1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২৮ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণের একদিন পর বিদেশী গণমাধ্যমে বলা হয় ‘পাকিস্তানের অখন্ডতা থাকছে না’

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭
  • ৮৬ Time View

দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের অখন্ডতা থাকছেনা এবং সামরিক জান্তাদের হস্তক্ষেপের ফলে জিন্নাহর সৃষ্ট এই রাষ্ট্রটির মৃত্যু যে অনিবার্য তা একাত্তরের মার্চের প্রথম সপ্তাহেই ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছিল বিদেশী গণমাধ্যমে।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মাত্র একদিন পরে একাত্তরের ৮ মার্চ লন্ডনের ‘দ্যা ডেইলী টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘পুরাতন পাকিস্তানের ইতি’ শিরোনামে একটি রির্পোট করেন সাংবাদিক ডেভিড লুসাক ।
ঢাকা থেকে পাঠানো এই রির্পোটে বলা হয়, ‘অসংখ্য মানুষের রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ইসলামিক ধ্যান-ধারণার উপর ভিত্তি করে ভারত বিভাগ ও পাকিস্তানের সৃষ্টি এবং গত কয়েক যুগের অযোগ্য নেতা ও ক্ষমতালোভী সামরিক জান্তাদের হস্তক্ষেপের ফলে জিন্নাহর সৃষ্ট রাষ্ট্রটির মৃত্যু বরণ অনিবার্য।’
সংসদ অধিবেশন ডাকা, না ডাকা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ এর প্রতি ইংগিত করে তিনি লিখেন, ‘গত দুই সপ্তাহে রাজনীতি যেভাবে ঘোরপাক খেয়ে অগ্রসর হচ্ছে তাতে সাময়িকভাবে এটাকে ধামাচাপা দেয়া সম্ভব হলেও ১২০ মিলিয়ন পাকিস্তানীর বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের ৭০ মিলিয়ন শোষিত দীনÑদরিদ্র বাঙ্গালিদের ভবিষ্যত খুবই অন্ধকারাছন্ন।’
রিপোর্টে আরো মন্তব্য করা হয়, ‘পূর্ব অঞ্চলের স্বীকৃত জননেতা শেখ মুজিব কোন রক্তপাত ব্যতীত বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা দূরীকরণে সচেষ্ট হলেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মার্শাল ল’ কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট নাজেহাল হতে হচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম রাষ্ট্রের দুই নেতার মধ্যে যে কোন সমঝোতাই হোক না কেন, দুটি দেশকে একটি দেশে পরিণত করার সম্ভনা খুবই কম। পাকিস্তানের জন্য এটা নিরেট সত্যকথা ।’
সাত মার্চ সোহরাওয়াদী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণের মাত্র একদিন পরেই লুসাক লিখেন ‘এখন এটা দুটি জাতির দেশ। দুটি জাতির আচার-আচরণ, খাদ্য ও ভাষা এক নয়। তাই ধর্মের বন্ধন দুটি জাতিকে একত্রীভূত করে রাখতে পারেনি।’
‘কোন আধুনিক জাতি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও কৃষ্টিগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে কোন কর্মকান্ডই পরিপূর্ণভাবে কার্যকরী করা সহজ নয়। পাকিস্তানী নেতারা দেশে স্থায়ীভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে কারণে দেশটিকে (পাকিস্তান) দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত করা ব্যতীত এ সমস্যার কোন স্থায়ী সমাধান দেখা যায় না’ রির্পোটের এক অংশে ডেভিড লুসাক এই মন্তব্য করেন ।
পাকিস্তানের তখনকার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি লিখেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে মনে হয় নেতাদের পূর্বস্থানে ফিরে যাওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ। ১৯৪৭ সালের পর থেকে পশ্চিম পাকিস্থান পূর্ব পাকিস্তানকে প্রকতৃপক্ষেই একটি কলোনী হিসাবে ব্যাবহার করে আসছিল। বর্তমানে প্রথমবারের মত তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজেদের অধিকার ফিরে পেয়েছে বলে লুসাক তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন।
পূর্ব পাকিস্তানের তখনকার পরিস্থিতির জন্য লুসাক ইয়াহিয়া খানকে দায়ি করে লিখেন ‘জাতির এমন একটা সংকটময় মুহূর্তে ইয়াহিয়া খানের অসংযত কথা পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে তুলে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন পহেলা মার্চের পরিবর্তে ২৫ মার্চ রেডিওতে ঘোষণা, সকলের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করে।
তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্সের কাছে কিসিঞ্জারের ঘনিষ্ঠ সহকারি জোসেফ সিসকোর একটি বার্তায়ও পাকিস্তানের অখন্ডতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছিল। বার্তাটির উপসংহারে স্পষ্ট করে লেখা ছিল, পাকিস্তানের উভয় অংশের অখন্ড থাকার সম্ভবনা প্রায়ই শূন্য । দুইয়ের মধ্যে রিকনসিলিয়েশনের সুযোগ স্পষ্টতই মুছে গেছে। বিশিষ্ট সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের একটি লেখা থেকেও জানা গেছে, একাত্তরের ২ মার্চ সিসকো রজার্স এর কাছে এই বার্তাটি পাঠান।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক কবি আবুল মোমেন ডেভিড লুসাকের এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে ‘বাসস’কে বলেন, ‘এটা ঠিক একাত্তরের প্রথম দিক থেকে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হতে থাকে। বিশেষ করে ইয়াহিয়া খান জাতীয় সংসদের অধিবেশন বন্ধ করে দেয়ার পর সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন পহেলা মার্চের পরিবর্তে ২৫ মার্চের ঘোষণায় সন্দেহ আরো প্রকট হয়।
‘এর আগে পার্লামেন্ট বন্ধের ঘোষণায় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার পর সারা দেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এই অবস্থায় ৭ মার্চের জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর বাঙ্গালিদের ভবিষ্যত অর্থাৎ গন্তব্য স্পষ্ট হয়ে যায়’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আবুল মোমেন বলেন, সেই সময়ের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে অনেকেই প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। সাংবাদিক ডেভিড লুসাকের মন্তব্য পরবর্তি সময়ে সত্য প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লুসাক অভিজ্ঞ সাংবাদিক ছিলেন। তার পরিস্থিতি অনুধাবন করার ক্ষমতা ভালো ছিল।
শুধু লুসাক নয়, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে ও পরে বিদেশী অনেক সাংবাদিক বাংলাদেশ থেকে এ ধরনের রিপোর্ট করেছিলেন উল্লেখ করে আবুল মোমেন বলেন, তাদের এসব রিপোর্টে বিদেশে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা যেমন জোরালো হয়েছে তেমনি আন্দোলনরত বাঙ্গালিরাও উদ্দীপ্ত হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ