স্কটল্যান্ডের রাজনীতিক ও দেশের বর্তমান ফার্স্ট মিনিস্টার আলেক্স সালমন্ড বিশ্বাস করেন, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা দেশের জনগণের জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসবে। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা নিয়ে এতদিন যে সমীক্ষার ফল ছিল হ্যাঁ-ভোট ৪৫ শতাংশ আর না ভোট ৫ শতাংশ, সেই জায়গায় হঠাৎ করে গত দু’দিন থেকে এই সমীক্ষায় স্বাধীনতার পক্ষে হ্যাঁ-ভোট ৫০ শতাংশ আর না-ভোট ৪৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
সালমন্ড বেশ জোর দিয়েই বলছেন, যতদিন যাবে স্বাধীনতার পক্ষে হ্যাঁ-ভোটের সংখ্যা ততই বাড়বে। সংবাদ সংস্থা আগেই জানিয়েছিল, ৫৫ শতাংশ না-ভোট মূলত নিরপেক্ষ অর্থাৎ সিদ্ধান্তহীন ভোটারসহ ছিল। সালমন্ড এই জায়গায় এসে বলছেন, যতদিন যাবে সেই সিদ্ধান্তহীন ভোটারসহ না-পক্ষের ভোটাররা পরিবর্তিত হয়ে হ্যাঁ-ভোটের সঙ্গে যুক্ত হবেন।
১৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডবাসী তাদের স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেবেন। যদি জনমত রায় স্বাধীতার পক্ষেই ভারী হয় তাহলে কী অবস্থা হবে বৃটেনের তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিস্তর চিন্তাভাবনা এবং উদ্বেগ-উৎকন্ঠা শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যম একই আলোচনা আর নানা ভবিষ্যদ্বাণীর কথা বলছে। কী হতে পারে স্কটল্যান্ড আলাদা হয়ে গেলে? স্কটল্যান্ড স্বাধীন হয়ে গেলে বৃটেনের জনসংখ্যা কমে যাবে প্রায় ৮ শতাংশ। অর্থাৎ জনসংখ্যা ৬৪ মিলিয়ন থেকে নেমে আসবে ৫৯ মিলিয়নে। আর এর ফলে ইউরোপিয়ান লেভেলে জনসংখ্যার দিক দিয়ে বৃটেনের স্থান পঞ্চম থেকে উঠে যাবে ষষ্ঠ স্থানে। ৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে ইতালি বৃটেনের সামনে চলে আসবে। ৮২ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে জার্মানি সামনেই থাকছে। কেননা তাদের জনসংখ্যা ইউরোপের মধ্যে বৃহৎ।
এছাড়াও ডিসপোজিবল আয় বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানের হারে বৃটেনের আয় বেড়ে জনপ্রতি ১৬.৭৯১ পাউন্ড হবে। অর্থাৎ বৃটেনের জনগণের হাতে অধিক ক্যাশ খরচের জন্য থাকবে। তবে অবধারিতভাবে ভূমি কমে যাবে। স্কটল্যান্ড স্বাধীন হয়ে গেলে বলা যায় গ্রিস কিংবা তিউনিশিয়ার সমপরিমাণ ভূমি অর্থাৎ প্রায় ৩২ শতাংশ ভূমি হারাবে বৃটেন। সে হিসাবে বৃটেনের জনসংখ্যার পাশাপাশি ভূমিও হ্রাস পাবে। যার ফলে বিশ্বের ৪৫টি দেশের মধ্যে বৃটেনের স্থান ২৯তম হয়ে যাবে। আর ইউরোপের ক্ষেত্রে বৃটেনের অবস্থান এ ক্ষেত্রে সেই একই চতুর্থ স্থানে থাকবে। বেলজিয়াম থাকবে তৃতীয় স্থানে। বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হ্রাস পাবে। স্কটল্যান্ড স্বাধীন হয়ে গেলে বৃটেনের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নেমে গিয়ে দাঁড়াবে ২০ সেন্টিমিটার। একই সঙ্গে রফতানি হ্রাস পাবে।
বৃটেনের মধ্যে স্কটল্যান্ড এককভাবে রফতানি করে মোট ২৩৫.৮ বিলিয়নের মধ্যে ১৬.৯ বিলিয়ন। সেক্ষেত্রে স্বাধীন হয়ে গেলে বৃটেনের এই রফতানি হ্রাস পেয়ে ৭.১ শতাংশ হয়ে যাবে। তবে জিডিপি মাথাপিছু কিছুটা বেড়ে ২১.২৮৭ থেকে ২১.৪০৪ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গড় আয়ু বৃদ্ধি পাবে। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার ফলে মানুষের গড় আয়ু ০.৩ বছর থেকে বেড়ে ০.৪ বছর হবে। আর ইউরোপের ক্ষেত্রে বৃটেনের স্থান একই অবস্থানে থাকবে। ইউরোপে লিথুয়ানিয়ার পুরুষেরা সবচেয়ে কম আয়ুর হয়ে থাকেন, গড় ৬৮ বছর। যেখানে আইসল্যান্ডে পুরুষের গড় আয়ু ৮২ বছর। আর নারীরা স্পেনে গড়ে ৮৬ বছর বাঁচেন। আর সর্বনিম্ন গড় আয়ু মেসিডোনিয়ায় ৭৭ বছর।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন স্কটিশদের জাত্যভিমান এবং ইংরেজদের প্রতি সন্দেহ পুরনো পরিচিত বিষয়। তবে বৃটেন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে এখনও বহু মানুষ উদ্বিগ্ন। যেমন স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন ক্লাইডের এপারে যখন সমাবেশ করছিলেন, ঠিক সেই সময় নদীর উল্টো দিকে বেশ কজনের কণ্ঠে স্বাধীনতা নিয়ে সন্দেহ শোনা গেল। তাদের একজন জনি অ্যান্থনি ম্যাকগাভার্ন। গ্লাসগোতে থাকেন, তেল শিল্পে কাজ করতেন। স্পষ্ট করে বললেন, তিনি স্বাধীনতা চান না। তাতে অনেক ক্ষতি হবে। স্বাধীনতার জন্য অনেক মাশুল দিতে হবে। কীভাবে? আপনি যদি দেয়াল তুলে দেন, তাহলে ভেতরের এই মানুষগুলো আটকা পড়বে, চাকরি হারাবে। আমরা এক কোনায় ছোট্ট একটা দেশ, টাকাপয়সা নেই। অনেক মানুষ মনে করছে আমাদের অনেক সম্পদ, তেল আছে। আসলে এসব ঠিক না। তেল আর বেশি দিন নেই। সেদিনের আরেক সন্দিহান কণ্ঠ ছিল লিনসি। চাকরি করেন। তার ভয় স্বাধীন হলে স্কটল্যান্ডকে নতুন করে সব শুরু করতে হবে, তাতে অনেক কিছু বদলাবে। সব যখন ভালোভাবে চলছে, বদলানোর দরকার কী? এখনও পর্যন্ত যে সব জনমত সমীক্ষা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে সন্দিহান মানুষের পাল্লাই ভারী। তবে এক-তৃতীয়াংশ স্কটিশ এখনো মনস্থির করতে পারছেন না। দুই শিবিরের রাজনীতিকদের মূল টার্গেট এখন তারাই।– ওয়েবসাইট।