1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৬ অপরাহ্ন

রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে এ কে খন্দকারের শাস্তির দাবি সংসদে

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
  • ৭৩ Time View

mostak১৯৭১: ভেতরে-বাইরে বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগ এনে বইটির লেখক আওয়ামী সরকারের সদ্য সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী একে খন্দকারকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা। একইসঙ্গে সেক্টর কমান্ডারর্স ফোরামের এ সভাপতির লেখা বইটি বাজেয়াপ্তেরও দাবি জানান তারা।

সংসদে এমপিরা বলেন, জাতিকে বিভ্রান্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে এ কে খন্দকার বিকৃত ইসিহাস সম্বলিত বইটি লিখেছেন। কারও প্ররোচনায় কিংবা পরাজিত শক্তির দোসর কোন এজেন্সির টাকা খেয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনী মোশতাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী একে খন্দকার এ ধরণের বই লিখে সংবিধান লংঘন করেছেন। কারও প্ররোচনায় কিংবা অন্য কোন নির্দেশে এ কে খন্দকার বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার চেষ্টা করেছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

তারা অবিলম্বে বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি এ ধরণের বিকৃত ইতিহাস সম্বলিত বইটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এ সময় স্পিকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, ঐতিহাসিক ৭ই মাচের্র ভাষণের সময় আমরাও কিছুটা সম্পৃক্ততা ছিল। জাতির জনককে হত্যার পর খুনী মোশতাককে সমর্থনকারী তার বইতে কি লিখলো, তাতে জাতির কোন যায় আসে না। ৭ই মার্চ ভাষণ সম্পর্কে উনি যা লিখেছেন তা অবশ্যই জাতির সামনে অবমূল্যায়িত হবে। কেননা বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু।

ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে মাগরিবের নামাজের পর সংসদ অধিবেশন শুরু হলে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারের লেখা ‘ ১৯৭১ ভেতর বাইরে’ বই নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। 

তোফায়েল আহমেদ ফ্লোর নিয়ে বলেন, যেহেতু প্রসঙ্গটি আসলো আমি না বলে থাকতে পারলাম না। বইটি সংগ্রহ করে প্রথম দিকে পড়ার চেষ্টা করলাম। তিনি লিখেছেন, পাকিস্তানিদের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পেয়েছেন। তিনি ৫২ থেকে ৬৯ পর্যন্ত পাকিস্তানে ছিলেন।
 
তোফায়েল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সময় আমি নিজে মঞ্চে ছিলাম। আমরা মঞ্চে থেকে জানতে পারলাম না তিনি কোথা থেকে জানলেন, বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বলেছেন। তিনি এখন কেন বই লেখেন তা জানি। সে সব বলতে চাই না। এসব কথা বলে লিখে অন্যদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়। তিনি মন্ত্রী ছিলেন। তিনি কী লিখছেন ? বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের একটি ভাষনের মধ্য দিয়ে নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রুপান্তরিত করেছিলেন।

তিনি বলেন, ৩০০ বছরের ইতিহাসে বঙ্গন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণ শ্রেষ্ট ভাষণ। এ ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলা উচিত। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাংলাদেশ কি হাওয়ার ওপর স্বাধীন হয়েছে। এক খন্দকার  বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর যুদ্ধের প্রস্তুতি ছিল না। বঙ্গবন্ধু জয় বাংলার পর আর কিছু বলেননি। একে খন্দকার ৫২-৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে ছিলেন। এদেশে কী হচ্ছে তিনি জানতেন না।
 
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুর করিম সেলিম বলেন, এ কে খন্দকার সংবিধান লঙ্গন করেছেন। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার করা হোক। তিনি কারো ইন্ধনে কোন এজেন্সী থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়েছেন। অনতিবিলম্বে তার বইটি বাতিল করার জন্য দাবি জানান।
 
সেলিম বলেন, এতে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে খাটো করা হয়েছে। পাকিস্তানি আইয়ুব খানের প্রশংসা করা হয়েছে। এ কে খন্দকারের চরিত্র প্রকাশ করা দরকার। বঙ্গন্ধুকে হত্যার পর খুনি মুশতাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

এরপর আওয়ামী লীগে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমীর হোসেন  আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু সব কিছু প্রস্তুত করে রেখেছিলেন বলে আমাদের এতো সফলতা। যারা তাকে নিয়ে টানাটানি করছেন, তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নয়, জাতি সত্তা নিয়ে টানটানি  করছে।  তারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে টানাটানি করছেন। তারা বুঝেছেন বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করা যায় জাতিকে খণ্ড-বিখণ্ড করা যাবে। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করছেন। তার ওপর বার বার আঘাত আসছে। যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তারা বার বার আঘাতের চেষ্টা করছে।
 
রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম বলেন, এ কে খন্দকার বলেছেন পাকিস্তানিরা তার সাথে ভালো ব্যবহার করতো। বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বলেছেন। এমন কথা এতোদিন তার কাছ থেকে শুনিনি। কেন এখন ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা? এর কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। যুদ্ধ করেছি আমাদের কেউ ঘুমাতে এমন পারেনি। আমরা যুদ্ধ করেছি। খন্দকার সাহেবরা ছিলেন কলকাতায়। জেনারেল ওসমানীর আন্ডারে ছিলেন। রব সাহেবের অধীনে ডিপুটি চিফ অব স্টাফ ছিলেন। আর্মির দ্বারা  যুদ্ধ পরিচালিত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর দ্বারা যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অধীনে রাষ্ট্র যুদ্ধে যেতে পারে। পৃথিবীর কোথাও জনগণকে ছাড়া যুদ্ধ হয়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্বে হয়েছে। বাংলাদেশে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। একে খনন্দকার যে বক্তব্য দিয়েছেন কেউ না কেউ প্ররোচণা দিয়েছে। অন্য উদ্দেশে জাতির জনককে ছোট করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ বইকে সমগ্র জাতি প্রত্যাখ্যান করবে।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, তিনি গোটা জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এইসব কুলাংগারা যে পাকিস্তানের গুনকীর্তন করেছেন তাতেই তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার।

প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’ গ্রন্থে তিনি মুজিব বাহিনী সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ লেখা রয়েছে। বইটি গত আগস্টের শেষ দিকে প্রকাশিত হয়েছে।

বইটিতে এ কে খন্দকার লিখেছেন, অস্থায়ী সরকার গঠনের আগে, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ বাহিনী বা মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়। অস্থায়ী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ বাহিনীর নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক কাঠামো সরকার দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মুক্তিবাহিনী সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধের সব কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরেও কিছু বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে তৎপর ছিল। এদের বেশিরভাগই ছিল স্থানীয় পর্যায়ের এবং তাদের অভিযানের এলাকা ছিল সীমিত। তারা কিছুটা স্বাধীনভাবে তাদের অভিযান পরিচালনা করলেও স্থানীয় সেক্টর সদর দপ্তরের সঙ্গে সব সময় সমঝোতা করে চলত। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ কোনো যোগাযোগ ছিল না। তবে তারা সরকারের বিপক্ষেও ছিল না। মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে আরও দুটি বাহিনী ছিল, যারা তুলনামূলকভাবে জনবল ও সামর্থ্যের দিক দিয়ে বড় ছিল। এ দুটির মধ্যে প্রথমটি ছিল টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনী, যারা কাদের সিদ্দিকীর মাধ্যমে পৃথকভাবে পরিচালিত হলেও সরকার ও মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখত। দ্বিতীয়টি ছিল মুজিব বাহিনী, যারা সম্পূর্ণভাবে অস্থায়ী সরকার ও বাংলাদেশ বাহিনী থেকে স্বতন্ত্র ছিল। প্রায়শই তারা অস্থায়ী সরকার ও মুক্তিবাহিনীকে অবজ্ঞা করত এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করত। মুজিব বাহিনী সৃষ্টি হয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-র প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে।

বইতে তিনি লিখেছেন, শুরু থেকেই মুজিব বাহিনী ও এর কর্মকাণ্ড নিয়ে বহু বিতর্ক ছিল। অস্থায়ী সরকারের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা দ্বন্‌দ্ব হয়তো মুজিব বাহিনী গঠনে অনুপ্রাণিত করেছিল। রাজনৈতিকভাবে তাজউদ্দীন সাহেব অস্থায়ী সরকারের সব মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও নেতৃস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থন পাননি। অস্থায়ী সরকার গঠনকালে একপ্রকার চেষ্টা কলছিল তাজউদ্দীন সাহেবকে যেন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া না হয়। কারণ হিসেবে বলা হতো যে তিনি বঙ্গবন্ধুর অনুগত নন। তাজউদ্দীনের বিরোধীরা এমন কাউকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিল, যাকে সামনে রেখে তারাই ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। তাজউদ্দীনের ব্যক্তিত্ব ও সততার কারণে বিরোধীরা সুবিধা করতে পারছিল না। এটা খুবই দুঃখজনক যে যখন আমরা স্বাধীন নই এবং অন্য দেশের ভুখন্ডে বসে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছি, যখন আমরা জানি না আমাদের ভবিষ্যৎ কী, যখন আমাদের সবচেয়ে বেশি ঐক্যের প্রয়োজন তখনই কিনা আমরা নানা দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিলাম।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মুক্তিবাহিনী ও এর সেক্টরগুলো অস্থায়ী সরকারের নির্দেশনায় পরিচালিত হলেও স্থানীয় ও অন্য বাহিনীগুলো তাদের নিজস্ব নিয়মে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাত। এটা হতে পেরেছিল মূলত অস্থায়ী সরকারের প্রথম দিকের একটি সিদ্ধান্ত থেকে। সিদ্ধান্তটি ছিল, আওয়ামী লীগ বা তাদের মনোনীত ব্যক্তি ছাড়া আর কাউকে মুক্তিবাহিনীতে নেওয়া হবে না। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর ওপর ভারতীয়দের প্রয়োজনেরঅতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণও অন্যদের আলাদা বাহিনী গঠনে উৎসাহিত করে। কর্নেল ওসমানী চেয়েছিলেন যুদ্ধরত সব বাহিনী মুক্তিবাহিনীর অধীনে যুদ্ধ করবে। কিন্তু তা হয়নি। ছোট ছোট বাহিনীগুলো তাদের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে মুক্তিবাহিনীর সেক্টর অধিনায়কদের সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করত। কিন্তু মুজিব বাহিনীর বিষয়টি ছিল একেবারেই ভিন্ন। যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব ছিল। এই দ্বন্দ্বে অস্থায়ী সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের প্রচ্ছন্ন প্রভাবও হয়তো ছিল। এ বাহিনীর গঠন নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া ছিল- যেহেতু আমরা দেশ স্বাধীন করতে এসেছি, তাই এখানে আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ বা দ্বন্‌দ্ব থাকা উচিত নয়। আমাদের সবার লক্ষ্য থাকা উচিত ঐকমত্যের ভিত্তিতে যুদ্ধ করা। তবে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মুজিব বাহিনীর ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করার যে আশা আমরা করেছিলাম, শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি।

মুজিব বাহিনী সম্পর্কে বইতে বলা হয়, মুজিব বাহিনীর গঠনপ্রণালি আলাদা ছিল। এ বাহিনীর সমন্বয়কারী ও প্রতিপক্ষ ছিলেন ‘র’-র কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের মেজর জেনারেল সুজন সিং উবান। তিনি এস এস উবান নামে পরিচিত ছিলেন। তার নেতৃত্বে ও প্রত্যক্ষ সহায়তায় মুজিব বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করা হয়। মেজর জেনারেল উবানের বক্তব্য অনুযায়ী মুজিব বাহিনী নামটি তিনিই চালু করেন, যদিও নামটি উপরস্থ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মনঃপূত হয়নি। তারা বলেছিল যে এতে বিভ্রান্তি ও ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে। কিন্তু মুজিব বাহিনীর সদস্যরা বাহিনীর নাম পরিবর্তন করতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত বিতর্ক চলতে থাকে এবং এর কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে মুক্তিযুদ্ধকালে ব্যক্তির নামভিত্তিক অনেক বাহিনীর মতো মুজিব বাহিনীও সেভাবেই পরিচিত থাকে। মুজিব বাহিনীকে কোথাও কোথাও বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বা বিএলএফ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। মুজিব বাহিনীর সরকারি কোনো নাম না থাকলেও এই বাহিনীকে স্যাম’স বয় নামের কোথাও কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে। জেনারেল উবানের বর্ণনা অনুযায়ী ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মানেকশ নাকি আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে বলেছলেন যে মুজিব বাহিনীকে তিনি (জেনারেল মানেকশ) গঠন করেছেন তার সেনাবাহিনীর হয়ে বিশেষ কিছু অভিযান পরিচালনার জন্য।

সম্ভবত জুন মাসে আমি মুজিব বাহিনী সম্পর্কে প্রথম শুনতে পাই। কর্নেল ওসমানীর অফিসে বিভিন্ন ধরনের লোকের যাওয়া-আসা ছিল। তাদের কাছ থেকেই জানতে পারি যে প্রধান সেনাপতি বা সি-ইন-সির স্পেশাল ফোর্স বা বিশেষ বাহিনী নামে একটি বাহিনী গঠিত হতে যাচ্ছে। আমার ধারণা, কর্নেল ওসমানীকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যাতে তিনি এতে সমর্থন দেন। বিষয়টি নিয়ে আমি কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে কথা বলি। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না দিলেও তার কথাবার্তার মধ্য দিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি যে একটা বিশেষ বাহিনী হতে যাচ্ছে, যা সি-ইন-সির স্পেশাল ফোর্স নামে অভিহিত হবে। এই বাহিনী গঠনে তার যে সম্মতি আছে, সেটাও আমি বুঝতে পারলাম। সি-ইন-সির স্পেশাল ফোর্স যে পরে মুজিব বাহিনীতে পরিণত হবে, কর্নেল ওসমানী সম্ভবত তা বুঝতে পারেননি। তাই সি-ইন-সির স্পেশাল ফোর্স গঠনের শুরুতে কর্নেল ওসমানীর কাছ থেকে কোনো আপত্তির কথা শুনিনি, বরং আচার-আচরণ ও মৌনতায় মনে হতো যে এ বিষয়ে তার পূর্ণ সম্মতি আছে। জুন মাসের পর বেশ কিছুদিন এ সম্পর্কে আর কোনো আলাপ-আলোচনা শোনা যায়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ