জাহাজ ভাঙা শিল্পকে বিকশিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন-২০১৫ শিগগিরই পাস হতে হচ্ছে।
গত ২৭ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৫’র খসড়া’র নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সরকার দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পের উন্নয়নে নতুন আইন ও একটি ‘জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বোর্ড’ গঠনের মাধ্যমে এই শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।এ ব্যাপারে দ্রুত কাজও হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
সূএ জানায়, জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই ‘বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৫’র পাস করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইয়াসমিন সুলতানা জানান, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৫’র এর খসড়া কিছু সংশোধনীসহ পরীক্ষা করে তা আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরিবেশ সম্মত কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য এই আইন করা হচ্ছে। এ আইন বাস্তবায়ন হলে যত্রতত্র স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত জাহাজ এনে তা ভাঙা যাবে না এবং পরিবেশ সম্মত কর্মপরিবেশও নিশ্চিত করা হবে।
গত ২৭ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাসকৃত খসড়া আইনে বলা হয়, নিয়ম না মানলে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা জরিমানা ও একবছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া জাহাজ আমদানি, ইয়ার্ড নির্মাণ ও আমদানিতে মিথ্যা তথ্য দিলে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য জাহাজ আমদানিতে মিথ্যা তথ্য দিলে পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা, বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
বোর্ডের অনুমতি ছাড়া ইয়ার্ড নির্মাণ করলে ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা বা একবছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে। এছাড়া বোর্ডের কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের সময় কেউ যদি অসহযোগিতা করেন সেক্ষেত্রে পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
আগে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি দেখভাল করলেও আইনের অধীনে একটি বোর্ড গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই বোর্ড থাকবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন। এ বোর্ডই সকল বিষয়ে দেখভাল করবে।
এতে মন্ত্রণালয়, সংস্থা, শিপ রিসাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এই বোর্ডে থাকবেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদাধিকার বলে এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন । সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবেন সরকারের নিয়োগ পাওয়া একজন মহাপরিচালক, যিনি হবেন বোডের্র প্রধান নির্বাহী। এই বোর্ড ইয়ার্ড স্থাপনের অনুমতি ও অনাপত্তিপত্র দেবে। রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি প্লান তৈরি করবে।
বাংলাদেশ পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিবেশ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন বলেন, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বার্থসংরক্ষণ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের দূষণ রোধ করতে সরকার আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা খুবই প্রশংসনীয়।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১১ সালে বর্তমান ‘শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং রুলস’ জারি করা হয়েছিল। পরে সরকার এই শিল্পের বিকাশে এটার আইনি কাঠামো আরও শক্তিশালী করা দরকার বলে মনে করে ২০১১ সালের মার্চে জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙা ও জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে।
বাংলাদেশের ইস্পাত কারখানাগুলোর কাঁচামালের বড় একটি অংশ এই জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকেই আসে। আগে বলা হতো শিপ ব্রেকিং। কিন্তু এখন বলা হয় শিপ রিসাইক্লিং। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ এনভায়রমেন্টাল ‘ল’ ইয়ার্স এসোসিয়েশন (বেলা)‘র নির্বাহী পরিচালক রেজোয়ানা হাসান বলেন, সরকার জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের জন্য যে আইনটি প্রণয়ন করছে তা একটি ভালো উদ্যোগ কিন্তু আমরা অনেক চেষ্টা করেও খসড়ার কোন কপি সংগ্রহ করতে পারছি না। আইনটি পাস করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে ।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স মালিক সমিতির সভাপতি আবু তাহের বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার ২০১১ সালে বর্তমান ‘শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং রুলস’ জারি করেছিল । যা আইনে পরিণত করতে যাচ্ছে। এই আইনের ব্যাপারে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। এ ব্যাপারে আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনাও করা হয়েছে।