1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

কাদঁলো সাভার

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪
  • ৬৫ Time View

image_78451_0বজন হারানোদের বুকফাটা আর্তনাদ,তীব্র কষ্ট আর ক্ষোভকে সঙ্গী করে অভিশপ্ত রানা প্লাজা ধসে নিহত ১১শ৩৫ শ্রমিককে স্মরণ করলো সাভার।

সকাল থেকেই ছিল ধসে পড়া রানা প্লাজার দুর্ঘটনাস্থল অভিমুখী হাজারো মানুষের স্রোত।কারো হাতে ফুল,কারো হাতে কালো পতাকা,কারো মাথায় কালো কাপড় কেউবা কাফনের কাপড়ে ছড়িয়ে শোক আর ভালোবাসা জানাতে আসেন সাভারে রানা প্লাজার সামনে।

সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।

কেউ শ্রদ্ধা জানিয়ে গোপনে অশ্রু বিসর্জন করে ফিরে গেছেন কেউ বা যোগ দিয়েছেন প্রতিবাদী নানা কর্মসূচিতে।এসেছিলেন ভিনদেশীরা-ও।কড়া রৌদ্দুরে দীর্ঘসময় ঠাইঁ দাড়িয়েছিলেন মানববন্ধনে।হাজারো মানুষের ঠেলে ধাক্কা-ও যেন একচুল নিজ স্থানটিতে এক চুল নড়াতে পারেনি এসব ভিনদেশীদের।

সেখানেই কথা হলো কানাডিয়ান সংসদ সদস্য মেথ্যুই কেলওয়ের সাথে।

তখন অবিরত ঘাম ঝরছিলো ভিনদেশী এই সাংসদের গা দিয়ে।

টরোন্টোর এই সাংসদ বললেন,বিশ্ব কাপাঁনো এ ভবন দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা আর আহতদের প্রতি সংহতি জানাতেই এসেছি।

সকালে ক্ষতিপূরণ দাবিতে নিখোঁজ শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ স্বজনরা বিক্ষোভ করে অবরোধের চেষ্টা করেন ঢাকা আরিচা মহাসড়ক।আগে থেকেই মোতায়েন পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মানুষের স্রোত।এক পর্যায়ে সেখানে আসা শোকাহত মানুষের প্রতিবাদে সমাবেশের মুখে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা আরিচা মহাসড়কের যান চলাচল।

পরে মহাসড়কের একটি লেন বন্ধ করে দিয়েই চলে যান চলাচল। মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।

দিনভর বিক্ষিপ্তভাবে সাধারণ মানুষ ও নিহতদের স্বজনরা ফুলেল শ্রদ্ধা জানান ভবন ধসে নিহতদের প্রতি।ঠিক এক বছর আগে যে মূহৃর্তে রানা প্লাজা ধসে পড়ে সে মূহৃর্তটিক স্মরণ করতেই সকাল পৌণে নয়টায় গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সমন্বয়কারী তাসলিমা আখতার লিমার নেতৃ্ত্বে অস্থায়ী বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।পরে প্রতিবাদী সভা রূপ নেয় সমাবেশে।বেলা বাড়ার সাথে সাথে রানা প্লাজার দুর্ঘটনাস্থলে আসা নানা পেশা শ্রেণির মানুষের কষ্ট,রাগ,ক্ষোভ আর দু:খ যেন একাকার হয়ে যায়।ছড়িয়ে পড়ে প্রতিপ্রাণে।

উচ্চারিত হতে থাকে আন্তজাতিক মানদণ্ডে হতাহতের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি।

দাবি জানানো হয়,নিখোঁজ শ্রমিকদের সনাক্তে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ ও তাদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা দেবার।

উদ্ধারকারী খোয়াজ আলী বেশ ক্ষোভের সাথেই বললেন,২৪ এপ্রিলের ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনায় আমরা দাবি জানিয়েছিলাম শোক দিবস ঘোষনার।কিন্তু সেটি রক্ষা হয়নি।

শোকদিবসে কারখানায় কাজ করানোর অভিযোগে সাভারে দুটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা একযোগে কাজ বন্ধ রেখে কালো পতাকা নিয়ে চলে আসেন দুর্ঘটনাস্থলে।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. এমরান এইচ সরকারের নেতৃ্ত্বে সংগঠনটির পক্ষে জানানো হয় ফুলেল শ্রদ্ধা।

ডা. এমরান এইচ সরকার জানান,শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ পায়নি।এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের সমালোচনা করেন তিনি।

ধবংস্তূপ থেকে উদ্ধারের পর রানা প্লাজা ধসে নিহতদের সারি সারি লাশ রাখা হয়েছিল যেখানে সেই অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ছিলো স্বজনহারাদের বুকফাটা কান্না আর হাহাকার।ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী উদ্যোগে সেখানে নিহতদের আত্নার শান্তি কামনা করে আয়োজন করা হয় মিলাদ মাহফিলের।বিভিষিকা সেই দিনগুলোর সাক্ষী স্কুল মাঠেই এই প্রার্থনায় সামিল হন হাজারো মানুষ।দুই হাত তুলে শ্রষ্ঠার কাছে নিহতদের শান্তির জন্যে প্রার্থণা করেন তারা।মিলাদে অংশ নেয়া শোকার্ত মানুষের আহাজারীতে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। মোনাজাত পরিচালনা করেন সাভার মডেল থানা জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম হাফেজ মোহাম্মদ ওমর ফারুক মিলাদ।

সেখানে দেখা মিললো রানা প্লাজা ধসে নিহত মনোয়ার হোসেনের মা মনজিলার সাথে।

রানা প্লাজা ধসে প্রথম দিন ধবংস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় আহত মনোয়ারকে।এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টানা ১০৬ দিন চিকিৎসার পর মারা যায় সে।

কেবল আদরের বুকের ধনই নয় রানা প্লাজা কেড়ে নিয়েছে মনজিলার পরিবার পাঁচ সদস্যকে।

জানালেন, ছেলের স্মৃতির টানেই ছুটে এসেছেন তিনি।কত দিনই না খুঁজে ফিরেছি ছেলেকে।

প্রসঙ্গত:সঙ্গাহীন ছেলেকে অন্য এক নারী নিজের ছেলে দাবি করায় নিজের ছেলেকে ফিরে পেতে রীতিমতো কঠিন পরিক্ষায় অবর্তীর্ণ হতে হয়েছিল মনজেলাকে।

তিনি জানান, প্রথমে এ হাসপাতাল থেকে সে হাসপাতাল কোথাও ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে পরে ভিন্ন নামে তাকে আবিষ্কার করেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মিলাদ যে পরিণত হয় শোকসভায়। নিখোঁজ কন্যার স্মৃতির টানে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার অনুয়পুর গ্রাম থেকে এসেছিলেন হারানো বীণা রানী দাশ।মেয়ে শিউলি রানী দাশকে কেড়ে নিয়েছে রানা প্লাজা।জানালেন,তিনি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছেন মেয়ে যেন স্বর্গীয় হয়।সেখানে সুখে শান্তিতে থাকে।হাজারো স্বজনহারাদের মিলনমেলায় একজনের অশ্রুসিক্ত চোখ যেন জড়িয়ে নেয় স্বজনহারা অন্যকে।এভাবেই কাদঁতে থাকে গোটা অধর চন্দ্র স্কুল মাঠ।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে মারা যায় ১ হাজার ১৩৫ জন। ধ্বংসস্তুপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত এবং ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও ১৯ জন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ