1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৪ অপরাহ্ন

মিশন বাস্তবায়নে ভাড়া করা হয় পাঁচ অস্ত্র

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১৪ Time View

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অন্তত পাঁচটি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ভাড়া করা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি অস্ত্র পালানোর সময় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ সঙ্গে নিয়ে যায়। বাকি তিনটি অস্ত্র এক বন্ধুর মাধ্যমে তার বাবা হুমায়ুন কবিরের কাছে পাঠিয়েছিল পলাতক ফয়সাল। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি ম্যাগাজিন ও গুলির ব্যাগের সূত্র ধরে তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, মাথায় গুলি লাগা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল বুধবার সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান দেশটিতে চিকিৎসাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদিকে দেখতে গিয়েছিলেন। পরে এদিন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেন এবং হাদির চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন। তিনি জানান, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে হাদির জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও অভিযানে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, হাদিকে গুলি করার পরপরই আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় গিয়ে ওঠে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল। ব্যাগের ভেতর অস্ত্র থাকার বিষয়টি জানত তার বাবা, মা, স্ত্রী ও শ্যালক। অস্ত্রভর্তি ব্যাগটি রাখা হয় বাবার জিম্মায়।

গত মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা স্বীকার করেন, অস্ত্রগুলো গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব পুকুর থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করে।

র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার করা অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অস্ত্রের ফরেনসিক পরীক্ষায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, অপারেশন শেষে ফয়সাল আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় ফিরে আসে এবং তার বাবার কাছ থেকে অস্ত্রভর্তি ব্যাগ লোকানোর প্রস্তুতি নেয়। ওই সময় বাসায় অপরিচিত দুজন লোক গেলে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মনে করে ভয়ে অস্ত্রসহ ব্যাগটি রান্নাঘরের জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়া হয়।

পরে জানা যায়, তারা আসলে বাসা ভাড়া নিতে এসেছেন। তখন ফয়সালের স্ত্রী নিচে গিয়ে ব্যাগটি দ্রুত বাসায় নিয়ে আসেন। তবে তখন দুটি ম্যাগাজিন ও গুলির ব্যাগ পড়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র আরও জানায়, ব্যাগটিতে তখনো পাঁচটি অস্ত্র ছিল। ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময় নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ফয়সাল ও মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ দুটি অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে যায়। বাকি তিনটি অস্ত্র ব্যাগে ভরে শ্যালক সিপুর মাধ্যমে এক বন্ধুর কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সেই বন্ধু নরসিংদীর গ্রামের বাড়ির পুকুরে অস্ত্রগুলো ফেলে দেওয়ার সময় দুটি ম্যাগাজিন না থাকার কথা জানায়।

এরপর বিষয়টি সিপু ফয়সালকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে জানায়। ফয়সাল তখন সিপুকে মেসেঞ্জারে কল করে ফোনটি স্ত্রীর কাছে দিতে বলেন। এরপর তারা বাসার নিচে গিয়ে ম্যাগাজিনগুলো খুঁজতে যায়।

ভুয়া নম্বর প্লেট ও মোটরসাইকেল উদ্ধার: গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওসমান হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত ভুয়া নম্বর প্লেটসহ মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি)। আগারগাঁওয়ের বনলতা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ির নিচতলার পার্কিং থেকে মোটরসাইকেল ও হেলমেট উদ্ধার করা হয়। পরে ভুয়া নম্বর প্লেটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ম্যানহোলের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়।

এর আগে, মোটরসাইকেলটির মালিক সন্দেহে আব্দুল হান্নান নামে এক ব্যক্তিকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তবে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তদন্ত সূত্র জানায়, মোটরসাইকেলটির মালিকানা শনাক্তে নিবিড় তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, এর প্রথম মালিক ছিলেন আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। এরপর শহিদুল, রাসেল, মার্কেটপ্লেস, ওবায়দুল ইসলাম, আনারুল এবং ওবায়দুলের হাত ঘুরে শুভ নামে একজনের কাছে মোটরসাইকেলটি যায়। মোট আটজনের হাতবদলের পর ফয়সাল করিম মাসুদের সহযোগী মো. কবিরের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মাইনুদ্দিন ইসলামের নামে এটি কেনা হয়।

গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট রোডে ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাওয়ার সময় শরিফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে মোটরসাইকেল আরোহী এক দুর্বৃত্ত। পরে পুলিশ তার নাম ও ছবি প্রকাশ করে জানায়, সন্দেহভাজন দুর্বৃত্তের নাম ফয়সাল করিম মাসুদ। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চললেও জানা গেছে, সে এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

ঘটনার পর হাদিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠায়। গতকাল পর্যন্ত তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

হাদির স্বাস্থ্য: গতকাল ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়, গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান বিন হাদির মস্তিষ্ক সচল করতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। তবে অস্ত্রোপচারের আগে তার স্বাস্থ্য পুরোপুরি স্থিতিশীল হওয়া জরুরি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শরীর ও মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপন করাই এখন প্রধান লক্ষ্য। মস্তিষ্ক ছাড়া তার সব অঙ্গ সচল রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। সেখানে আরও বলা হয়, তার চিকিৎসা সিঙ্গাপুর অথবা যুক্তরাজ্যে হতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ