1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২৫ অপরাহ্ন

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেটে বন্দি

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১০ Time View

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত হলো অভিবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। আমাদের অভিবাসী কর্মীরা বিদেশে গিয়ে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেন। কষ্টার্জিত অর্থ পাঠান দেশে, তা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে।

বর্তমানে বিশ্বের ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের বেশি কর্মী কর্মরত আছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা যায়।
তবে এ সংখ্যার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নানা কারণেই মানুষ প্রবাস জীবন বেছে নেন। যেসব নাগরিক কাজের জন্য বিদেশে যান এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর দেশে ফিরে আসেন, তাদের সাধারণত অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে কর্মরত অভিবাসীর সংখ্যা এক কোটির কিছু বেশি।
বিশ্বে জনশক্তি রপ্তানির দিক থেকে বাংলাদেশ অন্যতম শীর্ষ দেশ। টানা তিন বছর ১০ লাখের বেশি করে কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে স্মরণীয় মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাত।

২০২৪ সালে মোট ১০ লাখ ১১ হাজার ৮৫৬ জন কর্মী বিদেশে গেছেন, যা বার্ষিক হিসাবে দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু বিপুল পরিমাণ কর্মী পাঠালেও এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ কর্মী গেছেন মাত্র পাঁচটি দেশে- সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
নতুন বাজার যেমন তৈরি হয়নি তেমনি পুরোনো বাজারও দুর্নীতির কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ৯৭,৮৭৩ জন কর্মী বিদেশে যান। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৬২,৪৪২ জনে। অর্থাৎ, চলমান বছরে জানুয়ারির তুলনায় কেবল ফেব্রুয়ারিতেই জনবল রপ্তানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

তিনটি বড় শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
এ তিনটি দেশ হলো- মালয়েশিয়া, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ ছাড়া সৌদি আরব ও কাতারের মতো দেশগুলোতে নিয়োগ কমে যাওয়ায় এবং মালয়েশিয়া, ওমানের পাশাপাশি বাহরাইনের শ্রমবাজারও বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালে সাড়ে ৩ লাখের বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের জুন থেকে দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৪ সালে ১ লাখেরও কম কর্মী দেশটিতে যেতে পেরেছেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ সীমাহীন দুর্নীতি।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩ হাজার ৩৩১ ব্যক্তির কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ আদায়ের মাধ্যমে ৫২৫ কোটি ২২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ৬ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও কর্মকর্তাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৬ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। আসামিরা হলেন- মেসার্স আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের মালিক রুহুল আমিন, সাদিয়া ইন্টারন্যাশনালের মালিক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, ইমপেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসাইন ও এমডি মো. বদরুদ্দৌজা চৌধুরী, আরআরসি হিউম্যান রিসোর্স সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান ও এমডি মো. আলমগীর কবীর এবং থানেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সাবেক এমডি আবদুল্লাহ শাহেদ, পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন ও পরিচালক শামসের আহমেদ।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩ হাজার ৩৩১ ব্যক্তির কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ আদায় করা হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়তি অর্থ আদায় করেছেন। এ সময় তারা বিএমইটি ও বায়রার নিবন্ধন শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে শ্রমিক নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে ১ হাজার ১৫৯ কোটি ৮২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ১৩টি ওভারসিজ কোম্পানির মালিকসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ১৩টি মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেট করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অনুসন্ধানে সিন্ডিকেটের প্রধান সদস্য রুহুল আমিন স্বপনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। স্বপন চাঁদাবাজির মাধ্যমে রাতারাতি ৮ হাজার কোটি টাকা সম্পদের মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তারা দুর্নীতি চক্রের একটি অংশ মাত্র। দুর্নীতির মূল হোতারা এখনো সক্রিয় এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে।

মালয়েশিয়া গত বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির (‘সিন্ডিকেট’ নামে অধিক পরিচিত) মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। অনেক প্রার্থী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিশ্চিত করার পরও শেষ মুহূর্তে এজেন্সিগুলো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে পারেনি। ফলে হাজার হাজার কর্মী আর মালয়েশিয়া যেতে পারেননি।

ওই সময় থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। তবে সরকার বিশেষ জি-টু-জি ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব কর্মীকে মালয়েশিয়া পাঠাচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় পাঠাতে প্রত্যেক কর্মীর জন্য দেড় লাখ টাকা দিতে হয় ১০০ এজেন্সির নামে গড়ে ওঠা চক্রকে। এরপর একই চক্রের অধীন থাকা স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বাণিজ্য চলছে। এতে একজন কর্মী ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় গেছেন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের আগস্টে চালু হওয়ার পর ওই দফায় ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়ায় যেতে পেরেছিলেন। কিন্তু বিমান টিকিট না পাওয়া, রিক্রুটিং এজেন্টের গাফিলতিসহ নানা কারণে দেশটিতে যেতে ব্যর্থ হন প্রায় ১৮ হাজার কর্মী। বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ বৃহৎ এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সম্প্রতি আবারও চালু করার চেষ্টা করছে সরকার।

গত ১৪ মে মালয়েশিয়ায় দেশটির সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।

যাতে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে আবারও। যে প্রক্রিয়া এগোবে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভার মাধ্যমে। কারণ মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কোন কোন খাতে কত সংখ্যক কর্মী নেবে সে সিদ্ধান্ত হবে ওই বৈঠকেই।

কিন্তু এখানেও ঘুরেফিরে আসছে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গ। যা নিয়ে বিভক্ত জনশক্তি রপ্তানিকারকরা। কারও কারও অভিযোগ, সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ায় যাওয়া কর্মীদের কয়েক গুণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া অবৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি কিংবা দালালের দৌরাত্ম্য, এমন নানা কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বারবারই সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশের কর্মীরা।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে বাংলাদেশের এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা নতুন নয়। ‘সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ রেখে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু করলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না’ বলেই মনে করেন অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ