ইরাকের উত্তরাঞ্চলে গণহত্যা, অপহরণ এবং সংখ্যালঘুদের নির্মূলের চেষ্টার অভিযোগে ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, জুন মাসে ইরাকের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে আইএস যোদ্ধারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছে৷ মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএস যোদ্ধারা খ্রিষ্টান, শিয়া, ইয়াজিদি ও অন্য সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ করেছে তাদের বাড়িঘর থেকে৷ এ ছাড়া প্রতিবেদনে এমন সব তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে আইএস যোদ্ধারা ইয়াজিদিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে৷ এমনকি শিশুদেরও রেহাই দেয়নি৷
প্রতিবেদনে কয়েকজন ইয়াজিদি শিশু ও নারীকে অপহরণের তথ্য দেয়া হয়েছে৷ এতে বলা হয়েছে, অপহৃত অনেক নারী-শিশুর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনো অজানা৷ সোমবারও ইরাকের রাজধানী বাগদাদে শিয়া অধ্যুষিত এলাকায় একটি গাড়িবোমা হামলায় ১৮ জন নিহত ও অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছে৷
সুলাইমান বেক আইএসমুক্ত
রোববার আমেরলিতে চালানো হামলায় আইএসের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাফল্যের মুখ দেখেছে ইরাকি নিরাপত্তারক্ষীরা৷ আমেরলির উত্তরে সুলাইমান বেক-এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কুর্দি যোদ্ধারা৷ এটা এত দিন আইএস যোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি ছিল৷ প্রায় ১১ সপ্তাহ শহরটি দখল করে রেখেছিল জিহাদিরা৷ ইরাকের যোগাযোগমন্ত্রী সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শহরের দখল নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ সোমবার আমেরলি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী নূরি আল-মালিকি৷
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা আমেরলিতে চার দফা বিমান হামলা চালিয়েছিল৷ তবে সেখান থেকে পালিয়ে আইএস যোদ্ধারা পাশের শহর ইয়াংকাজার দখল নেয়৷
নিহত ও গৃহহীন
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ইরাকের উত্তরাঞ্চলে আগস্ট মাসে অন্তত এক হাজার ৪২০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ আহত হয়েছে অন্তত এক হাজার ৩৭০ জন৷ আইএস যোদ্ধারা অন্তত ছয় লাখ মানুষকে জোর করে ঘরছাড়া করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷ ইরাকে নিযুক্ত জাতিসংঘের প্রতিনিধি নিকোলাই ম্লাদেনভ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আইএস যোদ্ধারা এখনো সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং প্রতিদিনই হত্যাযজ্ঞ চলছে৷” তিনি জানান, নিহতের সংখ্যা হয়তো আরো বেশি হতে পারে৷ এ ছাড়া ইরাকে সহিংসতায় গত জুলাই মাসে এক হাজার ৭৩৭ জন এবং জুনে দুই ৪০০ সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷
ইয়াজিদিদের সহায়তা
ইরাকের উত্তরে সংখ্যালঘু ইয়াজিদি ও খ্রিষ্টানরা কট্টরপন্থী আইএস যোদ্ধাদের রোষের শিকার হচ্ছে৷ সরকারি বাহিনী ও কুর্দি বাহিনী তাদের মোকাবিলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ মার্কিন প্রশাসনসহ পশ্চিমা জগত, ইরান, সৌদি আরবসহ আরব জগত – সব পক্ষই এ বিষয়ে একমত যে, ইরাকের ক্ষমতাকেন্দ্রে পালাবদল ঘটলে বর্তমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের পথ প্রশস্ত হতে পারে৷ সরকারে দেশের সব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে আইএস-এর মতো গোষ্ঠী দুর্বল হয়ে পড়বে৷ সূত্র: ওয়েবসাইট।