1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন

ছেলের নাম ‘গোলাম আযম’, কেউ রাখে ?

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১১
  • ১৩৭ Time View

যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর সাংবাদিকরা গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে জানা যায়, তিনি অনেক কিছু বিস্মৃত হয়েছেন। ভুলে গেছেন। রোববার ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন দেখে যা বুঝলাম তাতে মনে হলো তিনি বোধহয় আবার স্মৃতি ফিরে পেয়েছেন। সাথে পুরোনো শয়তানটাও তার মাথায় চাপা দিয়ে বসেছে। সম্ভবত ইদানীং তার নামাজ কালাম ঠিকমতো পড়া হচ্ছে না। তাই শয়তানি বুদ্ধি আছর করেছে। তা না হলে তিনি মিথ্যা কথা বলবেন কেন? নেক বান্দাতো মিথ্যা কথা বলে না। তিনি যুদ্ধাপরাধের কথা অস্বীকার করে বলেছেন, আমি এমন কোন কাজ করিনি যে ক্ষমা চাইতে হবে। যা করেছি মানুষকে বাচানোর জন্যই করেছি ।

প্রশ্ন হতে পারে, তিনি মানুষকে বাঁচালে দুই লক্ষ নারী কিভাবে ধর্ষিত হয়েছে? কার অনুসারীরা অসহায় মেয়েদের ঘর থেকে বের করে এনে হানাদারদের বিছানায় ছুড়ে দিয়েছে? ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সাংবাদিক নেহাত ভদ্রতার বশে এই প্রশ্ন গোলাম আযমকে করেন নি।

সোমবার একটি জাতীয় দৈনিকে গোলামের আযমের সাক্ষাৎকার বিষয়ক সংবাদের পাশাপাশি আরেকটি লেখা পড়লাম সাবেক পাকিস্তানী কর্মকর্তা কর্নেল নাদের আলীর। নাদের আলী একাত্তুরে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধে করেছেন। তিনি অনুতপ্ত। ক্ষমা চেয়েছেন। কারা তাকে সাহায্য করেছেন তাও তিনি লিখেছেন- ‘জামায়াতে ইসলামী আমাকে এই স্বেচ্ছাসেবক প্রদান করত। প্রফেসর গোলাম আযম ও চৌধুরী রহমত ইলাহী প্রায়ই আমার অফিসে আসতেন। ফজলুল কাদের চৌধুরী ও মৌলভী ফরিদ আহমেদের সঙ্গে আমার ঘন ঘন দেখা হতো।’

এসব বিষয় গোলাম আযম কখনোই স্বীকার করেন না। করেন নি। কখনোই তারা ক্ষমা চান না। ভাগ্যের কি পরিহাস, ক্ষমা চাচ্ছেন গোলাম আযমের সাবেক প্রভু ,পাকিস্তানের এক সেনা কর্মকর্তা। হয়তো গোলাম আযম এখন বলবেন তিনি তাকে চেনেন না বা ভুলে গেছেন। তিনি ভেবেছেন অস্বীকার করলেই কি অপরাধ পার পেয়ে যাবেন?

মিথ্যেবাদী গোলাম আযমদের চরিত্র সহজে ধরা পড়ে না। বয়সের ভারে সাদা দাড়িতে তো একেবারেই ধরা পড়ে না। কেননা বৃদ্ধ অবস্থায় সাদা দাড়িতে শয়তানকেও পবিত্র মনে হয়। পুন্যবান মনে হয়। গোলাম আযম তদ্রুপ। ১৯৭১-এ তার যৌবনে তিনি কি পরিমান কু-কর্ম করেছেন তা সকলেই জ্ঞাত। এখন তিনি পূত মানব। এখন রুপবান গোলাম আযমের বয়সের ভারে গন্ডদেশে মেদ জমে নাদুস নুদুস দেখাচ্ছে। শুভ্র দাড়িতে পবিত্র মনে হচ্ছে। মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেন। তসবিহ জপেন হরদম। তাকে দেখিয়ে শিবির কর্মীরা অন্যদের বলে, এমন পুন্যবান মানুষ হয় না।

যুদ্ধপরাধের বিচারের বিষয়ে তারা বলে, এত বড় অলীর সাথে বেয়াদবি, আল্লাহ বরদাস্ত করবেনা, জাহিলদের উপর গজব নাযিল হবে। কেউ কেউ, বিশেষ করে শিবির কর্মীরা গোলাম আযমের বর্তমান দেখেই শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ছে।

গোলাম আযম প্রীতি দেখে শিবির কর্মীদের জন্য মায়া হয়। তাদের মস্তিষ্ক, চিন্তা, চেতনা তালা বদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তারা বুঝতে পারে না তাদের চিন্তা চেতনার বাইরের দুনিয়ায় কিভাবে গোলাম আযমকে মুল্যায়ন করে। শুধু গোলাম আযমই ঘৃনিত নন, তার নামটি পর্যন্ত ঘৃনা ভরে স্মরণ করে মানুষ। কেউ তার সন্তানের নাম রাখে না গোলাম আযম। কোনক্রমে কারো নাম গোলাম আযম হয়ে গেলেও তার ভাগ্যে জুটে সামাজিক লাঞ্ছনা। তেমন একটি ঘটনা দিয়ে লেখা শেষ করছি।

গত কয় মাস আগে আমি বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম ঢাকা ন্যাশনাল পলিটেকনিক-এ। ভর্তি চলছিল। এক শিক্ষক তার ভাগ্নেকে নিয়ে এলেন ভর্তির জন্য। ছেলেটির নাম জিজ্ঞেস করলেন আরেকজন প্রবীন শিক্ষক। ছেলেটি মিন মিন করে জবাব দিল, গোলাম আযম। এক শব্দেই সবাই হকচকিয়ে উঠে। চোখ তুলে তাকায় ছেলেটির দিকে। আমিও তাকাই। ছেলেটি মাথা নিচু এমন ভাবে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে যেন ওদিকে তাকিয়ে থাকতে পারাটাই আজ তার পরীক্ষা। চোখ উঠালেই বহিষ্কার। পুরো কক্ষে শুনশান নীরবতা নেমে আসে।

পরে বড় ভাই-এর মুখে শুনলাম তিনি ছেলেটির বাবাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তাকে ভৎর্সনা করেছেন। প্রতিবাদ করেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন গোলাম আযম নাম রেখে একটি ছেলের ঘাড়ে আমৃত্য লজ্জা তুলে দিয়েছেন? গোলাম আযম এবং মীর জাফর লোকের নাম হয়? ছেলেটির বাবা ভুল বুঝতে পেরেছেন। লজ্জিত হয়েছেন। খোজখবর নিয়ে নাম পাল্টানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন।

যে দেশে এতগুলো প্রতিবাদী কণ্ঠ আছে সেখানে গোলাম আযমের মতো অপরাধীরা রেহাই পাবে?
কখনোই না।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ