1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

ওবামাকে স্বাগত জানাতে প্রোটোকল ভাঙলেন মোদির

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৫
  • ৬২ Time View

modi obamammরোববার ভারতীয় সময় সকাল ৯-৪০ মিনিটে তিন দিনের সফরে ভারতে পৌঁছলেন বারাক ওবামা। নয়া দিল্লির কুয়াশা ঘেরা বিমান বাহিনীর স্টেশন পালামে স্ত্রী মিশেলকে নিয়ে ওয়ারফোর্স ওয়ান থেকে নেমে আসেন ওবামা। প্রোটোকল ভেঙেই তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। ওবামাকে লাল কার্পেট অভ্যর্থনা জানানো হয়।

প্রোটোকল অনুযায়ী, ভারতে অন্য কোনো রাষ্ট্রনেতাকে বিমানবন্দরে খোদ প্রধানমন্ত্রীর স্বাগত জানানোর রীতি নেই। কিন্তু ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরও পোক্ত করার বার্তা দিতে সেই প্রোটোকল ভেঙে ফেললেন নমো। বিমানবন্দর থেকে বারাক ও মিশেল ওবামা পৌঁছন আইটিসি মৌর্য্য হোটেলে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন তিনি। তার আগেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

রাষ্ট্রপতি ভবনে বারাক ওবামাকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। এই দলের নেতৃত্ব দেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কম্যান্ডার পুজা ঠাকুর। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ছাড়াও সস্ত্রীক ওবামাকে অভ্যর্থনা জানান মনোহর পারিকর, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি এবং রাজনাথ সিং। ওবামার উদ্দেশ্যে ২১ বার গান স্যালুট জানানো হয়।

রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভিবাদন গ্রহণ করার পর রাজঘাটের উদ্দেশ্য রওনা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন তিনি। ভিসিটরস বুকে সই করেন। রাজঘাটে নিজের হাতে একটি চারাগাছ পোঁতেন ওবামা।

এই সফরে অসামরিক পরমাণু চুক্তি, প্রতিরক্ষা, পরিকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি, অর্থনৈতিক সহায়তা এবং বিনিয়োগ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বেশ কয়েক ধাপ এগোবে বলে আশা রাখছে দু’পক্ষই৷

এরপর হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজেও অংশ নেবেন৷ সেখানেই মোদির সঙ্গে ‘ওয়াক দ্য টক’ কর্মসূচি বা হাঁটতে-হাঁটতে একান্ত আলোচনা সারবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ এরপর হায়দরাবাদ হাউসেই শুরু হবে মোদি-ওবামা বৈঠক৷ দু’দেশের সরকারি প্রতিনিধিরাও সেখানে উপস্থিত থাকবেন৷ বৈঠক শেষে দুই রাষ্ট্রপ্রধান যৌথ বিবৃতি দেবেন৷

সন্ধ্যায় মিশেলকে নিয়ে মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হবেন ওবামা৷ তার পর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্কার সেরে রাষ্ট্রপতি ভবনেই নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি৷ ২৬ জানুয়ারি সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে সস্ত্রীক উপস্থিত থাকবেন ওবামা৷ বিকেলে মোদির সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির সিইও-দের একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ সেখানে ভারত-মার্কিন বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য রাখবেন৷ তার পর ২৭ জানুয়ারি সকালে সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামে বক্তৃতা সেরে সৌদি আরব রওনা হয়ে যাবেন৷

মোদি সরকারের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আলোচনায় যে বিষয়গুলি প্রাধান্য পেতে চলেছে, সেগুলির অন্যতম হলো, ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে বাধাগুলি দূর করা৷ ভারতে চলতি নিয়ম অনুযায়ী, পরমাণু ক্ষেত্রে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, তার ক্ষতিপূরণের দায় ‘সাপ্লায়ার কোম্পানিকে’ নিতে হয়৷ এ কারণেই মার্কিন কোম্পানিগুলি ভারতে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে না৷

সেই আইনি বাধা দূর করতে বিমা কোম্পানিগুলির সঙ্গে কথা বলে বিশেষ বিমা তহবিল গড়ার কথা ভাবছে মোদি সরকার, যাতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকেই ক্ষতিপূরণ মেটানো যায়৷ ফ্রান্স বা আমেরিকায় দুর্ঘটনার দায় নিতে হয় ‘অপারেটর কোম্পানি’কে৷ সেই নিয়মই অনুসরণ করার জন্য ভারতের উপর চাপ দিচ্ছে আমেরিকা৷ সূত্রের খবর, ওবামা সফরের আগে লন্ডনে ইন্দো-মার্কিন ‘কনট্যাক্ট গ্রুপ’-এর দু’দিনের বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে৷

জলবায়ু পরিবর্তন আটকাতে আন্তর্জাতিক চুক্তি মানার বিষয়টি নিয়েও ভারত-আমেরিকার মতপার্থক্য রয়েছে৷ চীন ও আমেরিকার পরে ভারতই বিশ্বে সবথেকে বেশি ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ উৎপাদন করে৷ আমেরিকা চায়, ভারত এতে লাগাম পরাক৷ কিন্ত্ত দেশে শিল্পায়নের স্বার্থে তা মানতে নারাজ মোদি সরকার৷ কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের মতে, এ ব্যাপারে যাবতীয় দায় শিল্পোন্নত দেশগুলিকেই নিতে হবে৷ উল্টে ২০১৯ সালের মধ্যে কয়লা উত্পাদন দ্বিগুণ করতে চলেছে ভারত৷ ফলে বিষয়টি নিয়ে ওবামা অস্বস্তিতে থাকবেন৷

প্রতিরক্ষা সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে অবশ্য আমেরিকার দিকে আরও বেশি করে ঝুঁকতে চলেছে মোদি সরকার৷ এখনও পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে রুশ সামগ্রীর আধিপত্য থাকলেও, সেগুলির বেশি খরচ এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ ব্যাপারে আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানোর কথা ভাবছে নয়াদিল্লি৷ মোদি সরকার চাইছে, প্রতিরক্ষা সামগ্রী নির্মাণের ক্ষেত্রেও স্বনির্ভর হয়ে উঠতে৷ তবে সেই পরিকাঠামো গড়তে আমেরিকা-সহ অন্যান্য উন্নত দেশের সামরিক সরঞ্জাম প্রস্ত্ততকারী সংস্থাগুলির সাহায্য চাই৷ তাই ভারতকে তাদের বিনিয়োগের ‘লোভনীয় গন্তব্য’ হিসেবে গড়তে চাইছেন মোদি৷

আমলাতান্ত্রিকতা কমাতে বাণিজ্য সংক্রান্ত নিয়মনীতি আলগা করছেন৷ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি (মেধাস্বত্ব), ওয়ার্ক ভিসা এবং আয়কর সংক্রান্ত বিষয়েও সংস্কারের পথে হাঁটছেন৷ এটি অবশ্য মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পেরই অংশ, যার উদ্দেশ্য দেশ-বিদেশের কোম্পানিগুলির বিনিয়োগ আকর্ষণ করে ভারতকে বিশ্বের অন্যতম ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ হিসেবে গড়ে তোলা৷

তবে ওবামার সফরের বিরোধিতা করে শনিবার কলকাতায় অন্তত ১০ হাজার সমর্থক নিয়ে মিছিল করে বাম দলগুলি৷ বামফ্রন্টের ১১টি দল ছাড়াও এসইউসিআই(সি) ও সিপিআইএমএল (লিবারেশন) মিছিলে যোগ দেয়৷ দিল্লিতেও অনুরূপ একটি মিছিল হয়৷ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের বক্তব্য, ‘ভারতের অর্থনৈতিক, সামরিক ও কৌশলগত নীতি পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়েই ওবামা এই সফরে আসছেন৷ এই চাপের কাছে মাথা নত করা উচিত নয়৷ যদিও মোদি সরকার হয়তো সেটাই করতে চলেছে৷’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ