1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন

ফেসবুকেই আটকে গেছে আমাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা!

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭
  • ১৩৪ Time View

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লাকী আখন্দ আর নেই। গতকাল শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে খবরটি প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই ফেসবুকে লাকী আখন্দকে নিয়ে স্ট্যাটাসের বান ঢেকে গেল। বাংলাদেশিদের ফেসবুক ওয়ালে ওয়ালে মন খারাপের ইমো আর লাকী আখন্দের গানের পঙতিমালা দেখা গেছে।

কেউ কেউ প্রয়াত শিল্পীর সঙ্গে নিজের ছবি-সেলফিও আপলোড দিয়েছেন। কেউ আবার শিল্পীর ছবি দিয়েই স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সাধারণ শ্রোতাদের পাশাপাশি এ তালিকায় রয়েছেন দেশের সংগীতাঙ্গনসহ শোবিজের নানা অঙ্গনের তারকারা।

গতকাল রাত থেকে চোখে পড়েছে অসংখ্য পোস্ট, যেখানে লাকী আখন্দের সঙ্গে কাটানো সময় ও গান করার স্মৃতিচারণ করা হয়েছে। মন খারাপ হয়ে আসা সব লেখা। আহা! সেসব লেখা শিল্পী হিসেবে লাকী আখন্দের প্রতি নতুন করে শ্রদ্ধার জন্ম দেয়।

আন্দাজ করা হচ্ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিল্পীকে শেষ বিদায় জানাতে শোবিজের মানুষদের বিশেষ করে সংগীতাঙ্গনের তারকাদের ঢল নামবে। কিন্তু দিনের বেলায় চিত্রটা হলো উল্টো। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আসাদুজ্জামান নূর, হাসানুল হক ইনুর মতো দুজন মন্ত্রীসহ অসংখ্য আমলারা আসতে পেরেছেন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার, ফকির আলমগীর, খোরশেদ আলমের মতো অনেক প্রবীণ গানের মানুষেরা আসতে পেরেছেন। দেখা গেছে লাকী আখন্দের অনেক সহকর্মী ও সমসাময়িক গানের মানুষদের। একটা গোলাপ কিংবা পথে পাওয়া দুধ সাদা চাঁপা ফুলে প্রিয় শিল্পীকে বিদায় জানাতে এসেছেন শত শত সাধারণ মানুষ। কিন্তু লাকীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারলেন না এ বিভিন্ন প্রজন্মের তারকারা! তারা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার দায় সেরেছেন ফেসবুকের স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে! হায় দৈন্যতা! হায় প্রযুক্তি!

দৃষ্টিকটূ এ বিষয়টি দিন দিন আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে করুণ আকার ধারণ করছে। এর আগেও অসংখ্য নন্দিত মানুষের মৃত্যুতে শোকের সাগরে ভেসেছে এদেশের তারকাদের ফেসবুক। সর্বশেষ চিত্রপরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন, চিত্রনায়িকা দিতি, অভিনেতা মিজু আহমেদ, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকদের মৃত্যুর পর বেশ দৃষ্টিকটূ ছিল সবার উপস্থিতি। ফেসবুকে কেঁদে-কেটে তারা এক করে দেন। কিন্তু তারা হাজির হতে পারেন না প্রিয় মানুষ দাবি করা মৃত মানুষটিকে শেষ বিদায় জানাতে। এ তো ভণ্ডামিই। বাইরে-ভেতরে আলাদা দুটি রূপ থাকে ভণ্ডদের। নইলে যার জন্য মন কাঁদে তাকে সুযোগ-সময় থাকলে কেন দেখতে আসবে না?

ব্যস্ততার অজুহাত ক’বার দেয়া যায়? কার জন্য দেয়া যায়? প্রধানমন্ত্রীর সময় হয় লাকী আখন্দের মৃত্যুতে শোক জানানোর আমাদের তারকাদের হয় না। দীর্ঘদিন সবকিছুর আড়ালে থাকা মানুষদের প্রয়োজন বোধহয় প্রিয় সহকর্মী-ভাই কিংবা বন্ধুকে অশ্রুজলে শেষ বিদায় জানাতে, আমাদের তারকাদের কোনো টান তৈরি হয় না। মৃত্যুর কাছাকাছি থাকা প্রবীণ মানুষটিও পারেন চলে যাওয়া প্রিয়জনের মৃত মুখ দেখতে, আর চল্লিশ পার না হওয়া তারকারা অজুহাত দেন মৃত্যুকে এড়িয়ে চলেন বলে অগ্রজদের জানাজা শেষ বিদায়ে যান না।

খেটে খাওয়া লোকজন অফিসের সময় চুরি করে আসতে পারেন গানের প্রিয় মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে, তারা পারেন না দীর্ঘদিন তাদের সঙ্গে কাজ করা মানুষকে শেষবারের মতো দেখতে আসতে! এ দৈন্যতা নয় তো কী! এ ভেতরে ভেতরে মানবিকতার ক্ষয় ছাড়া আবার কী!

শহীদ মিনারে লাকীকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য হাজির হয়েছিলেন শোবিজের বেশ ক’জন তারকা। তাদের মধ্যে ছিলেন খুরশিদ আলম, নকীব খান, ফকির আলমগীর, তিমির নন্দী, আসিফ ইকবাল, কাজী হাবলু, ফুয়াদ নাসের বাবু, লাবু রহমান, শুভ্রদেব, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, গীতিকবি কবির বকুল, গীতিকবি-গায়ক তানভীর তারেক, জলের গানের সাইফুল জার্নাল, লেখক নাট্যকার শাকুর মজিদ, বেলাল খানসহ আরও কয়েকজন।

লাকী আখন্দের সমসাময়িক অনেকেই আসেননি যারা লাকীকে বন্ধু-প্রিয়জন দাবি করে ফেসবুক ভাসিয়ে দিচ্ছেন। আর নতুন প্রজন্মের তারকাদের উপস্থিতি তো ছিলই না বলা চলে। এ বিষয়ে গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘এটা আমাদের মানসিক দৈন্যতা। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিনে দিনে শূন্যে গিয়ে ঠেকছে। সবাই লোক দেখাতেই বেশি ভালোবাসে।’

গীতিকবি আসিফ ইকবাল বলেন, ‘যারা গান করে কিন্তু সুুযোগ ও সময় থাকা সত্ত্বেও লাকী ভাইকে দেখতে এলো না তারা দুর্ভাগা। একজন লাকী আখন্দ যুগে যুগেও জন্মায় না। কে এল কে এল না সেটা যারা এল না তাদের আফসোস। লাকী ভাই চিরকাল রইবেন বাংলা গানের বরপুত্র হয়ে। আমাদের অন্তরে।’

একজন সিনিয়র গানের মানুষ আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘না আসাই ভালো। এ প্রজন্মের তারকারা শোডাউনে অভ্যস্ত। দেখা গেল শেষ বিদায় জানাতে এসেও কেউ কেউ মৃতদেহের সঙ্গে সেলফি দিয়ে বসবেন। তবে জানেন কী, আমাদের মনুষত্যবোধ, সম্পর্কের প্রতি দায়বোধ মরে গেছে।’

আজ যারা গুণীদের দেখে আসতে পারে না, একদিন তাদের মৃত্যুর খবরও কাউকে স্পর্শ করবে না। এটাই নিয়ম। বললেন গীতিকবি-গায়ক তানভীর তারেক।

জানি আগামী বছরের এ দিনেও আবার ফেসবুক ভাসবে লাকী আখন্দের ছবিতে, গানের লাইনে; প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলিতে। নানা কর্পোরেট অনুষ্ঠানও হবে তাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু কেউ সময় পাবেন না এই এক বছরে লাকীর সমাধির পাশে বসে দু ফোটা অশ্রুজলে ‘মিস করছি আপনাকে’ বলার জন্য। বালাইষাট! লাকী ভালো থাকবেন গানপাগল বাঙালির হৃদয়ের গহীনে। তার জন্য চিরকাল শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুল ফুটাবে বাংলা গানের আঙ্গিনা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ