জাতিসংঘ সাধারণ পরিষরে ৭০তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সংবাদ সম্মেলনের পুরা বক্তব্য দেয়া হলো।
বিসমিল্লাহহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আসসালামু-আলাইকুম। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টেবর ২০১৫ পর্যন্ত নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে আমার নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধি দলে মাননীয় অর্থমন্ত্রী, মাননীয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী, অর্থনৈতিক বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তাঁরা অধিবেশনের বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি কয়েকজন মাননীয় সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়িক প্রতিনিধিগণ সফরসঙ্গী ছিলেন। তাঁরাও নিজ নিজ সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত সভাগুলোতে যোগদান করেন।
দুটি বিশেষ কারণে এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথমত: জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা Millennium Development Goals (MDGs)-এর ধারাবাহিকতায় এবারের অধিবেশনে একগুচ্ছ নতুন ও উচ্চাভিলাষী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা Sustainable Development Goals (SDGs) চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত: এ বছরের শেষদিকে প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে একটি কাঙ্খিত ও গঠনমূলক সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ একটি জোরালো রাজনৈতিক বার্তা দিতে পেরেছেন।
২৪ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। এসময় আমরা উভয়েই স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগের বিষয়ে আমাকে আবারও আশ্বস্ত করেছেন। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঘন ঘন অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাতের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করি। বিকেলে পবিত্র ঈদুল আয্হা উপলক্ষে এক সংবর্ধনায় যোগ দেই এবং প্রবাসী বাঙালিদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করি। এবারের অধিবেশনের অন্যতম মূল আয়োজন ছিল ২৫ ধেকে ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত UN Summit for Sustainable Development। ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে আমি শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেই এবং ১৮০টিরও বেশি দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একযোগে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সংবলিত ২০৩০ Agenda for Sustainable Development অনুমোদন করি। সরকার প্রধান হিসেবে ২০০০ সালের সহস্রাব্দ শীর্ষ সম্মেলনের পর এবারের ঐতিহাসিক শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা আমার জন্য ছিল বিশেষ গৌরবের।
২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সংস্থা Business Council for International Understanding (BCIU) আয়োজিত একটি মত বিনিময় সভায় অংশ নেই। আমি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের জানাই আমরা শিগগিরই ‘7% growth club’-এ প্রবেশ করতে যাচ্ছি। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানাই। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। একই সাথে, আমি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, জাহাজ নির্মাণ, ঔষধ ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরি। BCIU-এর পক্ষে Boeing, Citi Group, MetLife, Mastercard International, SkyPower Global, Transfast, American Power Corporation, Excelerate Energy, Zephyr Management ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। SkyPower Global বাংলাদেশে ২০০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
ঐদিন বিকেলে আমি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে Girls Lead the Way শীর্ষক একটি লেকচার প্রদান করি। অত্যন্ত প্রাণবন্ত এই অনুষ্ঠানে আমি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের রাজনৈতিক দর্শন ও উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরি। অনুষ্ঠানে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট, অনুষদ সদস্যবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আমি তরুণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেই।
২৬ সেপ্টেম্বর আমি বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেলের সাথে Fostering Sustainable Economic Growth, Transformation and Promoting Sustainable Consumption and Production শীর্ষক একটি সেশনে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করি। অধিবেশনের সূচনা বক্তব্যে আমি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সম্পদ ও প্রযুক্তি চাহিদা পূরণের উপর জোর দেই।
ঐদিন বিকেলে চীনের রাষ্ট্রপতি শি চিনপিং ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন-এর যৌথ-সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত High Level Round Table on South South Cooperation-এ বক্তব্য দেই। এসময় আমি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ের উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করি।
পরে মার্কিন কংগ্রেস-এর একটি প্রতিনিধিদলের সাথে আমার বৈঠক হয়। এসময় মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাস-এর কো-চেয়ার যোসেফ ক্রাউলি, সদস্য ক্যারোলিন বি. এ্যালোনি, ও হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি-র সদস্য ইলিয়ট এল এঙ্গেল উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বাংলাদেশের ‘অবিশ্বাস্য উন্নয়ন’ ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, ৬ শতাংশের অধিক হারে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, জঙ্গিবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অনন্য অবদান ও মিয়ানমার শরণার্থীদের প্রতি মানবিক সহায়তা প্রদানের প্রশংসা করেন। মার্কিন কংগ্রেস-এর সদস্যবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
পরে চীনের রাষ্ট্রপতি শি চিনপিং-এর সাথে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। আমি চীনের বাজারে আরও অধিক সংখ্যক বাংলাদেশী পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য চীনের রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানাই।
ঐদিন সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদরদপ্তরে International Telecommunication Union (ITU) প্রদত্ত ‘ICTs in Sustainable Development Award’ গ্রহণ করি। আমি দেশের তরুণদের উদ্দেশ্যে এই পুরস্কার উৎসর্গ করেছি। এই পুরস্কার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপায়নে সরকারের অব্যাহত সাফল্যের আরেকটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
২৭ সেপ্টেম্বর আমি চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং-এর আমন্ত্রণে Global Leader’s Meeting on Gender Equality and Women’s Empowerment-এ অংশগ্রহণ করি। আমি নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকারের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির কথা তুলে ধরি। নারীর প্রতি সকলপ্রকার বৈষম্য ও সহিংসতা দূর, বাল্যবিবাহ নিরোধ, এবং মাতৃস্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়ে আমাদের সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যাবে বলে উল্লেখ করি।
ঐদিন দুপুরে আমি UN Summit for the Adoption of the Post 2015 Development Agenda-এর প্লে প্লেনারি সেশনে বক্তব্য রাখি। আমার বক্তব্যে আমি বাংলাদেশের পক্ষে কয়েকটি মূল বিষয়ের অবতারণা করি:
এক. বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে যে ধরনের অঙ্গীকার ও সাফল্য দেখিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা একই ধরনের অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাব।
দুই. বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য উন্নত বিশ্ব আন্তর্জাতিকভাবে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়, সেসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সহজ করে দিতে হবে।
তিন. আমাদের এ বিশ্বকে অতি দারিদ্র্য ও ক্ষুধার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার যে সুযোগ দেখা দিয়েছে, তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিকেলে আমি বাংলাদেশ কম্যুনিটি আয়োজিত আরেকটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেই ।
আপনারা জানেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য পলিসি লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘ এবার আমাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এটি জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার।
২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এক বর্ণাঢ়্য অনুষ্ঠানে আমি UNEP-এর নির্বাহী পরিচালক মি. অ্যাচিম স্টেইনারের কাছ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করি। আমি বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশে এই পুরস্কার উৎসর্গ করি।
পুরস্কার গ্রহণ করে আমি আমার বক্তব্যে বলি যে, দেশের জনগণের পূর্ণ সহযোগিতা ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। আমি বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম Solar Nation হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করি।
২৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্যোগে আয়োজিত Leaders Of Summit on UN Peacekeeping-এ আমি যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া ও রুয়ান্ডার রাষ্ট্রপতি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া ও উরুগুয়ের প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে যৌথ-সভাপতিত্ব করি।
আমি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও অধিক সংখ্যক সৈন্য, পুলিশ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করার ঘোষণা দেই। Bangladesh Institute of Peace Support Operation Training (BIPSOT)-কে একটি ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্সে’ হিসেবে গড়ে তোলা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বিষয়ে একটি জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়নের ঘোষণা দেই।
ঐদিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সাথে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য আমাকে অভিনন্দন জানান এবং এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাথে একযোগে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
একইদিন নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট্টের সাথে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আমাকে তার দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানে আমি তা গ্রহণ করি। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সফর হতে পারে বলে আশা করছি।
২৯ সেপ্টেম্বর আমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্যোগে আয়োজিত Leaders Of Summit on Countering Violent Extremism-এ যোগ দেই।
একইদিন আমি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘MDGs to SDGs- A Way Forward’ শীর্ষক একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করি। এ অনুষ্ঠানে নেদারল্যান্ডসের রাজা ভিলেম আলেকজান্ডার, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লফভেন ও বেনিনের প্রধানমন্ত্রী লিওনেল জিনসু যৌথ-সভাপতিত্ব করেন। অন্যান্যের মধ্যে ৭০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট মগেনস লাইক্কেটফট্স এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কমসূচির প্রশাসক হেলেন ক্লার্ক বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশকে ‘উন্নয়ন’ বিস্ময় হিসেবে আখ্যা দিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমাদের সরকারের বলিষ্ঠ অঙ্গীকারকে সকল উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
ঐদিন বিকেলে নেদারল্যান্ডেসের রাণী Maxima-এর সাথে আমার সৌজন্য সাক্ষাত হয়। আমি নেদারল্যান্ডেসের রাণীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাই। তিনি আমার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
৩০ সেপ্টেম্বর আমি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক বা General Debate অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখি। প্রতিবারের মত এবারও আমি বাংলায় বক্তব্য দেই।
আমি আমার বক্তব্যে জাতিসংঘের ৭০ বছরের পথ পরিক্রমায় আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব সংস্থাটির ভূমিকার কথা স্মরণ করি।
আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই। আমি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বজুড়ে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উপর গুরুতারোপ
দেশে ফেরার পথে আমি ২ অক্টোবর লন্ডনের ক্লেরিজ হোটেলে এক সংবর্ধনা সভায় যোগ দেই। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ প্রবাসীদের সমন্বয়ে এই সভার আয়োজন করে। সভায় জনাব সুলতান শরীফ সভাপতিত্ব করেন।
সামগ্রিকভাবে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৈশ্বিক অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল, দৃশ্যমান ও সুসংহত করেছে। এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম বারবারই প্রথম সারিতে উচ্চারিত হয়েছে।
এসডিজি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের মত ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে এসেছে।
সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভূমিকা বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশকে আমরা যে উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছি, সেই অনুপ্রেরণা থেকেই আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাব বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের এই অগ্রযাত্রায় দেশের গণমাধ্যম সব সময়ই আমাদের পাশে থাকবে বলে আশা করছি।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।