1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

‘অজানা ভাইরাসে’ ২ মেয়ের মৃত্যু, আইসোলেশনে বাবা-মা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • ৩২ Time View

রাজশাহীতে অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পরপর দুই বোনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এরপর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের বাবা-মা।

বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া গেলেও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

মারা যাওয়া শিশুদের নাম মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া। আগামী ২ মার্চ দুই বছরে পড়ত মুনতাহা মারিশা। আর ৩০ মে মুফতাউল মাশিয়ার বয়স হতো পাঁচ বছর।

এই দুই শিশুর বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) গৃহিণী। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে।

তবে তারা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকতেন। কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা গাছের বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন কাজের বুয়া। না ধুয়েই সেই বরই খেয়েছিল এই দম্পতির দুই শিশু সন্তান। এরপরই অসুস্থ।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। আর গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মারা যায় ছোট মেয়ে মারিশা। দু’জনেরই একই লক্ষ্মণ ছিল, জ্বর ও বমি। তাই শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা। তারা দুই মেয়ের দাফনেও অংশ নিতে পারেননি। বর্তমানে এই দম্পতি রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।

শনিবার বিকেলে নিকট স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। ওখানে গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও দাফন করা হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা মনজুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুনের অবস্থা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল। তবে তাদের পাশাপাশি শয্যায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

পলি খাতুন জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোয়ার্টারের কাজের বুয়া কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন।

সেই বড়ই না ধুয়েই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালোই ছিল। একসঙ্গে খেলাধুলাও করেছে। পরদিন বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ ছোট মেয়ে মারিশার শরীরে ভীষণ জ্বর আসে।

এ সময় তারা বার বার পানি পান করছিল। এরপর দুপুর থেকে বমি শুরু হয়। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে আসছিলেন। মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ পান করে। তবে শহরে অদূরে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মৃত্যু হয় মারিশার।

এরপরও তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। তবে সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, শিশু মারিশা আর নেই। এরপর রাজশাহীর দুর্গাপুরে নিয়ে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

এদিকে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মাশিয়ার শরীরেও জ্বর আসে। একই সঙ্গে শুরু হয় বমি। অবস্থা বেগতিক দেখে দুর্গাপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

সেখান থেকে তাকে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। এরপর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাশিয়ার পুরো শরীরেও ছোপ ছোপ কালশিটা দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে দ্রুত রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

রাত ৯টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালে জরুরিভাবে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে সঙ্গে সঙ্গেই আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। কিন্তু আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে থাকা মাশিয়াও পরদিন শনিবার বিকেলে মারা যায়।

পলি খাতুন জানান, ছোট মেয়ে মারিশার মৃত্যুর পর তার পুরো শরীরে ছোপ ছোপ কালশিটে দাগ উঠতে শুরু করে। আর বড় মেয়ে মাশিয়ারও একই রকম কালশিটে দাগ উঠতে শুরু করে মৃত্যুর আগের রাতে। এমন দাগ তিনি আগে কখনও দেখেননি বলেও জানান।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ এখনও নিশ্চিত নন তারা। তবে উপসর্গ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তারা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও তারা খেজুর রস পান করেনি। তবে তারা না ধুয়ে গাছের বরই খেয়েছিল। তাই এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে। তবে আবার অন্য কোনো ভাইরাসও হতে পারে। তাই কারণ নিশ্চিত হতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মাশিয়া আর তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রিপোর্ট পাওয়া যেতে পারে। তাদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আপাতত ওই দুই শিশুর বাবা-মা হাসপাতালের আইসোলেশনেই থাকবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ