1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

৩৩৬ জনের গেজেট বাতিলে সুপারিশ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১৩ Time View

২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৩৬ জনের গেজেট বাতিলের সুপারিশ করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। তাঁদের অনেকেরই গেজেট বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। বেসামরিক, ভারতীয়, লাল মুক্তিবার্তা, আনসার বাহিনী, সেনাবাহিনী, শহীদ পুলিশ বাহিনীসহ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গেজেট ও তালিকায় তাঁদের নাম ছিল। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় গেজেটভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে ৮৪ জনকে।
একই সঙ্গে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে গেজেটভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে ২৮ জনকে।

যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় রয়েছে, তাঁরা যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় পড়বেন না—মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নেয় ২০২০ সালে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) শুনানি ও যাচাই-বাছাইয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লাল মুক্তিবার্তা ও ভারতীয় তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা নন বলে প্রমাণিত হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর গত বছরের ২৪ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের সভাপতিত্বে জামুকার প্রথম সভা হয়।
সেটি ছিল জামুকার ৯১তম সভা। এরপর এ পর্যন্ত আরো ১০টি সভা হয়েছে।

৩৩৬ জনের গেজেট বাতিলে সুপারিশজামুকার ১১টি সভায় পুলিশ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ৪৭ জনকে, শহীদ পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ছয়জনকে ও সেনাবাহিনী গেজেটভুক্তির জন্য একজনের নামে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাহিনী থেকে বেসামরিক, বেসামরিক থেকে পুলিশ, আনসার থেকে শহীদ আনসার এবং বেসামরিক থেকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে গেজেট পরিবর্তনের জন্য ১৬ জনের নাম সুপারিশ করা হয়।

জামুকা জানিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের এ যাচাই-বাছাই কার্যক্রম এবং বাতিল ও অন্তর্ভুক্তির সুপারিশগুলো বিভিন্ন সময় আসা অভিযোগ, মামলার রায়, সংশোধন ও আপিল শুনানির ভিত্তিতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মূলত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা যাচাই-বাছাই করছি। এ ছাড়া রিট মামলা হয়ে যেগুলো আসছে, সেগুলোরও শুনানি করছি। অভিযোগের ভিত্তিতে যাদের যাচাই করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দেখা গেছে ৯০ শতাংশই অমুক্তিযোদ্ধা বের হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে তালিকাটা প্রায় নির্ভুল হয়ে যাবে বলে আশা করি।

২৪৬ জনের সনদ বাতিলের সুপারিশ, বাদ যাচ্ছে লাল মুক্তিবার্তা ও ভারতীয় তালিকা থেকেও : চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর জামুকার ১০০তম সভা হয়। শুধু এ সভায়ই ১৭৫ জনের গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর আরেকটি সভা হয়। ১০১তম সভায়ও দেশের বিভিন্ন জেলার অন্তত ৭১ জনের বেসামরিক, ভারতীয়, লাল মুক্তিবার্তা, আনসার বাহিনী, সেনাবাহিনী, শহীদ পুলিশ বাহিনী গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। মূলত এই দুই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লাল মুক্তিবার্তা ও ভারতীয় তালিকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ পড়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা মূলত ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন তাঁদের নিয়ে তৈরি।

এত দিন মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকাকে নির্ভরযোগ্য মনে করা হলেও এখন কেন সেখান থেকে নাম বাদ যাচ্ছে—জানতে চাইলে ফারুক-ই-আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারতীয় তালিকা একটা নয়, কয়েকটা আছে। যখন তারা দেখল, প্রথম ভারতীয় তালিকা অথেনটিক (আসল) এবং এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না, তখন আরো কয়েকটা ভুয়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ভারতীয় প্রথম তালিকায় ৫২ হাজারের কিছু বেশি মুক্তিযোদ্ধা আছে। এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু এর পরেরগুলো বিতর্কিত।’

ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘কোনো মুক্তিযোদ্ধা যদি অভিযুক্ত হয় এবং এই দুই তালিকায় তার নাম থাকে, তাহলেও জামুকা তার অধিকার ও ক্ষমতা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করতে পারে।’

জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারতীয় তালিকা পাঁচ রকম আছে। প্রথম তালিকাটাই পুরোপুরি সঠিক। বাকিগুলো ১০০ ভাগ সঠিক নয়।

তালিকা থেকে বাদ যাওয়া ব্যক্তিদের গেজেট বিশ্লেষণ করেও অন্তত পাঁচ রকমের ভারতীয় তালিকা পাওয়া গেছে। এগুলো হলো ভারতীয় তালিকা, ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমান), ভারতীয় তালিকা (সেক্টর), ভারতীয় তালিকা মেঘনা এবং ভারতীয় তালিকা পদ্মা। জামুকার সাম্প্রতিক শুনানি ও যাচাই-বাছাইয়ে এসব তালিকা থেকেই কেউ না কেউ বাদ পড়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে ২৮ জনের গেজেটভুক্তির সুপারিশ : চলতি বছরের জুনে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। পরিবর্তিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যাঁরা রণাঙ্গনে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার), হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত সব নারী (বীরাঙ্গনা) এবং মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া ফিল্ড হাসপাতালের সব ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা-সহকারীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

আগের আইনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমান অধ্যাদেশ মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), যাঁরা পরে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন; যাঁরা বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন ও বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন; মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী, দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকে একটি বৈচিত্র্যময় ও বহুমাত্রিক যুদ্ধ উল্লেখ করে ফারুক-ই-আজম বলেন, “এখানে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকা রেখেছে। তাদের ভূমিকাকে গ্লোরিফাই (মহিমান্বিত) করতে এটা (মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা) বদলানো হয়েছে; কাউকে অবদমিত বা বড় করতে নয়। এটা করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের একটা নিটোল ইতিহাস আসবে। যেমন ‘চরমপত্র’ যুদ্ধের একটা বিরাট ফ্রন্ট। এগুলো যাঁরা করেছেন তাঁদের ভূমিকা কি কম উজ্জ্বল? এখন আমি সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা বললে চরমপত্রও এখানে ঢুকে গেল। যারা এই সবকিছুকে এক কেন্দ্রে নিয়ে এসে এই বৈচিত্র্য নষ্ট করেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করছে।”

আগে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ থাকলেও নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’দের আলাদা করে গেজেট করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের এমনিতেই একটা তালিকা আছে। যেমন—স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সদস্যরা। এখন শুধু তাঁদের গেজেট সংশোধন (মুক্তিযোদ্ধা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী) করে দেওয়া হবে।’

অন্যদিকে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত হিসাব অনুযায়ী জামুকা জানিয়েছে, যাচাই-বাছাই, শুনানি ও আপিল নিষ্পত্তিতে এখন পর্যন্ত ২৮ জন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। তাঁদের গেজেটভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছে জামুকা। এর মধ্যে জামুকার ৯৮ ও ৯৯তম সভায় তিনজন করে ছয়জনকে এবং ১০০তম সভায় ৯ জনকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে গেজেটভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আফসান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এটা নিয়ে এত চর্চা না করে আমাদের বরং একাত্তরের তথ্যভিত্তিক ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা উচিত।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ