ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এক মুসলিম নারীর ওপর বর্বরোচিত নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় রাজ্যের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকমহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কোলকাতা হাইকোর্ট এ নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একটি মামলা চালু করেছে। আজ (মঙ্গলবার) হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সত্তোর গ্রামের গৃহবধূ হায়াতুন্নেসা বিবি এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই গ্রামেরই তৃণমূল নেতা শেখ আজগারের ওপর বোমা মারার ঘটনায় অভিযুক্ত হয় বিজেপির স্থানীয় নেতা শেখ মিঠুন। অভিযুক্ত এই যুবক হায়াতুন্নেসার বাবার বাড়ি বুদবুদ থানার কৈচরের কলমডাঙ্গায় লুকিয়ে রয়েছে দাবি করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কার্ত্তিক মোহন ঘোষ শনিবার রাতে সেখানে হানা দেন। পুলিশ অবশ্য শেখ মিঠুনকে না পেয়ে তার চাচি হায়াতুন্নেসাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের সঙ্গে কোনো মহিলা পুলিশ না থাকলেও একপ্রকার বেআইনিভাবে পুলিশ ওই মহিলাকে নিয়ে যায়।
রোববার সকালে তার পরিবারের লোকজন গুরুতর অসুস্থ হায়াতুন্নেসাকে থানা থেকে নিয়ে গিয়ে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। সোমবার বিকেলে তাকে ফের কোলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানন্তরিত করা হয়েছে।
বীরভূমের ঘটনায় বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়েছে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইন্তাজ আলী শাহের মন্তব্য, ‘সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরুর ব্যাপার নয় এটি। সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের আগে পর্যন্ত কোনো নারীকে থানায় ডেকে পাঠানোই যায় না আইনে। সেখানে এমন নির্যাতনের ঘটনা কীভাবে ঘটছে সেটাই চিন্তার বিষয়।’
এই ঘটনায় সোমবার বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল গভর্নর কেশরিনাথ ত্রিপাঠির সঙ্গে দেখা করেন। বিজেপির দাবি, তারপরেই গভর্নর পুলিশের ডিজিকে ফোন করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর জেলার স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের প্রধান কার্ত্তিক মোহন ঘোষকে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, পুলিশের ভুমিকা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জানিয়েছেন, নিরপরাধ এক নারীর উপর পুলিশ যে বর্বর অত্যাচার করেছে তাতে সভ্য সমাজ স্তম্ভিত। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল ও পথসভা হচ্ছে আজ। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে বর্বর অত্যাচার বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। রাজ্য কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট অধীর চৌধুরী জানান, এ নিয়ে আগামী ২৭ জানুয়ারি রাজ্যে সড়ক ও রেল অবরোধের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। – আইআরআইবি।