1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
চিকিৎসায় রেসপন্স করছেন খালেদা জিয়া : ডা. জাহিদ নির্বাচনের তফসিলে তারিখ ছাড়াও যা যা থাকে ইসলামিক কর্মকাণ্ড না চললে মসজিদ থেকে লাভ নেই : ধর্ম উপদেষ্টা ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থেকে সচিবালয় ছাড়লেন অর্থ উপদেষ্টা তফসিল ঘোষণার পর আসিফ-মাহফুজের পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে : প্রেসসচিব আগামী নির্বাচন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ : প্রধান উপদেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে : গয়েশ্বর মস্কোর কাছে বিধ্বস্ত রুশ সামরিক কার্গো বিমান, নিহত ৭ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ, অপেক্ষা তফসিলের জরুরি প্রেস ব্রিফিং ডেকেছেন উপদেষ্টা আসিফ, পদত্যাগের গুঞ্জন

একাই লড়েছেন গোল্ডস্টেইন

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৩
  • ৯৯ Time View

‘দুর্নীতির ঘটনায় আমরা চোখ বুজে থাকতে পারি না’- গোল্ডস্টেইনের কোড-আনকোড বক্তব্য ছিল এতটুকুই। পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া নিয়ে ছিল এ বক্তব্য। তারপরের ইতিহাস সবারই জানা। শুধুই অস্বীকার
আর অস্বীকার। আর মিথ্যা সন্দেহের অভিযোগ। এরই মধ্যে পদ্মার পানি গড়িয়েছে অনেক দূর। কোথাও পাড় ভেঙেছে। কোথাও চর পড়েছে। সকল আলোচনার ফসল এখনও শূন্যের কোঠাতেই রয়েছে। একটি সেতু নির্মাণ নিয়ে রাজনীতির মাঠে বিতর্ক চলছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, একটি ইটও বসেনি পদ্মায়। মন্ত্রীকে সরানো হয়েছে। উপদেষ্টাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, সচিবকে কারাগারে যেতে হয়েছে। তবুও সমাধান আসেনি। এক আবুলেই আটকে গেছে সব কিছু। প্রধানমন্ত্রী সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে দেশপ্রেমিক বলেছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান সকালে এক কথা তো বিকালে আরেক কথা বলছেন। কিন্তু গোল্ডস্টেইন। কথা বলেছেন কমই। পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রকৃত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে লড়েছেন। ওয়াশিংটনে অবস্থিত সদর দপ্তরের সিদ্ধান্তের এক চুলও বাড়তি কিছু বলেন নি। প্রবল রাজনৈতিক চাপের মধ্যে, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ভিড় ছাপিয়ে যা সত্য তা-ই বলেছেন। অনড় থেকেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। চায়ের দোকানি থেকে সুধীমহলের আলোচনায় গোল্ডস্টেইন। দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র উদঘাটনে তার নেয়া প্রতিটি পদক্ষেপ ঘুরে ফিরে আলোচনায়। তোপখানার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক অফিসের দূরত্ব বড় জোর চার কিলোমিটার। অথচ ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের চূড়ান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর না করেই ফিরতে হলো।
পুরো নাম এলেন গোল্ডস্টেইন। মার্কিন বংশোদভূত এই স্বর্ণকেশী মাইক্রোইকোনমিস্ট পদে বিশ্বব্যাংকে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮৮তে। তারপর দীর্ঘদিন কাজ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউরোপে। সর্বশেষ কর্মস্থল দক্ষিণ এশিয়া। বাংলাদেশ ও নেপালে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি পদে যোগ দেন ২০০৯-এর নভেম্বরে। এ সময়কালে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক তার নেতৃত্বে ৩৩টি প্রকল্পের অর্থায়নে কাজ করেছে। সর্বাধিক আলোচিত পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প নিয়ে জট বাঁধে। বৃহৎ এই প্রকল্প থেকে ২০১২ সালের ২৯শে জুন দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ায়। একই সঙ্গে জাইকা, এডিবিসহ অন্যরাও মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারপরও তদন্ত চলছে। বিশ্বব্যাংক ওকাম্পোর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক দল দিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে। খতিয়ে দেখছে দুদকের নেয়া পদক্ষেপ। সর্বশেষ দুই আবুলকে নিয়ে থেমে আছে।
ঘটনার পেছনে অনেক ঘটনা। সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন একজনই। বলা যায়- একাই লড়েছেন। এলেন গোল্ডস্টেইন এ লড়াইয়ের পাওয়া না পাওয়া নিয়ে গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কারণে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সব জায়গায় বাংলাদেশের মানুষ আমার প্রশংসা করছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর শক্তিশালী তদন্তের জন্য আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিলাম। চেয়েছিলাম, অর্থ ব্যবহারে যেন স্বচ্ছতা থাকে। আমার নাম যেন এ প্রকল্পে স্মরণীয় হয়ে থাকে। কথা বলেছেন বাংলাদেশ নিয়েও। বলেছেন, দুর্নীতির কারণে প্রতিটি বিভাগে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এজন্য অর্থ আটকে রাখা সমাধান নয়। দেশের মানুষ দেখতে চায়, সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে অর্থ ব্যয় করছে, যাতে তা জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। রাজধানীতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে যাচ্ছেন গোল্ডস্টেইন। তার স্থলে দায়িত্ব নিচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সালমান জহির। পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলমান তদন্ত প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখার কারণে বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন বিশ্বব্যাংকের সদ্যবিদায়ী এলেন। বছরজুড়ে তিনি ছিলেন সকল মহলে আলোচনায়। পদ্মা সেতু হোক আর না হোক তিনি থাকবেন আলোচনায়।
পদ্মা সেতু নিয়ে যা হয়েছিল: ২৯শে জুন পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিল করে। ১লা জুলাই গণমাধ্যমের কাছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ঋণ চুক্তি বাতিল অনাকাঙিক্ষত ও অগ্রহণযোগ্য। ৩রা জুলাই বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট জিম ইয়াং কিং তার পদে যোগ দেয়ার একদিন পর এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানায়, পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিল সঠিক হয়েছে। ৭ই আগস্ট যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্বব্যাংক ঋণ চুক্তি বাতিল করে অপরাধ করেছে। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রচার শুরু হওয়ার পর ২৩শে সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয় ড. মসিউর রহমান ও সৈয়দ আবুল হোসেনকে। ২৭শে সেপ্টেম্বর ছুটি নিয়ে আমেরিকা যান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।  ২১শে সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ফিরে আসার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি দেয়। তাদের বিবৃতিতে ফিরে আসার ক্ষেত্রে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত উল্লেখ করে- ১. নতুন ক্রয় সংক্রান্ত নীতিমালায় বর্ধিত আকারে তদারকের সুযোগ রাখতে হবে। ২. সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ৩. পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ ভাবে দুর্নীতির তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সরকার ওই ৩টি শর্ত মেনে নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে। বিশ্বব্যাংকের মন গলাতে ১৬ই সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন যান প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা ড. গহর রিজভী ও এইচ টি ইমাম। ১৮ই সেপ্টেম্বর ড. মসিউর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের গুপ্তচর আছে তারাই বিশ্বব্যাংকে দুর্নীতির খবর দিয়েছে।
সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয় পর্যালোচনা করতে ৫ই অক্টোবর বিশ্বব্যাংক তিন সদস্যের একটি  বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নাম ঘোষণা করে। তারা দুদকের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবে বলেও জানায়। দুদকের সঙ্গে দু’দফা বৈঠক শেষে কোন তথ্যের আদান-প্রদান ছাড়াই ১৫ই অক্টোবর ফিরে যায় বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দল। ১লা ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকায় আসে বিশ্বব্যাংক গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ৩ সদস্য। এলেন গোল্ডস্টেইন গণমাধ্যমকে জানান, দুদকের তদন্তের ওপর নির্ভর করছে পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ। ৩রা নভেম্বর দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে ডাকা হয় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। ৪ঠা নভেম্বর এক বছর অনুসন্ধান শেষে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন জমা দেন অনুসন্ধানী টিম। ওই প্রতিবেদন নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদের সঙ্গে দু’দফা বৈঠক হয় দুদক কর্মকর্তাদের। বৈঠকে দ্বিমত হয় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে আসামি করা না করা নিয়ে। দুদক দুই আবুলকে আসামি না করার পক্ষে যুক্তি দেখালে সৃষ্টি হয় মতভেদের। বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের প্রধান ওকাম্পো গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উই আর লিভিং’। সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসান চৌধুরীকে বাদ দিয়ে ১৭ই ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ। মামলার আসামিরা হচ্ছেন সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী ফেরদৌস, সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জুবায়ের, এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মাদ মোস্তফা, কানাডিয়ান নাগরিক এসএনসি লাভালিনের পরিচালক ইসমাইল হোসেন, ওই প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহা ও কেভিন ওয়ালিস।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ