দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে পাথর বিক্রি ও উৎপাদনে মন্থরতা দেখা দেয়ায় খনি সচল রাখতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
খনি সূত্রে জানা গেছে, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি ইয়ার্ডে প্রায় ৮০ কোটি টাকা মূল্যের ৬ লাখ টনেরও বেশী উন্নত মানের গ্রানাইট পাথর মজুত রয়েছে। কিন্তু এই পাথর বিক্রিতে আশানুরুপ অগ্রগতি নেই। এছাড়া পাথর বিক্রিতে ধীর গতির কারণে অর্থ সংকটে পড়েছে খনি কর্তৃপক্ষ। অর্থ অভাবে সময়মত প্রয়োজনীয় খননযন্ত্র আমদানি করতে না পারায় পাথর উৎপাদন দুই তৃতীয়াংশেরও বেশী হ্রাস পেয়েছে। ফলে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি গত পহেলা আগস্ট থেকে ৩ শিফটের মধ্যে ২ শিফটের কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এতে সাড়ে ৩ শত শ্রমিক সাময়িকভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় খনিকে সচল রাখতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
আরো জানা যায়, মধ্যপাড়া খনির পাথর মানসম্পন্ন ও উৎকৃষ্ট মানের হলেও একটি বিশেষ গোষ্ঠী বিদেশ থেকে পাথর আমদানিতে আগ্রহী। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার করার সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও তা মানছে না তারা। নাম প্রকাশ না করার স্বত্তে মধ্যপাড়া খনির এক কর্মকর্তা জানান, পাথর সংকটের কারণে ঢাকা চট্টগ্রাম মহসড়কে চার লেন প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এরপরও সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি চক্রের দৌরাত্মের কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়ার গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করছে না। বিদেশ থেকে পাথর আমদানির পায়তারা করছে তারা।
এদিকে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে ভূগর্ভে নতুন স্টোপ বা কূপের ধাপ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানির তাগিদ দিয়ে আসছে খনি কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু পাথর বিক্রি না হওয়ায় একদিকে অর্থসংকট, অপর দিকে তৎকালীন দায়িত্বরতদের অদক্ষতায় গত জুলাই মাস পর্যন্ত তা আমদানি করা যায়নি। এতে নতুন স্টোপ উন্নয়ন করতে না পারায় এবং বর্তমান উৎপাদনশীল ৫ ও ৬ নং স্টোপে উত্তোলণযোগ্য পাথরের মজুত প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আসায় প্রতিদিন ৩ শিফটের জায়গায় ২ শিফট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় জিটিসি। এর ফলে প্রতিদিন সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টন পাথরের পরিবর্তে গত পহেলা আগস্ট থেকে উত্তোলণ করা হচ্ছে মাত্র দেড় হাজার টন পাথর।
অপরদিকে ২ শিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাড়ে ৩০০ শ্রমিককে অনির্দিষ্ট কালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জিটিসিতে কর্মরত প্রায় ৭০ জন বিদেশী খনি বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তার মধ্যে ৬০ জনই নিজ দেশে ফিরে গেছেন। এ অবস্থায় খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রো বাংলা গত ২২ জুলাই মধ্যপাড়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবুল বাশারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। এছাড়া বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির এমডি আমিনুজ্জামানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মধ্যপাড়া খনির এমডির দায়িত্ব দেয়। দায়িত্ব পেয়েই এমডি আমিনুজ্জামান অর্থ সংকট কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে গত ১৯ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে এক সভায় মধ্যপাড়া খনিকে ঋণ হিসাবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কো. লি. এর এমডি আমিনুজ্জামান জানান, পাথর বিক্রি বাড়াতে সর্বাত্বক চেষ্টা চলছে। পাথর উত্তোলণ যাতে বন্ধ না হয় সে জন্য শীঘ্রই প্রয়োজনীয় খননযন্ত্র আমদানী করা হবে। এর মাধ্যমে খনিতে কাজের গতিশীলতা ফিরে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।