1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

‘অলি’দের বাধি কি দিয়ে

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১১
  • ১৭২ Time View

ঢাকা: ২০০১ সাল। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় সারাদেশ টালমাটাল। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের অভূতপূর্ব-অকল্পনীয় (!) সাফল্যে দলীয় নেতাকর্মীরা ভেসে যাচ্ছে আনন্দজোয়ারে। সেই জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানবতা ও মানবাধিকার নামক এ গ্রহের সবচেয়ে দুর্লভ বস্তুটি (এ ক্ষেত্রে বাগেরহাটের শোভা রাণী ট্রাজেডি স্মরণযোগ্য)।

আমার শিক্ষক পিতা সকাল থেকেই পত্রিকার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকেন। প্রত্যন্ত গ্রামে রাজধানী ঢাকা থেকে পত্রিকা পৌঁছতে ঢের দেরি হয়। সামনে পরীক্ষা তাই উপজেলা সদর থেকে দ্রুত পত্রিকাটি এনে দেবার ব্যাপারে বাবাকে কোনো সহযোগিতা করতে পারি না।

দিনটি ছিল ১১ অক্টোবর। আগের দিন রাতে সরকার গঠন হয়েছে। চারদলীয় জোটের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজয়ী প্রার্থীর মধ্যে বণ্টন হয়েছে মন্ত্রীত্ব। সে সুবাদে একাত্তরের আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন রাজাকার বাহিনীর আরেক কমান্ডার ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। সুতরাং সকাল থেকেই বাবা তাড়া দিচ্ছিলেন দ্রুত পত্রিকা এনে দিতে।

বাড়ি থেকে সাইকেল চালিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের উপজেলা সদর থেকে দৈনিক জনকণ্ঠসহ আরও দু’টি পত্রিকা নিয়ে এলাম।

এনেই সোজা দিয়ে দিয়েছি বাবার হাতে।

কিছুক্ষণ পর বাবার উত্তেজিত গলা, ‘দেখে যা-আলবদর বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে একাত্তরের রণাঙ্গনে প্রথম খেতাব প্রাপ্ত (বীর বিক্রম) বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল অলি অহমেদের কোলাকুলি।’

ছুটে গিয়ে দেখলাম, আগের রাতের শপথ অনুষ্ঠানে মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে কোলাকুলি করছেন তৎকালীন বিএনপি নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর প্রতীক।

ক্যাপশনটি ছিল ‘নিজামীর সঙ্গে কোলাকুলি করতে গিয়ে একাত্তরের রণাঙ্গনের কথা মনে পড়ছে কি অলির?’

১০ বছর আগের ওই ঘটনা অলি আহমেদের সাম্প্রতিক ‘পলিটিক্যাল অ্যাকটিভিটিজ’ ও এখানে ওখানে দেওয়া বক্তব্য ওই ঘটনাটিই মনে করিয়ে দিলো।

২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর ‘জিয়া পরিবারের সীমাহীন দুর্নীতির কথা’ উল্লেখ করে ২৬ অক্টোবর বিএনপি থেকে বেরিয়ে এলডিপি গঠন করেন অলি।

জিয়া পরিবারের দুর্নীতি ছাড়াও ‘দলছুটের’ কারণ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততাকেও উল্লেখ করেন তিনি।

অলির এই আকস্মিক ‘দলছুট’ হওয়ার ঘটনা বিএনপি-জামায়াতকে হতাশ করেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা আশান্বিত হয়েছিল এই ভেবে যে-একজন বীর বিক্রমকে আলবদর বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে আর কখনো কোলাকুলি করতে দেখা যাবে না।

কিন্তু বিধি বাম!

পাঁচ বছর না পেরুতেই ক্ষমতার ম্যাজিক চেয়ারের মোহনীয় টানে অলি আবারও উদ্বাহু হয়েছেন আলবদর বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে কোলাকুলির জন্য। অবলীলায় বলে যাচ্ছেন, ‘জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নেই। জনগণ যুদ্ধ করে দেশকে মুক্ত করেছে–ইত্যাদি ইত্যাদি।’

শুধু তাই নয়, জামায়াতী স্টাইলে বলে যাচ্ছেন-‘আল্লাহ ও রাসুল অনুমোদন দিয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পতন না হলেও এ সরকার বাজেট পর্যন্ত টিকবে না।’

সরকার বাজেট পর্যন্ত টিকবে কী টিকবে না সেটি হয়তো সময়ই বলে দেবে। তবে আল্লাহ ও রাসুলের পবিত্র নামের দোহাই দিয়ে রাজনীতি করার জামায়াতী ও আমিনী স্টাইল খুব ভালোই রপ্ত করেছেন কর্নেল অলি। তার এই নতুন শঙ্কিত করে বটে।

গত ২৬ অক্টোবর যে অনুষ্ঠানে আল্লাহ ও রাসুলকে ‘হাজির নাজির’ করে সরকার পতনের দিনক্ষণ জানিয়ে দিয়েছেন ওই অনুষ্ঠানেই আবার বলেছেন-তিনি কখনো আর মন্ত্রী হবেন না। হুবহু তার ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ‘আমি ১৯৮৩ সালে মন্ত্রী হয়েছি। আপনারা নিশ্চিত থাকেন। ভবিষ্যতে আর কোনো দিন মন্ত্রী হবো না।’

বেশ ভালো। ভবিষ্যতে তিনি আর মন্ত্রী হতে চান না। দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চান। এমন নির্লোভ রাজতনীতিবিদ দেশে আর ক’জন আছে!

কিন্তু এই অলির মুখেই আবার শুনি-‘আওয়ামী লীগ আমার বুকে লাথি মেরেছে। দীর্ঘ আড়াই বছর অন্ধের মতো তাদের সাপোর্ট দিয়ে গেছি। ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে ৪০ টি আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তারা আমাকে একটি আসনও ছেড়ে দেয়নি।’

কী আশ্চর্য! একদিকে তিনি বলছেন, ক্ষমতার জন্য নয় মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি করি। অন্যদিকে বলছেন, আসন ছেড়ে না দিয়ে আওয়ামী লীগ আমার বুকে লাথি মেরেছে। একদিকে বলছেন মন্ত্রীত্ব চাই না। অন্যদিকে বলছেন ন্যায্য হিস্যা না পেলে চারদলীয় জোটেও থাকব না।

আমরা জানি, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে ‘অলি’রা সবসময় বাতাসের অনুকুলে পাল উড়াবেন-এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়। একজন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, একজন অলি আহম্মেদ বীর প্রতীক কেবল রাজনীতিবিদই নন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের বিবেচনায় তারা শ্রেষ্ঠ বাঙালিও বটে। অন্যদের সঙ্গে তাদের তুলনা চলে না।

সেই সাথে এও জানি, প্রতিটি মানুষই বিক্রি হয়! প্রশ্ন হলো কিসের কাছে? কেউ অর্থের কাছে। কেউ ক্ষমতার কাছে। নারী-মদও আছে।

কিন্তু আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই বিক্রি হয়ে যাওয়া আটকানো যাবে কি? স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের বেড়াজাল থেকে তাদের বের করে আনাই বা কিভাবে সম্ভব। এখন বিধি, তুমিই বলে দাও অলিদের বাধি কী দিয়ে?

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ