ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধ মিরপুরে

ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধ মিরপুরে

টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিনেই সিটি ব্যাংক থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের কোন টিকিট অবশিষ্ট নেই, বিক্রি হয়ে গেছে! বিকল্প পথে টিকিট সংগ্রহের জন্যও দর্শকরা চেষ্টা কম করেনি। যে কোন মূল্যে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ তাদের দেখতেই হবে।

এ থেকে বোঝার বাকি থাকে না উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি দল রোববার শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের লিগ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে। যাকে ঘিরে দুই ভাগ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার শত কোটি মানুষ।

ভারত-পাকিস্তানের খেলা নিয়ে মানুষের আগ্রহের কারণও আছে। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত ক্রিকেট খেলা হয় না। আইসিসি বা এসিসির টুর্নামেন্টগুলোতেই কেবল তাদের দেখা হয়। ২০০৭ সালের পর থেকে তাদের মধ্যে কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয় না। ভারতে গিয়ে সর্বশেষ সিরিজটি খেলে ছিলো পাকিস্তান। অবশ্য পরের বছর এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে গিয়েছিলো ভারত।

ওই বছর মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি। আর ২০০৯ সালের ৩ মার্চ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ওপর লাহোরের লিবার্টি চত্বরে বন্দুক হামলার পর পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নির্বাসিত। যদিও ২০০৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত কিট প্লাইকাপ ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট, ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপ এবং ২০১১ সালে বিশ্বকাপে দেখা হয় দুই দলের। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচটি ভারতে গিয়েই খেলে ছিলো পাকিস্তান। ওই সময়ে দুই দেশের যে সাতটি ম্যাচ হয়, তাতে ভারত জিতে চারটিতে। আর পাকিস্তান তিনটিতে।

আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ১২৩ বারের মুখোমুখিতে বেশি জয় পাকিস্তানের। ৬৯ ম্যাচে জয় আছে তাদের। ভারতের জয় ৪৭ ম্যাচে।

পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকলেও প্রায় এক বছর হয় একে অন্যের মুখোমুখি হয়নি। এই সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দারুণ খেলেছে পাকিস্তান। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত অতটা ভালো অবশ্য খেলতে পারেনি। পরিসংখ্যান থেকে রোববারের খেলায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কে ফেভারিট তা নির্ণয় করা কঠিন।

ক্রিকেট দুই দেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণেরও একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। মাঠের খেলা মাঠে থাকে না। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা হয়। দুই দেশের জনগণের মধ্যেও তা প্রবাহিত হয় মিডিয়ার মাধ্যমে। ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও অন্যরকম আবেগ নিয়ে খেলেন।

এত কিছুর পরেও ভারতের জন্য খেলাটি বাঁচামরার লড়াই। এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলতে হলে তাদেরকে জিততেই হবে। পাকিস্তানের কাছে হেরে যাওয়া মানে সুতো ঝুলে থাকবে তাদের ফাইনাল খেলা। ২০ মার্চ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ফলাফলের ওপর নির্ভর করতে হবে তাদেরকে। ভারতের জন্য স্বস্তির বিষয় শচীন টেন্ডুলকার তার শতকের শতক করে ফেলেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে বরাবরই তার পারফরমেন্স ভালো। গৌতম গম্ভীর, বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের নিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইন অনেক শক্তিশালী। দুর্বলতা যা বোলিংয়ে।

পর পর দুই ম্যাচে জয় এবং বোনাস পয়েন্ট থাকায় পাকিস্তান অনেক নির্ভার। চাপ মুক্ত থেকেই খেলতে পারবে ৯২’র বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। পাকিস্তান দলটি আবার পরিপূর্ণ ক্রিকেট খেলছে। পেস বা স্পিন উভয় বিভাগে তাদের বোলাররা দারুণ ফর্মে। ব্যাটে যে খুব খারাপ হচ্ছে তাও না। অতএব ভারতকে জিততে হলে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি ভালো খেলতে হবে।

টেন্ডুলকার ভারত পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা সব সময় চ্যালেঞ্জিং। আমরা তাদের সঙ্গে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।’

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার দারুণ এক সুযোগ পাকিস্তানের সামনে। যদিও তাদের সহ-অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজের প্রতিশোধ কথাটি নিয়ে আপত্তি আছে। তিনি বলেন, ‘আগে যা ঘটেছে আরেকবার তা জাতিকে উপহার দিতে চাই না। এশিয়া কাপে তৃপ্তিদায়ক সমাপ্তি চাই আমরা।’

খেলাধূলা