1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

বাংলাদেশি যুবকের বীরত্বগাঁথা আনন্দবাজার পত্রিকায়

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬
  • ১৪৮ Time View

1923ভারতের নদীয়া জেলার রানাঘাট স্টেশনে ট্রেনের ধাক্কায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন এক বৃদ্ধ। স্টেশনে হাজারো মানুষ থাকলেও কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। অনেকে আবার কেস মামলার ভয়ে ঝামেলায় জড়াতে চায়নি। কিন্তু বসে থাকেননি বাংলাদেশি যুবক বিজয় কৃষ্ণ দাস। এই রকম একটি পরিস্থিতিতে ওই বৃদ্ধের জীবন বাঁচিয়ে ভারতব্যাপী সুনাম অর্জন করেছেন তিনি।

বিজয় কৃষ্ণের বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা ‘সবাই নির্বিকার, বাঁচাতে এগিয়ে গেলেন বাংলাদেশি যুবক’ শিরোনামে গত ৩ ডিসেম্বর ভারতের শক্তিশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সন এবং ৪ ডিসেম্বর প্রিন্ট ভার্সনে ছাপা হয়। এরপর থেকে বিজয়ের সাহসিকতার কথা ভারতজুড়ে আলোচিত হতে থাকে।

পাঠকদের জন্য আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে দেয়া হলো :

চলন্ত ট্রেনের হাতলটা ধরে প্ল্যাটফর্মের উপরে ছুট ছিলেন এক প্রৌঢ়। কিন্তু তাল রাখতে না পেরে প্ল্যাটফর্মে পড়েও গেলেন। দৃশ্যটা সহ্য করতে না পেরে চোখ বুজে ফেলেছিলেন স্টেশনের অনেকেই। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন বাংলাদেশের বাসিন্দা বিজয়কৃষ্ণ বিশ্বাস। চোখ খুলে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন সেই প্রৌঢ়। কেউ তাঁকে তুলতেও এগিয়ে যাচ্ছেন না।

বিস্ময়ের ঘোরটা কাটতেই বিজয়কৃষ্ণ ছুটে যান সে দিকে। রানাঘাট স্টেশনে তখন ভিড় কম নয়। বেলা দু’টো বাজে। বিজয়কৃষ্ণ চেঁচিয়ে বলেন, ‘‘এ ভাবে পড়ে থাকলে মানুষটা মরে যাবে। আপনারা একটু হাত লাগান। হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

স্টেশনের যাত্রী, দোকানদার, ফেরিওয়ালা কেউই তাতে সাড়া দিলেন না। বরং বিজয়কৃষ্ণকে আরও অবাক করে দিয়ে তাঁরা বললেন, ‘‘ছেড়ে দিন। রেল পুলিশ দেখবে।’

বিজয়কৃষ্ণ কিন্তু বুঝতে পারছিলেন, রেল পুলিশের অপেক্ষায় থাকতে হলে এই প্রৌঢ়কে বাঁচানো যাবে না। তিনি তো মারা যাবেনই। সেই সঙ্গে হয়তো অনাথ হয়ে পড়বে একটি গোটা পরিবার। তিনি তাই নিজেই ছুটে যান। ওই প্রৌঢ়কে কোলে তোলেন। স্টেশনের লোক সবই দেখছিলেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। এক সহযাত্রী বরং বিজয়কৃষ্ণের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে যান, ‘‘সরে যান। জানেন তো, পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা।’’

বিজয়কৃষ্ণ বলেন, ‘‘কথাটা শুনে একবার যে একটু চিন্তা হয়নি তা নয়। আমি তো ভারতীয় নই। তাই কোনও কারণে আটকে গেলে দেশে ফিরতে দেরি হয়ে যেতে পারত। কিন্তু তারপরেই ভাবলাম, আহতের কোনও দেশ হয় না। রাজনীতি আর ভূগোলের সীমানা দিয়ে মানবিকতায় পাঁচিল তোলা উচিত নয়।’

যেমন ভাবা তেমন কাজ। ওই প্রৌঢ়কে পাঁজাকোলা করে তুলে তিনি নিয়ে যাচ্ছিলেন স্টেশনের বাইরে। ইচ্ছা ছিল কোনও একটি যানবাহনে করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবেন তাঁকে। তবে ততক্ষণে চলে এসেছে রেল পুলিশ। একটা স্ট্রেচার নিয়ে আসা হল। কিন্তু তাতেও তো তুলতে হবে প্রৌঢ়কে। বিজয়কৃষ্ণই এগিয়ে এলেন। ভিড়ের ভিতর থেকে এগিয়ে এলেন আরও এক জন। দু’জনে মিলে ধরাধরি করে প্রৌঢ়কে তোলেন স্ট্রেচারে।

তারপরে নিয়ে গেলেন স্টেশনের বাইরে। তোলা হল জিআরপি কর্মীদের আনা ভ্যানে। কিন্তু এ বার তৈরি হল নতুন সমস্যা। ভ্যানে আর কেউই যে নেই। তার উপরে ওই প্রৌঢ় বিজয়কৃষ্ণের হাতটি চেপে ধরে রেখেছেন। বিজয়কৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘ওই প্রৌঢ় কথা বলতে পারছিলেন না। তার মধ্যেই কোনওমতে বললেন, ‘আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আমি মরে গেলে সংসারটা ভেসে যাবে।’ তাই তাঁর সঙ্গেই ভ্যানে উঠে পড়ি।’

রানাঘাট হাসপাতালে পৌঁছে বিজয়কৃষ্ণই ওই প্রৌঢ়কে ভর্তি করান। তাঁর বাড়িতেও খবর দেন।  ওই প্রৌঢ়র নাম পদ্মভূষণ ভট্টাচার্য। বাড়ি কৃষ্ণনগরের মল্লিকপাড়ায়। আগে একটি বেকারিতে কাজ করতেন। এখন ধারদেনা করে বিস্কুটের ব্যবসা শুরু করেছেন। ছেলে মাধ্যমিক দেবে। মেয়ে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তাঁর স্ত্রী সান্ত্বনাদেবীর বক্তব্য, ‘‘বিজয়কৃষ্ণবাবু না থাকলে কী যে হত, ভেবে শিউরে উঠছি। উনি আমাদের পুরো সংসারটাকেই বাঁচিয়ে দিলেন।’’

মঙ্গলবার রানাঘাট স্টেশনে এই ঘটনার পরে পদ্মভূষণবাবুকে কলকাতায় নীলরতন সরকার হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পদ্মভূষণবাবুর বাঁ পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। বিজয়কৃষ্ণ বুধবার সেখানেও গিয়েছিলেন। তাঁর বাংলাদেশ ফিরে যাওয়ার কথা ছিল বুধবারেই।

তিনি জানান, জ্যাঠামশায়ের অসুস্থ। তাঁকে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এনেছেন। উঠেছেন বাদকুল্লাতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। বিজয়কৃষ্ণ বাবুর কথায়, ‘‘ভিসার মেয়াদ রয়েছে। তাই পদ্মভূষণবাবুর অস্ত্রোপচার পর্যন্ত থেকেই যাব। জ্যাঠামশায়কেও ভাল করে ডাক্তার দেখানো হয়ে যাবে।’’

বিজয়কৃষ্ণের বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার উলুকান্দা গ্রামে। এই বছরই মাগুরা আদর্শ কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছেন। মঙ্গলবার বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসেন। বনগাঁ থেকে ট্রেনে রানাঘাট স্টেশনে জ্যাঠামশায়কে পৌঁছে দিয়ে কলকাতায় যাওয়ার কথা ছিল একটা জরুরি কাজ মেটাতে। তখনই এই ঘটনার সামনে পড়ে যান।

রানাঘাট জিআরপি থানার আইসি সুভাষ রায়ের কথায়, ‘‘ওই যুবক সত্যিই খুব ভাল কাজ করেছেন। তিনিই প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন। তার পরপরই আমরাও চলে যাই।’ সুভাষবাবুর বক্তব্য, ‘‘ওই যুবকের দৃষ্টান্ত থেকেই মানুষ এ বার বুঝবেন যে, কোনও আহতের পাশে দাঁড়ালে তাঁকে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয় না।’

ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃঞ্চ দাসের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি সোমবার দুপুরে টেলিফোনে জানান, ওই বৃদ্ধের পরিবারের সঙ্গে তার এখন ভাল সম্পর্ক হয়েছে। এরপরও তিনি আরো এক বার ভারতে গিয়ে ওই ব্যক্তির বাড়িতেও যান।  বিজয় বলেন, পদ্মভূষণ ভট্টাচার্য এখন ভাল আছেন।

বিজয় কৃঞ্চ জানান, মানবতার কল্যাণে কাজ করার ব্রত নিয়েই তিনি বেঁচে থাকতে চান। আমাদের দেশে অনেকেই এখন আর কেউ কারো বিপদে এগিয়ে আসেন না। একারণে অনেকেই এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। যা হওয়া উচিত নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ