1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

কলকাতায় তৃতীয় লিঙ্গের অভিনব দুর্গাপূজা

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫
  • ১১৮ Time View

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, ‘থিম’ বা নির্দিষ্ট বিষয়-ভাবনাকে কেন্দ্র করে পূজার চল অনেকদিনের। 1প্রতিমা কিম্বা মণ্ডপ- এসব নিয়েও প্রতিযোগিতার কমতি নেই। কিন্তু উত্তর কলকাতার ছোট্ট একটি ক্লাব এবার যেভাবে পুজোর আয়োজন করেছে তা যেন অভিনবত্বের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।
সাধারণত হিজড়া সম্প্রদায়ের যে মানুষেরা পূজায় অংশ নিতে পারে না সেই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের, এবার পুজোয় সামিল করেছে ওই ক্লাবটি। আর প্রতিমাও তৈরি হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী-অর্থাৎ শিব আর দুর্গাকে একই মূর্তিতে পূজা করা হচ্ছে ‘অর্ধনারীশ্বর’ হিসেবে।
পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজায় অভিনবত্বের প্রতিযোগিতার মধ্যেই উত্তর কলকাতার একটা ছোট্ট ক্লাবের দূর্গাপুজো যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা হয়ে উঠেছে সচেতনতার উদাহরণ। ২৭ বছর ধরেই জয় মিত্র স্ট্রিটের ওই পূজ হচ্ছে সাদামাটাভাবেই। পূজাটির প্রধান উদ্যোক্তা যেমন ছিলেন অলোক গোস্বামী, তেমনই এত বছর ধরেই সঙ্গে থেকেছেন পাড়ারই মানুষ ভানু নস্কর। ভানু নস্কর একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।
গোস্বামীর কথায়, ভানু যেমন প্রথম থেকেই আছে, ওর তৃতীয় লিঙ্গের অনেক বন্ধুরাও নিয়মিতই আসে পুজোতে। আমাদের কখনই ওদের আলাদা মনে হয় নি। তাই ওরা যখন এবারে প্রস্তাব দিল যে ওরাও আমাদের পুজোতে যুক্ত হতে চায়, আমাদের আলাদা করে কোনও কিছু মনে হয় নি।
ভানু নস্কর বলছিলেন, আমাদের তো পূজাগুলোতে ব্রাত্য করে রাখে সবাই। অনেকেই দুঃখ করত যে আমি যেমন পাড়ার পূজার কাজে জড়িত, সে রকম সুযোগ কেউ পায় না। তাই আমরা নিজেরা একটা পুজো করার কথা ভাবছিলাম। বেশ কয়েক জায়গায় চেষ্টা করেছিলাম এ বছর,। কিন্তু কেউই আমাদের নিতে চায় নি। শেষমেশ আমি আমার পাড়ার ছেলেদেরই বলি যে আমরা পূজায় যুক্ত হলে ওদের আপত্তি হবে কিনা।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হোক, সমকামী হোক, আমাদের কিছু যায় আসে না। সরকার ওদের স্বীকৃতি দিয়েছে, সাধারণ মানুষ কী বলল, কী সমালোচনা করল, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। তাই ওই প্রস্তাব পেয়েই আমরা এককথায় রাজী হয়ে যাই যে ওরাও আমাদের পুজোতে যোগ দিক, বলছিলেন পাড়ার বাসিন্দা প্রমোদ সাউ।
একদিকে যেমন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পূজায় যোগ দেওয়াটা সমাজ সচেতনতার একটা নতুন মাত্রা, তেমনই এই পাড়ার প্রতিমাও অভিনব।
অর্ধনারীশ্বর মূর্তিতে দূর্গাপূজা হচ্ছে সেখানে এবার- প্রতিমার অর্ধেকটা শিব আর বাকি অর্ধেকটা দূর্গার।
তৃতীয় লিঙ্গের একজন, প্রীতি সেনগুপ্তা দিল্লি থেকে এসেছেন পূজায় যোগ দিতে। তিনি বলছিলেন, একই অঙ্গে নারী আর পুরুষ শক্তির যে রূপ, সেটা যে আমাদের পূজাতে থাকবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক। আমরা এটাই বিশ্বাস করি যে আদি শক্তি হল নারী আর পুরুষ।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে পুজো বা অভিনব প্রতিমা তৈরিতে যেমন পাড়ার বড়দের কোনও আপত্তি হয় নি, তেমনই এই প্রতিমা খুব পছন্দ হয়েছে পাড়ার বাচ্চাদেরও।
পাড়ার ক্লাব যদিও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পূজার উদ্যোগে সামিল করে বা অর্ধনারীশ্বর মূর্তি গড়তে কোনো দ্বিধা করেনি, তবে সমালোচনাও শুনতে হচ্ছে অনেকের কাছে।
পাড়ার কিছু লোক বলেছে এরকম ঠাকুর তোরা করলি কেন? উত্তরে আমরা বলেছি আমাদের ঠিক মনে হয়েছে বলে করেছি, বলছিলেন ক্লাবের প্রধান উদ্যোক্তা অলোক গোস্বামী।
আসলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা ইনভল্ভড্ বলেই এসব নিয়ে এত চর্চ্চা হচ্ছে।
প্রীতি সেনগুপ্তার কথায়, বারোয়ারী দুর্গাপূজায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামিল হওয়াটা আসলে তাদের সমাজের মূলধারায় আরও বেশি করে মিশে যাওয়ার একটা প্রক্রিয়া।
ছোট একটা পাড়ার পূজা দিয়ে যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে এ বছর, আগামী দিনে হয়তো আরও অনেক পাড়া, অনেক পুজো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বারোয়ারী পুজোয় সামিল করবেন – এমনটাই আশা ভানু নস্কর বা প্রীতি সেনগুপ্তাদের সঙ্গেই অলোক গোস্বামী বা প্রমোদ সাউদের। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ