1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

দুবাইয়ে যৌনপেশায় বাংলাদেশি তরুণীরা! ছয়-সাতশ তরুণী পাচার!

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৯
  • ১৭ Time View

দুবাইভিত্তিক সংবাদপত্র ‘গালফ নিউজ’-এ গত ২৯ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দুবাই পুলিশ চারজন অপ্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি তরুণীকে একটি নাইট ক্লাব থেকে উদ্ধার করেছে। নাচের কথা বলে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়া এবং সেখানে নিয়ে যাওয়ার যাবতীয় খরচ এক ব্যক্তি বহন করেন। সেখান থেকেই বাড়তে থাকে রহস্যের জট।

সূত্র মতে, তরুণী সংগ্রহ, পাসপোর্ট করানো, ভিসা সংগ্রহ, বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন পার করানো এবং আরব আমিরাতে ‘ড্যান্স বারে’ পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সবখানে এই পাচারকারি চক্রের বিশ্বস্ত এজেন্ট রয়েছে। তবে, বারে নৃত্য করার নাম করে নেওয়া হলেও এদের অনেক তরুণীকেই যৌন পেশায় বাধ্য করানোর অভিযোগ রয়েছে। এর সাথে এক শ্রেণির ট্রাভেল এজেন্সিও জড়িত রয়েছে।

ড্যান্স বারে নাচ শিখতে আসা তরুণীদের উচ্চ বেতনে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে বিদেশ যেতে রাজি করানো হয়। এরপর আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে যোগাযোগ করে তারা। পরে বিদেশে যেতে রাজি হওয়া তরুণীর ছবি পাঠানো হয় ড্যান্স বারের মালিককের কাছে। ছবি পছন্দ করা হলেই শুরু হয় তরুণীদের পর্যটন ভিসায় বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়ার কাজ।

‘ড্যান্স বারে’ কাজ করে দেশে ফিরে আসা কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরব আমিরাতে যাওয়ার বিষয়টি কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়। যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে দেশে থাকা এজেন্টরা মেয়েদের ছবি ‘ড্যান্স বারের’ মালিকদের কাছে পাঠান। সেখান থেকে পছন্দ করলে তাদের পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। কখনো কখনো নতুন মেয়েদের দেখতে বার মালিকেরা তাদের প্রতিনিধিকে এ দেশে পাঠান। এরপর তাদের পাসপোর্ট করে দেওয়া হয়।

আরব আমিরাতে যাওয়া-আসার পুরো খরচ বহন করেন ‘ড্যান্স বারের’ মালিকেরা। যাওয়ার আগে তাদের অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পৌঁছানোর পর তাদের একটি কক্ষে রাখা হয়। প্রতি কক্ষে ১০-১২ জন থাকেন। থাকা-খাওয়ার খরচ ‘ড্যান্স বারের’ মালিক বহন করেন।

তরুণীদের ভাষ্যমতে, ড্যান্স বারে কাজ করে ফিরে আসা তরুণীরা পরে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেন ভালো উপার্জনের আশ্বাস দিয়ে। এরপর তাদের এজেন্ট বা চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এ জন্য মাথাপিছু কমিশন পান।

এই বক্তব্যের সূত্র ধরে কয়েকটি কথিত ‘ড্যান্স স্কুলে’ খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। এর মধ্যে অনিক সরকার নামে এক যুবকের কথা জানায় ওই তরুণীরা। তার বাড়ি ময়মনসিংহে। লেখাপড়া করেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে নাচ শেখেন। এক সময় দুবাই যান। সেখান থেকে ফিরে এসে নিজেই ‘এডিসি অনিক ড্যান্স কোম্পানি’ নামে নাচের প্রতিষ্ঠান খোলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাচের স্কুলের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেন, নৃত্য শেখানোর নাম করে এই যুবক দীর্ঘদিন ধরেই অপেক্ষাকৃত কম বয়সী তরুণীদের দেশের বাইরে পাঠাচ্ছেন। তার চলাফেরাও বেশ বিলাসী।

ভুক্তভোগী কয়েকজন তরুণী জানান, নারায়ণগঞ্জের ‘গাঙচিল ড্যান্স ফ্লোর’ এবং ‘তারার মেলা নৃত্য একাডেমি’র শিক্ষক মো. আকতার হোসেনও মেয়েদের বাইরে পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত। ওই দুই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ছাত্রও একই কাজে যুক্ত বলে অভিযোগ আছে।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে নয়দিন ধরে নিখোঁজ আছেন মো. আকতার হোসেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সংস্থাই তা স্বীকার করছে না। তবে আকতার হোসেন নিখোঁজের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে নারায়ণগঞ্জ থেকে অর্ধ সহস্রাধিক কিশোরী ও তরুণীকে বিদেশে পাচারের এই লোমহর্ষক কাহিনী।

গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-১১ মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরো জানান, গত এক বছরে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে অন্তত ৬শ’ থেকে ৭শ’ কিশোরী ও তরুণীকে বিদেশে ড্যান্স ক্লাবে উচ্চ বেতনে চাকরি পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়েছে। তাদের বয়স ১৬ থেকে ২২ এর মধ্যে।

নিখোঁজ আকতার হোসেন দুই নম্বর ঢাকেশ্বরী এলাকার ‘গাঙচিল ড্যান্স ফ্লোর’ এর মালিক। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জের আরামবাগ এলাকার ইব্রাহিমের ছেলে।

নিখোঁজ আকতার হোসেনের স্বজনরা জানান, গত ১৫ নভেম্বর আকতারকে অনিক সরকার নামে তার এক বন্ধু ডেকে নিয়ে যায়। অনিক সরকার ‘এডিসি অনিক ড্যান্স কোম্পানী’র মালিক। তারা আকতারের নাচের স্কুলে (ড্যান্স ক্লাব) গেলে সেখান থেকে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে দাবী আকতারের পরিবারের। এরপর থেকে তাকে আর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার একদিন পর ১৭ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং-৭৯৯) করা হয়।

এদিকে সরকারি একটি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. আকতার হোসেনের মালিকানাধীন ‘গাঙচিল ড্যান্স ফ্লোর’ ও ‘তারার মেলা নৃত্য একাডেমি’ এবং অনিক সরকারের মালিকানাধীন ‘এডিসি অনিক ড্যান্স কোম্পানী’ নারী পাচারের কাজে সরাসরি জড়িত রয়েছে। তারা ড্যান্স বারে কাজ দেওয়ার নামে তরুণীদের সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ বিভিন্ন শহরে পাচারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। এদের প্রধান লক্ষ্য নিম্নবিত্ত পরিবারের তরুণীরা। এমন তরুণীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সেখানে নিয়ে তাদের যৌন পেশাতেও বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনিক ও আখতার সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন ড্যান্স বারের সরাসরি মালিক না হলেও ওই সমস্ত বার মালিকদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। তারা অসহায় তরুণীদের বিদেশে ড্যান্স বারে চাকরির কাজে পাঠানোর জন্য রাজি করায়। এ বাবদ এরা ড্যান্স বারের মূল মালিকের কাছ থেকে প্রত্যেক তরুণীর জন্য পায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। মূলত এরাই দুবাই, আবুধাবি, শারজা ও মালয়েশিয়ায় উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীদের পাঠানোর কাজে সম্পৃক্ত। এদের মতো এমন আরও ৫০ জনের নামও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ