রিপাবলিকান প্রার্থী মনোনয়ন সুপার টিউসডে’র হাড্ডাহাড্ডি শেষে এগিয়ে রমনি

রিপাবলিকান প্রার্থী মনোনয়ন সুপার টিউসডে’র হাড্ডাহাড্ডি শেষে এগিয়ে রমনি

অবশেষে সুপার টিউসডের কঠিন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষ হলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রমনি ও রিক স্যান্টোরামের মধ্যেই মূলত এই প্রতিদ্বন্দ্বীতা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে।

সবচেয়ে কঠিন এবং প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ লড়াই হয় ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যে। রিপাবলিকান দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গরাজ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন মিট রমনি ও রিক স্যান্টোরাম।

মঙ্গলবার ৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি রাজ্যে একযোগে রিপাবলিকান প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় সবগুলো রাজ্যের ফলাফল মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ওহাইয়ো, আইডাহো এবং আলাস্কার ফলাফল ঝুলে ছিল। অবশেষে এই তিন রাজ্যের ফলাফলও পরিষ্কার হয়েছে।

মূলত আলাস্কার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার মধ্য দিয়েই সুপার টিউসডের জমজমাট লড়াই শেষ হয়।

তবে সুপার টিউসডেতে সবার নজর ছিল মূলত ওহাইয়োর ফলাফলের প্রতি। এই রাজ্যকে রিপাবলিকান প্রার্থী মনোয়ন চূড়ান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইতিহাস বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থী ওহাইয়োতে না জিতে মূল নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি।

ধারণা করা হয় ওহাইয়োতে যিনি হাসতে পারবেন তিনিই মূলত শেষ হাসি হাসবেন।

কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা গেলো অন্য চিত্র। দেখা যাচ্ছে মিট রমনি ও স্যান্টোরাম দু’জনেই ইচ্ছে করলে হাসতে পারেন। সামান্য ব্যবধানে রমনি এগিয়ে থাকলেও মূলত দু’জনের কেউই হারেননি। রমনির পাওয়া ৩৮ শতাংশ ভোটের বিপরীতে স্যান্টোরাম পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ ভোট।

ওহাইয়োতে মিট রমনি ৪ লাখ ৫২ হাজার ৫৭৫ ভোট পেয়ে প্রায় ৩৮ শতাংশ সমর্থন লাভ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি ২৩ জন ডেলিগেটের সমর্থন নিজের ঝুলিতে ভরলেন।

অপর দিকে স্যান্টোরামও নিঃশ্বাস ফেলছেন রমনির ঘাড়ে। তিনি শেষপর্যন্ত ৪ লাখ ৪০ হাজার ৬১৩ ভোট পেয়ে মোট ৩৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হন। এর মাধ্যমে তিনি মোট ১৭ জন ডেলিগেটের সমর্থনও নিশ্চিত করলেন ওহাইয়ো থেকে।

এছাড়া অপর প্রার্থীদের মধ্যে নিউট গিংগ্রিচ পেয়েছেন ১৪.৬ শতাংশ ভোট এবং রন পল লাভ করেছেন ৯.৩ শতাংশ ভোটারের সমর্থন। তবে এই দুই প্রার্থী কোনো ডেলিগেটের সমর্থন নিশ্চিত করতে পারেননি।

সুপার টিউসডের ফলাফলে এটি এখন পরিষ্কার যে প্রার্থীতার লড়াইয়ে শেষোক্ত দু’জনের তেমন কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

তবে ওহাইয়োতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও বাকি নয় অঙ্গরাজ্যের মধ্যে পাঁচটিতেই রমনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলেন।

চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী মিট রমনি ম্যাসাচুসেটস, ভার্জিনিয়া, ভারমন্ট, আলাস্কা এবং আইডাহোতেও সুস্পষ্ট ব্যবধানে অন্যদের পেছনে ফেলেছেন। অপর দিকে স্যান্টোরাম জয় নিশ্চিত করেছেন টেনেসি, ওকলাহোমা ও নর্থ ডাকোটায়।

এছাড়া অপর প্রার্থী নিউট গিংগ্রিচ জর্জিয়াতে বিজয়ী হয়েছেন।

রমনি ম্যাসাচুসেটসে পেয়েছেন ৭৬.১ শতাংশ ভোট। অপরদিকে, ১২.১ শতাংশ ভোট পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন রিক স্যান্টোরাম। রন পল পান ৯.৬ শতাংশ আর গিংগ্রিচ পেয়েছেন ৪.৬ শতাংশ ভোট।

ভার্জিনিয়ায় রমনি পান ৫৯.৫ শতাংশ ভোট। ভার্জিনিয়াতে অবশ্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে উদার বলে বিবেচিত টেক্সাস কংগ্রেসম্যান রন পল। তিনি পান ৪০.৫ শতাংশ ভোট।

ভারমন্টে রমনি পেয়েছেন ৩৯.৮ শতাংশ ভোট। এখানে অবশ্য অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রন পল এবং রিক স্যান্টোরাম উভয়ই প্রায় সমান ভোট পান। রন পলের প্রাপ্ত ২৫.৪ শতাংশ ভোটের বিপরীতে স্যান্টোরাম ২৩.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

আলাস্কাতে অবশ্য রমনি আর স্যান্টোরামের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। রমনির প্রাপ্ত ৩২.৬ শতাংশ ভোটের বিপরীতে স্যান্টোরাম পেয়েছেন ২৯ শতাংশের সমর্থন। তবে রন পলও এখানে ভালো সমর্থন লাভ করেন। তিনি পান ২৪ শতাংশ ভোট। তবে গিংগ্রিচ এই রাজ্যে ১৪.২ শতাংশ ভোট লাভ করে সর্বশেষ স্থান লাভ করেন।

আইডাহোতে রমনি ৬১.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে সুস্পষ্ট ব্যবধানে অন্যদের পেছনে ফেলেন। এখানে দ্বিতীয় অবস্থানের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয় স্যান্টোরাম এবং রন পলের মধ্যে। স্যান্টোরামের প্রাপ্ত ১৮.২ শতাংশ ভোটের বিপরীতে রন পল পান ১৮.১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন।

নির্বাচনী লড়াইয়ে এখনও এগিয়ে থাকা ম্যাসাচুসেটসের সাবেক গভর্নর গত কয়েক সপ্তাহে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করলেও তার ঠিক লেজে পা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন পেনসিলভানিয়ার সাবেক সিনেটর রিক স্যান্টোরাম। তিনি ইতোমধ্যেই সত্যিকারের রক্ষণশীলতার ধ্বজাধারী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনিও তিনটি রাজ্যে জয়লাভ করেছেন।

টেনেসিতে স্যান্টোরাম ৩৭.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রমনি পেয়েছেন ২৮ শতাংশ ভোট।

তবে গিংগ্রিচ এই রাজ্যে কিছুটা ভালো করেছেন। তিনি পেয়েছেন ২৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন। অপর প্রার্থী রন পল পেয়েছেন ৯ শতাংশ সমর্থন।

ওকলাহোমাতে স্যান্টোরাম পেয়েছেন ৩৩.৮ শতাংশ ভোট। তবে দ্বিতীয় অবস্থানের জন্য এখানে রমনি ও গিংগ্রিচের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। রমনি পেয়েছেন ২৮ শতাংশ ভোট। কিন্তু গিংগ্রিচ ২৭.৫ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়ে তার ঠিক ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন। আর রন পল পেয়েছেন ৯.৬ শতাংশ ভোটারের সমর্থন।

নর্থ ড্যাকোটাতে ৩৯.৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়ে স্যান্টোরাম সুস্পষ্টভাবে বিজয়ী হয়েছেন। রন পল এখানে ২৮.১ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। রমনি এই রাজ্যে ভালো করতে পারেননি। তিনি পেয়েছেন ২৩.৭ শতাংশ ভোট। গিংগ্রিচ ৮.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে শেষের থেকে প্রথম হয়েছেন এ রাজ্যে।

প্রথম দিককার প্রাইমারিতে সাউথ ক্যারোলিনায় জয়লাভের পর গিংগ্রিচ অ্যাদ্দিন আর কোনো রাজ্যে জিততে পারেননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে সর্বশেষ প্রাইমারিতে নিজের রাজ্য জর্জিয়ায় জয়লাভের পর তিনি নতুন উদ্যমে প্রচারণা শুরু করবেন।

জর্জিয়ায় গিংগ্রিচ ৪৭.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রত্যাশিত বিজয় পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রমনি পেয়েছেন ২৫.৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন। স্যান্টোরাম এবং রন পল পেয়েছেন যথাক্রমে ১৯.৬ শতাংশ এবং ৬.৫ শতাংশ ভোট।

জর্জিয়ায় গিংগ্রিচের জয়লাভ প্রত্যাশিত ছিলো। কারণ এটি তার নিজের রাজ্য। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে তার লেজে-গোবরে অবস্থার জন্য তিনি রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরে থাকা এলিটশ্রেণীকে দায়ী করার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমকেও এক হাত নিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এই এলিট শ্রেণী এবং সংবাদমাধ্যম প্রার্থিতা থেকে তাকে সরাতে উঠেপড়ে লেগেছে।

গিংরিচ তার অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের খরগোশ আখ্যা দিয়ে নিজেকে কচ্ছপ হিসেবেও অভিহিত করেন যে কিনা সবার শেষে বিজয়ের হাসি হাসে।

গিংগ্রিচ এর আগে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য করে বিশ্ববাসীর নিন্দা কুড়ান।

টেক্সাসের কংগ্রেসম্যান রন পল দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে গেছেন। তবে এজন্য তার উদার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই দায়ী বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা। রিপাবলিকানদের রক্ষণশীলতার ভিড়ে তার এই উদারতাবাদ ও খোলা মন হালে পানি পাবে না তা অনেকটাই নিশ্চিত ছিল।

তবে নিজের খারাপ ফলাফলের পরও নর্থ ডাকোটায় অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সমাবেশে তিনি অবশ্য কোনো নির্দেশনা দেননি- এই লড়াইয়ে তিনি থাকবেন কি থাকবেন না।

সবশেষে বলা যায়, প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে হলে প্রার্থীদের আরো অনেক রাস্তা পাড়ি দিতে হবে- এটিই মূলত পরিষ্কার হলো মঙ্গলবারের সুপার টিউসডেতে।

আন্তর্জাতিক