1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৪ অপরাহ্ন

অবশেষে স্বীকারঃ ঔদ্ধত্যের অবসান, মুজাহিদই সেই যুদ্ধাপরাধী!

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫
  • ১৩১ Time View

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গৌরবের ইতিহাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের গণহত্যার ইতিহাস। নিরীহ বাঙালির ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করার জঘণ্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধের ইতিহাস। একইসঙ্গে কলঙ্কের ও গৌরবের এ ইতিহাস অস্বীকার করেছিলেন একজন। তিনি হলেন জামায়াতের সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, যিনি নিজেই মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী আর গণহত্যার মাস্টারমাইন্ডদের অন্যতম।

দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই, কোনো স্বাধীনতাবিরোধী নেই বলে দম্ভোক্তি করেছিলেন তিনি, যিনি ছিলেন দেশের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের একজন।

আদালতের সুর্নিদিষ্ট কোনো প্রমাণসাপেক্ষ নির্দেশনা বা নিজেদের অপকর্ম অস্বীকার করে আসার ধারাবাহিক প্রবণতাই তাকে এ ঔদ্ধত্যের সাহস যুগিয়েছিল।

অবশেষে অবসান হলো তার সেই ঔদ্ধত্যের। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পেয়ে আদালত আগেই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। শনিবার (২১ নভেম্বর) নিজেই সেই অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলেন তিনি।

কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর লিখিত আবেদনে নিজেকেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে লিখিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন মুজাহিদ, যা এর আগে ফাঁসি কার্যকর হয়ে যাওয়া আর কোনো যুদ্ধাপরাধী করেননি।

এখন রাষ্ট্রপতি তার আবেদন খারিজ দিলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে সরকার, যেটি সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।

সেদিন ছিল ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর। জামায়াতের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপ শেষে গাড়িতে ওঠার আগে ইসির সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে মুজাহিদ দেখিয়েছিলেন সেই ঔদ্ধত্য। যা আগে কেউ কখনো করার সাহস করেননি।

সেদিন তিনি তাচ্ছিল্য করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নাই। এটা তাদের কল্পনাপ্রসূত, নিজের বানোয়াট একটা উদ্ভট চিন্তা। বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নাই। তখন (৭১ সাল) থেকেই নাই, এখনো নাই। বাংলাদেশে কোনো স্বাধীনতাবিরোধী নাই। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কখনো ছিলো না, এখনো নাই।

এ সময় তিনি ঠোঁট বাকিয়ে মাথা ঝাঁকাচ্ছিলেন আর কথাগুলো বলছিলেন।

২০০৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ শুরু করে ইসি। তারই ধারাবাহিকতায় ২৫ অক্টোবর জামায়াতের সঙ্গেও সংলাপ করে ইসি। এর আগে সংলাপে অংশ নিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), গণতন্ত্রী পার্টি ও জাসদ (রব) একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানায়। তারা জামায়াতের নির্বাচনী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ বাদ দেওয়ারও দাবি জানান।

দলগুলোর ওই দাবির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মুজাহিদ সেদিন ঐভাবে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা কী ছিল সেটা আপনারা খোঁজ করে দেখুন, মূল্যায়ন করুন।

তার ওই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে গোটা জাতি সেদিন হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। সমালোচনার ঝড় ওঠে সারাদেশে। তবে সে সময় চারদলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপি টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। যে দলটির নেতৃত্বে গঠিত সরকারেরই সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন একাত্তরের আলবদর প্রধান মুজাহিদ।

মুজাহিদ ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিলেন সেনা সমর্থিত সরকারের সময়। এরপর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা নতুন প্রজন্মের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (প্রথম ট্রাইব্যুনাল)। এরপর ২০১২ সালে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল), যে ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ হয় মুজাহিদের।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুক্তিযদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সাম্প্রদায়িক হত্যাযজ্ঞের দায়ে মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। সে রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টম্বর। এরপর ০১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করলে কারা কর্তৃপক্ষ মুজাহিদকে ওই পরোয়ানসহ রায়ের কপি পড়ে শোনায়।

মুজাহিদ চূড়ান্ত ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন ১৪ অক্টোবর।

বুধবার (১৮ নভেম্বর) একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে তার আবেদন খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

চূড়ান্ত রায়ের পর মুজাহিদের একটি মাত্র পথই খোলা ছিলো। আর তা হলো দোষ স্বীকার করে নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। কেননা, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এছাড়া আর কোনো পথ ছিল না তার।

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরে মাথানিচু করে সেপথেই গেলেন তিনি। মূলত এর মধ্য দিয়েই মুজাহিদের সব ঔদ্ধত্যের অবসান হলো। যে যুদ্ধাপরাধীদের অস্তিত্বহীনতার কথা তিনি বলেছিলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, তিনি নিজেই সেই যুদ্ধাপরাধী।

ইতোমধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ মুজাহিদকে রিভিউ আবেদনের ১৩ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শুনিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। সরকারের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) নির্বাহী আদেশ পেয়ে ফাঁসির মঞ্চ ও জল্লাদদেরও প্রস্তুত রেখেছে। ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য স্বাস্থ্যগত পরীক্ষাও (মেডিকেল চেকআপ) সম্পন্ন হয়ে গেছে তার।

ফলে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদি ঘটনার দায়ে ফাঁসির দড়িতেই ঝুলতে যাচ্ছেন মুজাহিদ।

মুজাহিদ ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল আলী পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। যিনি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির ফরিদপুর জেলা শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নকালে ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগ দেন মুজাহিদ। ১৯৬৮-৭০ পর্যন্ত তিনি জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের শেষ তিনমাস পুরো পাকিস্তানের সভাপতি হন। আর সেই পদাধিকার বলেই আলবদর বাহিনীর নেতৃত্ব দেন মুজাহিদ। আর এরপর রচনা করেন বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের মতো পৃথিবীর ইতিহাসের নারকীয়তম এক নৃশংস ইতিহাস।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ