রাজশাহী, ১ আগস্ট, ২০১৬ : কৃষিভিত্তিক এলাকায় মৌসুমী ফল, সবজি, রসুন ও কাঁচা মরিচের মত সতেজ মশলাকে জৈব উপায়ে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক হিমাগার একটি কার্যকরি উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত রাজশাহী নগরীর ভদ্রা এলাকায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পরিবেশ বান্ধব ৩০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক হিমাগার চালু করা হয়।
প্রাকৃতিক হিমাগারের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন জানান, প্রাকৃতিক হিমাগারের কর্মক্ষমতায় তিনি খুবই আশাবাদী।
অধ্যাপক হোসেন বলেন, ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রাকৃতিক হিমাগারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। হিমাগারের মধ্যে আলু, পেঁয়াজ, আদা,গাজর, টমেটো, অন্যান্য সবজি ও আম রাখা হয়েছিল। ‘আমরা আলু, পেঁয়াজ ও আদা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভালো ফল পেয়েছি। আলু এবং পেঁয়াজ চার মাস পর্যন্ত সংরক্ষিত ছিল।’
চলতি মৌসুমে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন আরেকটি গবেষণা প্রকল্প চালু করা হবে। এতে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার না করে তিন থেকে ছয় মাসের জন্য টমেটো, গাজর এবং শাক-সবজির পাশাপাশি আম সহ অন্যান্য কিছু ফল সংরক্ষণ করা হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর হোসেন জানান, হিমাগারটি বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের জন্য সহজ ডিজাইনে তৈরী করা হয়েছে।
এই হিমাগার চালানোর জন্য কোন বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। কৃষিপন্য থেকে উৎপন্ন বাষ্পই প্রাকৃতিক হিমাগারে পন্য সংরক্ষণে যথেষ্ট।
৬০ ফুট লম্বা এবং ৩০ ফুট চওড়া ৩০০ টন কৃষিপন্য সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক হিমাগার তৈরী করতে ইট, সিমেন্ট, বাঁশ ও শন ব্যবহার করতে হয়েছে।
প্রাকৃতিক হিমাগার তৈরী করতে দু’টি সমান্তরাল দেয়াল হয়। ভেতরের দেয়ালে ইট ও সিমেন্ট এবং দেয়ালের বাইরে কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করতে হয়, দুই দেয়ালের মধ্যে তিন ইঞ্চি ফাঁক রেখে তা বালি দিয়ে ভরাট করা হয়।
প্রাকৃতিক হিমাগারের ভেতরে সূর্যের আলোর জন্য উপরের অংশে দু’টো কাঁচের তৈরি জানালা লাগানো হয়। এছাড়াও, ১১০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে চারটি সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।
অধ্যাপক হোসেন বলেন, আমরা ২৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় আলু এবং পেঁয়াজ শীতল রাখতে সফল হয়েছি।
তিনি বলেন, ১৬ ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রায় সবজি সংরক্ষণের প্রয়োজনে আমরা এর পাশে ছোট একটি প্রাকৃতিক হিমাগার স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, এতে অন্যান্য সবজি এবং ফলের উপর পরীক্ষা চালানো হবে।
গতানুগতিক হিমাগারে ৮০ কেজি আলুর বস্তা সংরক্ষণে খরচ পড়ে ৩৫০ টাকা, আর প্রাকৃতিক হিমাগারে সমপরিমাণে আলু সংরক্ষণে খরচ পড়ে ১০০ টাকা। এতে বস্তা প্রতি কৃষকের সাশ্রয় হয় ২৫০ টাকা।