
ঢাকা: চলতি বছর দ্বিতীয় পাকিস্তানী হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। এর আগে বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ১৯৭৯ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছিলেন আবদুস সালাম। কিন্তু দীর্ঘদিন পর সালামের পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, এই কৃতী সন্তানকে যথাযথ মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেয়নি পাকিস্তান।
রোববার হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে।
আবদুস সালামের লন্ডন প্রবাসী পুত্র আহমদ সালাম মামলার নোবেল বিজয়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন,‘পাকিস্তান দ্বিতীয়বারের মতো নোবেল অর্জন করেছে জেনে আমি খুবই খুশি হয়েছি। মালালার এই নোবেল পাওয়া নিয়ে নানা বিতর্ক থাকতে পারে। তবে সে যে একজন বিস্ময় বালিকা আমরা এ সত্য অগ্রাহ্য করতে পারি না।’
এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকরা আমার বাবাকে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি সেখানকার কোনো ইতিহাস বা বিজ্ঞান বইতে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। কেবল লাহোরের একটি সরকারি কলেজের ক্ষুদ্র এক হলের নামকরণ হয়েছে তার নামে। অথচ পাকিস্তানের তার জন্য গর্ব করা উচিৎ ছিল।’
আহমদ সালাম প্রসঙ্গক্রমে তার বাবার ভারত সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘নোবেল পাওয়ার পর তিনি ভারত সফরে গেলে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেয়া হয়েছিল। এমনকি বিজ্ঞানী আবদুস সালামকে ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এছাড়া আরো অনেক দেশ তাকে নাগরিকত্ব দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এসব প্রস্তাব তিনি এড়িয়ে গেছেন। ১৯৯৬ সালে একজন পাকিস্তানী হিসেবেই তিনি মারা গেছেন।’
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেলডন লি গ্লাসহাউ এবং স্টেভেন উয়েনবার্গের সঙ্গে যৌথভাবে পদার্থে নোবেল পেয়েছিলেন আবদুস সালাম। এছাড়া ২০১২ সালে উদ্ভাবিত ‘ঈশ্বর কণা’ (হিগস-বোসন পার্টিকল) প্রকল্পের সফলতায় বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছিলেন এই পাকিস্তানী বিজ্ঞানী।

আহমদ সালাম অভিযোগ করে বলেন, ‘পাকিস্তানের আণবিকসহ অন্যান্য শাখার সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়ই পরামর্শের জন্য আমার বাবার কাছে আসতেন। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তার অবদানের কথা কখনোই স্বীকার করেননি।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাক সরকার আমার বাবার অবদানকে অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা তাকে রীতিমত অপমান করেছে।’ এ প্রসঙ্গে তার কবর থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি উঠিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন আহমাদ সালাম। এর আগে তার কবরের গায়ে খোদিত ছিল ‘প্রথম মুসলিম বিজ্ঞানী’।
প্রসঙ্গত, আবদুস সালাম ছিলেন আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের লোক। সম্ভবত এ কারণেই তাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান সরকার সংবিধানে এই সম্প্রদায়কে অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করে।