বাংলাদেশ নৌবাহিনীর (বিএন) নতুন জাহাজের কমিশনিং ও উদ্বোধন উপলক্ষে দিনব্যাপী সফরে আজ রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা যাচ্ছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সাধারণ
নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে পরপর দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটিই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম খুলনা সফর। তিনি সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি খুলনা সফর করেন। নৌবাহিনীর ৩টি জাহাজ কে জে আলী, সন্দ্বীপ এবং হাতিয়া’র কমিশনিং অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে মংলা যাবেন। অবশ্য বিকেলেই প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা দু’টি ল্যান্ডিং ক্রাফট ট্যাঙ্ক এলসিটি-১০৩ এবং এলসিটি-১০৫ উদ্বোধন করবেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর খুলনা সফরের প্রাক্কালে খুলনায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও সাদা পোশাকে নিরাপত্তা সদস্য, ২ হাজার পুলিশ সদস্য এবং র্যাবের ৮টি বিশেষ টিম প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। কেএমপি ডেপুটি কমিশনার শেখ মনিরুজ্জামান মিতু এ কথা জানান।
আমাদের খুলনা প্রতিনিধি জানান, খুলনা শিপইয়ার্ডে (কেএসওয়াই) রবিবার দুটি ‘লার্জ পেট্রোল ক্র্যাপস্ট’ (এলপিসি) নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এটাই হবে দেশে নির্মিত প্রথম যুদ্ধজাহাজ। আশা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্মাণ কাজের (কেল লেয়িং) উদ্বোধন করবেন। প্রসঙ্গত কেএসওয়াই এর আগে ৫টি পেট্রোল ক্র্যাপস্ট নির্মাণ করেছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কেএসওয়াইতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য নির্মিত দুটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ সংযুক্ত (কমিশন) করবেন। তিনি বাগেরহাটের মোংলায় দিগরাজ নেভাল জেটিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ কে জে আলী, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, এলসিটি-১৩০ ও এলসিটি-১০৫ কমিশনিং ও এ্যাটাচিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বৃহৎ পেট্রোল কার হিসেবে এলপিসি দুটি ৭৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকায় নির্মিত হবে এবং তা ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কেএসওয়াই’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান তারেক বলেন, সর্বোচ্চ ২৫ নট গতি ও ৬৭৪ টন পূর্ণ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ এলপিসি ০১ঢ৭৬.২ এমএম সিঙ্গেল ব্যারেল গান, ০১ঢ৩০ এমএম সিঙ্গেল ব্যারেল গান, ০২ঢ ট্রিপল টিউবার ট্রাকিং রাডার, দিন ও রাত নির্ণয়ের একটি যন্ত্র এবং একটি হল মাউন্টেড সোনার সজ্জিত থাকবে।
হাসানুজ্জামান বলেন, এই এলপিসি’র শত্রু সাবমেরিন ডিটেক্ট, আইডেন্টিটিফাই, ট্র্যাক, এনগেজ ও আক্রমণের সক্ষমতা থাকবে। এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে এর কোস্টাল পেট্রোল ও কনস্টেবুলারী ডিউটির সক্ষমতা থাকবে। এ ছাড়া ৬৪.২ মিটার দীর্ঘ এই এলপিসি ৭০ জন ক্রুসহ ১০ দিন সাগরে থাকতে পারবে। গত বছরের ৩০ জুন এলপিসি দুটি নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চায়না ওয়্যারশিপ বিশেষজ্ঞরা এ নির্মাণ কাজে কারিগরি সহায়তা দেবে। এর ডিজাইন চূড়ান্ত হয়েছে এবং ইঞ্জিনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী চীন থেকে আমদানি করা হবে। নির্মাণ কাজে কমপক্ষে ২৫০ জন শ্রমিক ও প্রকৌশলী অংশ নেবে।
খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর এস ইরশাদ আহমেদ বলেন, দেশে তৈরি এই যুদ্ধজাহাজ বিদেশ থেকে আমদানিকৃত যুদ্ধজাহাজের তুলনায় অনেক সক্ষমতাসম্পন্ন হবে। কএসওয়াই’র এলপিসিতে বড় করভেট্টিজ-এর অধিকাংশ সুযোগ-সুবিধাও থাকবে। এটি শত্রু সাবমেরিন চিহ্নিত ও তাদের ওপর আক্রমণে সক্ষম হবে। এর আগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ২০১৩ সালে কেএসওয়াইতে এক অনুষ্ঠানে দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি ৫টি পেট্রোল ক্র্যাপস্টের উদ্বোধন করেন। তিনি ২০১১ সালের ৫ মার্চ এ ৫টি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।