে আসছিলেন, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ বাড়ায় তারা ঋণ পাচ্ছে না। এতে করে তারা নতুন বিনিয়োগে যেতে পারছে না। ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক তারল্য সংকট চলছে।
গত ৪ ডিসেম্বরে তা ২১ হাজার ৩২১ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ডিসেম্বরের পর থেকে ধীরে ধীরে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ কমতে থাকলেও এখন আবার তা বাড়তে শুরু করেছে।
একইসঙ্গে দেশের মূল্যস্ফীতির গতিও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, গত এক বছরে (এপ্রিল পর্যন্ত) মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। যদিও মাসওয়ারি মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে এক অংকে নেমেছে। এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ ভাগ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের অভিমত, শেষ সময়ে এসে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ ৪৭ শতাংশ বাড়ানোর ফলে অর্থ বছরের শেষ ছয় মাসের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়নে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
ঘোষিত মুদ্রানীতি আওতায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৩১ শতাংশ ও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৩১ শতাংশের মধ্যে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।
চলতি অর্থ বছরের শেষ দিকে এসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের বর্ধিত ঋণ সুবিধার আওতায় প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঋণের অনুমোদন দিলেও পদ্ধাসেতুসহ আরও বেশ কিছু প্রকল্পে সরকার বিদেশি ঋণ ও অনুদান ছাড় করাতে পারেনি। ইতিমধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি কমানোর জন্য সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে দুই দফায় কাটছাঁট করে। প্রথমে কাটছাঁট করে ৪৬ হাজার কোটি টাকা এডিপির জন্য বরাদ্দ হলেও পরে তা ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় কমিয়ে আনা হয়।