সারাদেশে আজ রবিবার বজ্রপাতে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ, মাগুরা ও নোয়াখালীতে আজ রবিবার পৃথক বজ্রপাতে বাবা-ছেলে, কৃষক, দুই কলেজছাত্র ও এক স্কুলছাত্রসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন।
পাবনা : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, কাজীপুর ও কামারখন্দ উপজেলায় বজ্রপাতে বাবা-ছেলে ও কলেজছাত্রসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আজ রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন শাহজাদপুর পৌর এলাকার ছয়আনিপাড়া মহল্লার ফারুক হাসানের ছেলে নাবিল হোসেন (১৭), রাশেদুল হাসানের ছেলে পলিং হোসেন (১৬), কাজীপুর উপজেলার ডিগ্রি তেকানী গ্রামের মৃত পারেশ মণ্ডলের ছেলে শামছুল মণ্ডল (৫৫) ও শামছুল মণ্ডলের ছেলে আরমান (১৪)এবং কামারখন্দের পেস্তক কুড়াগ্রামের মৃত আহের মণ্ডলের ছেলে কাদের হোসেন (৩৭)।
কাজীপুরের তেকানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হারুনার রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সকালে ডিগ্রি তেকানী চরে ছেলেকে নিয়ে বাদাম তুলছিলেন শামছুল। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হয়ে দুজনেই ঝলসে যান। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে কাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে উভয়েই মারা যান।
অন্যদিকে দুপুরের দিকে শাহজাদপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে বজ্রপাতে নাবিল ও পলিং নামের দুই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়। নিহত নাবিল ও পলিং হোসেন পৌর এলাকার ছয়আনিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। তাঁরা শাহজাদপুর ডিগ্রি কলেজে প্রথম বর্ষে পড়তেন।
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কামারখন্দ উপজেলার পেস্তক কুড়া গ্রামের একটি ধানক্ষেতে বজ্রপাতে কাদের হোসেন নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, কৃষক কাদের হোসেন বাড়ির পাশে নিজের ক্ষেতের ধান কাটছিলেন। হঠাৎ করেই বৃষ্টি ও বজ্রপাত হতে থাকে। একপর্যায়ে বজ্রপাতে তাঁর শরীর ঝলসে যায়। তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যান।
মাগুরা: মাগুরায় আজ দুপুরে পৃথক বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঝড়ো আবহাওয়ায় বিদ্যুতের পিলার থেকে পড়ে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ জানায়, দুপুর ১টার দিকে সদর উপজেলার আমুড়িয়া গ্রামে মাঠের মধ্যে কৃষি জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে রশিদ মোল্যার ছেলে আলম মোল্যা (৪৫) নিহত হন। অপর দিকে একই সময় সদরের আঠারখাদা এলাকায় বজ্রপাতে শামীম হোসেন (৩৬) নামের এক ভ্যানচালক নিহত হন। তিনি শ্রীপুর উপজেলার জোকা গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে। একই সময় সদরের কুচিয়ামোড়া গ্রামে বিদ্যুতের পিলারে কাজ করার সময় পিলার থেকে পড়ে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার আলতাফ হোসেনের ছেলে মেহেদী নিহত হন।
গাজীপুর : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মাটিকাটা এলাকায় বজ্রপাতে এক পোশাকশ্রমিক নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। নিহত জাফিরুল ইসলাম (২৮) গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জ উপজেলার হরিনাথপুর এলাকার আব্বাস আলীর ছেলে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় মাটিকাটা এলাকার ইনক্রিয়েটেবল অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা আজ সকালে কাজে যোগ দিতে কারখানায় প্রবেশ করছিল। কারখানার গেট দিয়ে প্রবেশ করে ভবনে যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ওই কারখানার অন্তত ১১ জন শ্রমিক আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে শেখ ফজিলাতুন নেছা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পোশাকশ্রমিক জাফিরুল ইসলামের মৃত্যু হয়।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে বজ্রপাতে ইকবাল হাসনাত পিয়াল নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। আজ সকালে নোয়াখালী পৌর এলাকার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পিয়াল নোয়াখালী জিলা স্কুলে দিবা-ক শাখার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত।
পিয়ালের পারিবারিক সূত্র জানায়, সকালে নিজ বাড়ির পাশে খোলা মাঠে ক্রিকেট খেলা শেষে বাড়ি ফিরছিল পিয়াল। হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এরই মধ্যে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
নিহত মো. পিয়াল পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মো. সোহেল রানা জগলু ও পারভিন আক্তারের বড় ছেলে। পিয়ালের মৃত্যুর সংবাদ শুনে তার সহপাঠী, শিক্ষক, স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের বাড়িতে ছুটে যায়। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামে আজ সকাল ৯টার দিকে বজ্রপাতে আবদুর রহিম (৪০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রহিমের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায়।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন তরফদার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে দরুইন গ্রামের একটি ধানি জমিতে রহিমসহ কয়েকজন কৃষক ধান কাটছিলেন। এ সময় প্রচণ্ড ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত হলে রহিমসহ আরেক কৃষক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক রহিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
নওগাঁ: সাপাহার উপজেলায় আজ বজ্রপাতে সোনাভান (২৪) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন সোনাভানের স্বামী রুবেল হোসেন (২৮), সালেহা বিবি (৪২) ও শিশু রাজু (১২)। আহতদের সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
রাঙামাটি: বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে মনছুরা বেগম (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মনছুরা বেগম বাঘাইছড়ি উপজেলার মুসলিম ব্লক এলাকার বাসিন্দা বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সুনামগঞ্জ: সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে বজ্রপাতে লিটন মিয়া (৩০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
লিটন সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার ছেলে। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রফিকুল ইসলাম লিটন মিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।