পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সন্নিহিত বাঙালি অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ’ বিরোধিতার পালে বাতাস লেগেছে। সেখানে আট জন কথিত বাংলাদেশীর ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। ঘটনাটি রাজ্য বিজেপির ‘বাংলাদেশী বাতিক’কে তীব্রতা দেবে, আর ওই রাজ্যের বিশেষ করে সাহেবগঞ্জ জেলার বাংলাভাষীদের উদ্বেগ বাড়াবে।
গত বছর ২৮ জুলাই ঝাড়খণ্ডের বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ’ ইস্যুতে শোরগোল তোলে। বিজেপি বিধায়ক রাজমহল অভিযোগ করেন যে, ধুদা ব্লকের পঞ্চায়েত গণেশ কীর্তনিয়া রেশন কার্ড থেকে হিন্দুদের নাম বাদ দিয়ে মুসলিমদের ভুয়া নাম ঢোকাচ্ছেন। পরে সীমান্তের ওপার থেকে আসা মুসলিমরা এই নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট পাওয়ার কাজে লাগিয়ে থাকে। উল্লেখ্য, তিন কোটি মানুষের এই রাজ্যে মুসলিমরা ১০ ভাগের বেশি। দ্বিতীয় প্রধান ধর্ম ইসলাম। সম্প্রতি বাংলাকে রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা করার দাবি উঠেছে।
গত ১৪ই মে একটি ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে তিন জন সাব-ইন্সপেক্টর ও ঝাড়খণ্ড স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন ইন্সপেক্টরের নাম প্রকাশ পায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’দের পাসপোর্ট দিয়েছে। ওইদিন রাঁচি’র পুলিশ সদর দপ্তরে একটি যাচাইকরণ কর্মসূচি চলাকালে এটা ধরা পড়ে যে, সাহেবগঞ্জ জেলার ৮ জন বাংলাদেশী নাগরিক ৮টি ভারতীয় পাসপোর্ট পেয়েছেন। পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তদন্তের ব্যাপ্তি পরবর্তীকালে আরও বাড়ানো হবে।
দুমকার এসপি শশীভূষণ বলেন, ‘স্পেশাল ব্রাঞ্চে কর্মরত সকল কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা এটা খতিয়ে দেখতে চাই যে, এমন কি ঘটেছিল একই কর্মকর্তাদের হাত দিয়ে ৮ জন বাংলাদেশী অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় পাসপোর্ট হাতে পেরেছে। রাঁচি’র রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিস ওই পাসপোর্ট ইস্যু করেছে। এখন তদন্ত করে দেখা হবে যে, তাদের নাম কাদের স্বাক্ষরে সুপারিশ করা হয়েছিল।
সাহেবগঞ্জ পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, ২০১৩ সালের জুনে স্পেশাল ব্রাঞ্চে একজন ডিএসপি, একজন ইন্সপেক্টর ও তিনজন সাব ইন্সপেক্টরকে বদলি করা হয়েছিল। ওই সময়ে জাল পাসপোর্ট প্রদানের ঘটনাগুলো ঘটে। এটা বিস্ময়কর যে, কোন যাচাই বাছাই ছাড়াই ওই ব্যক্তিদের ভারতীয় পাসপোর্ট প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছিল।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, ‘যেসব কাগজপত্র দাখিল করার দরকার পড়ে সেগুলো তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা হয়েছিল। কারণ নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে চলার তাড়া ছিল। এর ১৫ দিন পরে সাহেবগঞ্জ পুলিশ খুবই বিস্মিত হয়, যখন তারা জানতে পারে পাসপোর্ট লাভকারীরা ভারতীয় নন। পাসপোর্ট লাভের জন্য বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা জাল কাগজপত্র দাখিল করেছিল।’
স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিজি রেজি দুংদাং বলেন, পারসোনাল ভেরিফিকেশন ফরম বিভিন্ন স্তরে যাচাই করে দেখা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে যাচাইয়ের আগে স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা ও জেলা পুলিশ এগুলো খতিয়ে দেখে। সে কারণে আমরা এখন প্রত্যেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখবো। মি. দুংদাং আরও বলেন সাহেবগঞ্জে একটি তদন্তকারী দল পাঠানো হবে।
ভারতীয় জনতা পার্টির ঝাড়খ- ভাইস প্রেসিডেন্ট আনন্দ ওঝা বলেন, বাংলাদেশী অভিবাসীরা সাহেবগঞ্জে প্রবেশ করার আগে গঙ্গা পাড়ি দেয়। আর ওই অঞ্চলের সীমান্ত সহজে যাতায়াত যোগ্য নয়।
দি পাওনিয়ার পত্রিকায় বলা হয়েছে, রিজিওনাল পাসপোর্ট কর্মকর্তা সনাতন বলেছেন, ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পাওয়ার পরে তিনি ওই পাসপোর্ট ইস্যু করেছিলেন, তবে ঘটনা জানার পর তিনি তা বাতিল করে দিয়েছেন।
৪০০ রুপির কারণে: পাইওনিয়ার বলেছে, রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের বড় কর্তা (ডিজিপি) রাজিব কুমার আরেকটি ঘটনার বিবরণ জেনে বিস্মিত হয়েছেন এবং তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। বাগোদর এলাকার এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন যে, পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পুলিশ তার বিষয়ে একটি নেতিবাচক রিপোর্ট দিয়েছে। কারণ পুলিশকে তিনি মাত্র ৪০০ রুপি ঘুষ দিয়েছিলেন।