1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৩ অপরাহ্ন

গাজায় ‘দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি’, নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়াল

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫
  • ২৬ Time View

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে মঙ্গলবার ৬০ হাজার ৩৪ জনে পৌঁছেছে। ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এদিন আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

এ ছাড়া চিকিৎসা সূত্রগুলো আলজাজিরাকে জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর থেকে অন্তত ৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৯ জন ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে, যদিও ত্রাণ সরবরাহের জন্য যুদ্ধের মধ্যে ‘বিরতি’ দেওয়া হয়েছে।

আলজাজিরার তারেক আবু আজযুম গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর এল-বালাহ থেকে জানিয়েছেন, স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী সোমবার রাতে ড্রোন, ট্যাংক ও বোমাসহ রোবট ব্যবহার করেছে, যা ছিল সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম রক্তাক্ত রাত।
তিনি বলেন, ‘এটি ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল অভিযানের ইঙ্গিত হতে পারে, যদিও ইসরায়েল এখনো হামলার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেনি।’

এ হামলার মধ্যেই গাজায় ‘দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি’ দেখা দিয়েছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বের ক্ষুধা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)। তারা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ এলাকায় খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্ভিক্ষের সীমা অতিক্রম করেছে এবং গাজা শহরে তীব্র অপুষ্টিও সেই সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘অবিরাম সংঘাত, ব্যাপক স্থানচ্যুতি, মানবিক সহায়তায় চরম সীমাবদ্ধতা, স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনীয় পরিষেবার সম্পূর্ণ ধসে পড়ার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী মোড় নিয়েছে।

খাদ্যগ্রহণ মারাত্মকভাবে কমে গেছে এবং প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন দিনের পর দিন খাবার না খেয়ে থাকছে বলেও জানিয়েছে আইপিসি। জুলাইয়ের প্রথমার্ধে অপুষ্টির হার দ্রুত বেড়েছে। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন হাজারের বেশি শিশু মারাত্মকভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে।

এই সতর্কতা মে মাসে প্রকাশিত আইপিসির আগের বিশ্লেষণের প্রেক্ষাপটে এসেছে, যেখানে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজার সম্পূর্ণ জনসংখ্যা চরম খাদ্য সংকটে পড়বে এবং পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ চরম খাদ্য ঘাটতি, অনাহার ও দারিদ্র্যের শিকার হবে, যদি ইসরায়েল অবরোধ না তোলে এবং সামরিক অভিযান বন্ধ না করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ১৪৭ জন অপুষ্টিতে মারা গেছে, যাদের মধ্যে ৮৮ শিশুও রয়েছে।

গাজায় অনাহার এখন সব শ্রেণির মানুষকে আক্রান্ত করছে। জাতিসংঘ নারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহুস বলেন, গাজার ১০ লাখ নারী ও মেয়ে ‘অভাব অথবা জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার’ মধ্য থেকে একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘এই বিভীষিকা শেষ হওয়া উচিত।
’ পাশাপাশি গাজায় নির্বিঘ্ন মানবিক সহায়তা প্রবেশ, জিম্মিদের মুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান তিনি।

শিশুদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব
গাজার নাসের হাসপাতালের শিশু ও মাতৃকালীন বিভাগের প্রধান আহমেদ আল-ফাররা আলজাজিরাকে বলেন, হাসপাতালে এখন এমন শিশুদের দেখা যাচ্ছে, যাদের ‘মাংসপেশি বা চর্বি নেই, কেবল হাড়ের ওপর চামড়া রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, জীবনের প্রথম তিন বছরে শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র গঠিত হয়। এ সময় তারা যদি অপুষ্টিতে ভোগে, তবে তাদের ফোলিক এসিড, বি১ কমপ্লেক্স ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডের ঘাটতি দেখা দেয়, যা স্নায়ুতন্ত্রের গঠনের জন্য জরুরি। ফলে ভবিষ্যতে শিশুরা মানসিক বিকাশে পিছিয়ে পড়ে, পড়তে-লিখতে অসুবিধা হয় এবং বিষণ্নতা ও উদ্বেগের শিকার হতে পারে।

ডাক্তার উইদআউট বর্ডারসের (এমএসএফ) চিকিৎসক টানিয়া হাজ হাসান আলজাজিরাকে জানান, খাবার আসার পরও ঝুঁকি থেকে যায়। তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, সমস্যা খাবার আসলেই শেষ হয় না…অপুষ্টি শরীরের প্রতিটি কাজকে প্রভাবিত করে। শরীরের সব কোষে পরিবর্তন আসে। অন্ত্রে কোষ মরে যায়, ফলে শোষণ ব্যাহত হয়, ব্যাকটেরিয়ার সমস্যা হয়। অগ্ন্যাশয়ে সমস্যা দেখা দেয়, চর্বি শোষণ কঠিন হয়ে পড়ে। হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়, গঠন নষ্ট হয়, সংযোগে ব্যাঘাত ঘটে, হৃদস্পন্দন কমে যায়। পুনঃখাদ্য প্রদানের সময়ও শিশুরা হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মারা যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাদের লবণের ভারসাম্য বিপর্যস্ত হয়, যা প্রাণঘাতী হৃদস্পন্দন সমস্যার কারণ হতে পারে। তারা সহজেই সেপসিস ও শকে পড়ে। তাদের মধ্যে রক্তচাপ কমে যায়, ত্বকে ঘা হয়, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে, শরীরে পানি জমে, সংক্রমণ হয় এবং দৃষ্টিশক্তি ও হাড়ের ওপর প্রভাব ফেলা ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ