1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন

এনআরসি থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় ডুবলেও বাড়ি ছাড়ছে না আসামবাসী

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯
  • ২৫ Time View

ভারতের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা কর্মী (এনডিআরএফ) পরবেশ কুমার বানের পানিতে আধডোবা বাড়ি ছাড়তে বলেই চলেছেন রিনা বেগমকে। কিন্তু আসামের মরিগাঁও জেলার তুলসীবাড়ি গ্রামের ওই নারী কোনোভাবেই বাড়ি ছাড়তে চান না।

অথচ গত দু’দিনে রিনার প্রতিবেশীদের শুকনো জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছেন এনডিআরএফ কর্মীরা। কিন্তু ৫০ বছর বয়সী রিনা বেগম কোমর পর্যন্ত ডুবে থাকলেও বলে চলেছেন, ঘর ছাড়ব কী করে!

উদ্ধারকর্মী পরবেশ জানান, শুধু রিনা বেগমের পরিবারই এরকম নাছোড় বান্দা নয়। অনেকেই নিজেদের বাড়ি ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। প্রত্যন্ত এক জায়গায় গিয়েছিলাম গতকাল। সেখানে একটা বাড়ির মধ্যে ২০ জন দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে শুধু সাতজন এসেছে।

তা সত্ত্বেও ওই মানুষদের নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়ে এসেছিলেন পরবেশ। রাতে পানি বাড়লে পরবেশ কল পান। পরিস্থিতি খারাপ হলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মন বদলায়।

আসামের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি আর জমি হলেঅ পরিচয়ের চিহ্ন। এদিকে চলতি মাসের শেষ দিনই আসামের নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশের শেষ তারিখ। স্থানীয় প্রশাসনের একজন জানান, এ কারণেই তারা সম্ভবত বাড়ি ছাড়তে ভয় পাচ্ছে।

পরবেশ বলছেন, যারা উদ্ধার হতে চাইছেন তারা সমস্ত নথিপত্র আগে সামলে নিচ্ছেন। অনেকবার নিরাপদ জায়গায় আসার পর মানুষজনকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে, কারণ তারা নথিপত্র আনতে ভুলে গিয়েছিলেন।

রিনা বেগমের মেয়ে ও চার নাতনির একমাত্র নিরাপদ জায়গা হলো তাদের শোবার চৌকি। সেটা দু’টি লাঠি দিয়ে উঁচু করে রাখা আছে। সবচেয়ে ছোট নাতনির বয়স মাত্র ছয় মাস। বাচ্চাটা যেখানে ঘুমায়, তার চারপাশে পানি। তাদের জামাকাপড় ভেসে গেছে, চেয়ারগুলো ঘোলা পানিতে উল্টে আছে। দূরে বাথরুমের টিনের ছাদটা শুধু দেখা যায়।

গত রবিবার বিকেলে যখন লহরীঘাট আর ভুরাগাঁওয়ের দু’টি বাঁধ ভেঙে পানি যখন কোমর পর্যন্ত উঠে যায়, রিনা আর তার মেয়ে ধান উপরে তুলতে শুরু করেন। তার জা আর তার মেয়েও তাই করে। তাদের স্বামীরা দিনমজুর, ডিব্রুগড়ে থাকেন।

বর্ষার প্রথম বন্যায় ৪২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আসামের ৩৩টি জেলার মধ্যে ৩০ টিই ক্ষতিগ্রস্ত, ছয়শ ৯৫টি ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন এক লাখ ৪৭ হাজার তিনশ চারজন।

ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের ৯৫ শতাংশ পানির তলায়। অনেকেই বলছেন গত এক দশকেরও বেশি সময়ে এরকম আর হয়নি।

গ্রামগুলোতে চাল, ডাল, লবণ পৌঁছেছে। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, পরিমাণ যথেষ্ট নয়, সমানভাবে ভাগও করা হয়নি। রেভিনিউ সার্কেল অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ত্রাণ আমাদের কাছে পৌঁছাতে সময় লাগে। যেসব গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, সেখানকার লোকজনও ত্রাণ নিতে চলে আসে। সবাই যাতে ভাগ পায়, তা নিশ্চিত করা দুঃসাধ্য।

মঙ্গলবার কেন্দ্র থেকে দু’শ ৫১ কোটি টাকা সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে রিনা বেগম ও তার পরিবারের সারা দিন খাবার জোটেনি। তার স্বামী ভোরবেলা এসে পৌঁছে সবার জন্য চিঁড়া আনতে যান।

রিনা বলেন, এ সপ্তাহে আজই প্রথম বৃষ্টি হলো না। হয়ত এবার ভালো হয়ে যাবে।

পরবেশ কুমার বলেন, পানি নামতে সময় লাগবে। ততক্ষণ তিনি অপেক্ষা করবেন, যদি রিনার মন বদলায়, তিনি ফোন করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ