1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৭ অপরাহ্ন

প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মাতলুবের গল্প

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
  • ১৮৩ Time View

করতালি বা প্রচলিত ভাষায় হাত-তালি দিতে দুটি হাতই লাগে। মোটর সাইকেল চালাতেও দুই হাত ব্যবহার করতে হয় মানুষকে। ক্রিকেট খেলতেও দুই হাতের উপযোগীতা অনস্বীকার্য।aisudjmas;l;

পাকিস্তানের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটার মাতলুব কোরেশির কাছে অবশ্য দুই হাতের তত্ত্ব পুরোই অচল। তার একটি হাতই অবলীলায়, অবিশ্বাস্যভাবে দুই হাতের কাজ করে যায়। এক হাতেই বিশ্ব জয়ের পথে নেমেছেন পাকিস্তানের এই তরুণ। মাত্র ছয় বছর বয়সে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান হাত হারিয়েছেন। বাঁহাতি মাতলুব পাকিস্তানের শারীরিক প্রতিবন্ধী দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান।

মাতলুবের মতো এক হাত হারানো লোক অনেক আছেন পৃথিবীতে। কিন্তু পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম উল হকের শহর মুলতানের ছেলে মাতলুবের বিশেষত্ব তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দুনিয়ার প্রথম সেঞ্চুরিয়ান।

তার বাঁ হাতের খেল’ই প্রতিবন্ধী ক্রিকেটকে দেখিয়েছিল প্রথম তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ২০১২ সালে দুবাইয়ে ইতিহাসের প্রথম প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১০ বলে ১২টি চারে অপরাজিত ১১৩ রান করেছিলেন মাতলুব। আসামান্য এক রেকর্ডের অধিকারী এই পাকিস্তানি ব্যাটসমান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওই সিরিজটাও জিতেছিল পাকিস্তান।

শারীরিক প্রতিবন্ধীদের আইসিআরসি আন্তর্জাতিক টি-২০ সিরিজ খেলতে ঢাকায় এসেছেন মাতলুব। বুধবার বিসিবি একাডেমি ভবনে সাক্ষাতকারে ২৬ বছর বয়সী এই পাকিস্তানি ক্রিকেটার শুনিয়েছেন, তার কীর্তির গল্প। ঘাতক ট্রাকের পেষণে ডান হাত হারিয়ে ফেলার নির্মম কাহিনী।

দীর্ঘদেহী, মার্জিত, আর্কষণীয় মুখায়বের এই তরুণের ডান হাত হারানোর কাহিনী বড্ড পীড়াদায়ক। দুর্ঘটনার কথা জানাতে গিয়ে ২০ বছর আগের সেই ভয়াবহতার ছবিও যেন ফুটে উঠছিল তার চোখে-মুখে। ভাবলেশহীন কন্ঠেই জানালেন, “একদিন স্কুল শেষে সামনের দোকানে কিছু খেতে গেলাম। খাওয়া শেষ করে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখনই একটা ট্রাক মোড় ঘুরে ওদিকে আসছিল। ওটার বাম্পারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আমি নিচে পড়ে যাই। ট্রাক আমার হাতের ওপর দিয়ে চলে যাই। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জোড়া লাগাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত হাত কেটে ফেলতে হয়।”

ছয় বছর বয়সেই নিয়তির কারণে কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়তে হয় মাতলুবকে। কিন্তু ক্রিকেট প্রেম তাকে অনেকটাই ভুলিয়ে দিয়েছে জীবনে পোড় খাওয়ার ঘটনাকে। ক্রিকেট ঝোঁকটা ছোটবেলা থেকেই ছিল। পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকারদের দেখেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়েছিলেন। মাতলুব বলেন, “ওই সময় এত কিছু বুঝতাম না। তবে ১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকে খেলার প্রতি আগ্রহ জšে§। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসদের দেখে। কিন্তু তখন পাড়া-মহল¬ার গলিতে খেলতাম। আমাদের প্রতি কোনো সম্মান দেখাতো না কেউ। দামও ছিল না। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট শুরু হওয়ার পর আমাদের অনেক মর্যাদা দেওয়া হয়। পাকিস্তানকে দেখে আফগানিস্তান, ভারত এখন বাংলাদেশও এ ধরনের দল গঠন করেছে। অন্যান্য দেশও এগিয়ে আসছে। এটা খুব ভালো লক্ষন।”

হাত হারালেও জীবন যুদ্ধে বিজয়ী মাতলুব। ডিগ্রী পাস করা এই তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হওয়ার প্রেরণা পেয়েছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি সাবেক ওপেনার সাঈদ আনোয়ারকে দেখে। বললেন, “সাঈদ আনোয়ারকে দেখে বাঁহাতে ব্যাটিংয়ের আগ্রহ আসে। তিনিও বাঁহাতি খেলতেন। তাকে দেখেই উৎসাহ পাই।”

প্রতিবন্ধী ক্রিকেটে তার যাত্রা অবশ্য ২০০৭ সাল থেকে। ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর সফরে ভালো পারফরম্যান্সই তাকে পাকিস্তান দলে জায়গা পাকা করে দেয়। গৌরবের সেঞ্চুরির প্রসঙ্গ আসতেই মাতলুবের চোখে-মুখে দেখা দেয় আত্মবিশ্বাস, পরিপূর্ণতার প্রতিচ্ছবি। এই ওপেনার বলেন, “২০১২ সালে দুবাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক সিরিজে আমি প্রথম সেঞ্চুরি করি। তিনটা টি-২০ ও দুটি ওয়ানডেতে আমরা ইংল্যান্ডকে হারাই। ২০১৪ সালেও তাদের হারাই। ২০১৫ সালে আফগানিস্তানকে হারাই করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে।”

সেই সেঞ্চুরির পর জীবন অনেক বদলে গেছে তার। পাকিস্তানের প্রতিবন্ধী ক্রিকেটে মাতলুবকে বড় তারকা হিসেবেই মূল্যায়ন করা হয়। যার প্রভাব পড়েছে তার ব্যক্তিগত জীবনেও। তিনি বলেন, “শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে মানুষ আগে অতটা গুরুত্ব দিত না। কিন্তু এখন ভালো দৃষ্টিতে দেখে। মান সম্মান বেড়েছে। মানুষ এখন পছন্দ করে। আগে অন্যরা আমাকে খেলায় নিতে চাইত না। এখন সেটা চায়, পছন্দও করে।”

অমন দুর্ঘটনার পরও ক্রিকেট খেলার স্পৃহা, লড়াইয়ের চেষ্টা করে যান মাতলুব অন্তরে ধারণ করা অসীম সাহসের কারণে। তিনি বলেন, “মানুষের মধ্যে সাহস, আত্মবিশ্বাস, আর মনোযোগ থাকে সে কোথায় হারে না। স্বাভাবিক মানুষদের সঙ্গে খেলতেও আলহামদুলিল¬াহ আমার কোনো সমস্যা হয় না।” আগামীতে দেশের হয়ে ভালো খেলতে এবং আরও অনেক সেঞ্চুরি করাই এখন তার স্বপ্ন।
শুধু বাঁ-হাতে ব্যাটিং নয়, হাস্যোজ্জ্বল মাতলুব জানিয়ে গেলেন, এক হাতে আমি মোটর সাইকেলও চালাই। সমস্যা হয় না। আর হ্যাঁ, মোটর সাইকেলটা অলি-গলি নয়, মুলতানের ব্যস্ত রাস্তাতেই চালান অকুতোভয় ও অফুরান প্রাণশক্তির অধিকারী মাতলুব।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ