1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসলে কী ভাবেন মিয়ানমারের বৌদ্ধরা

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
  • ৩৩ Time View

মিয়ানমারের সরকারি এক কমকর্তা কাজ বাদ দিয়ে বসে আছেন; মাংসের দোকানি দিনের জন্য দোকানই বন্ধ করে দিয়েছেন; এক নুডলস বিক্রেতা চেয়ে আছেন তার মোবাইল ফোনের দিকে। সবার আগ্রহ চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ভাষণে তাদের প্রিয় নেত্রী স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি কী বলেন।

গত প্রায় এক মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনবাহিনীর দমন-পীড়ন নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে দেশটি।

সেনা অভিযানের মুখে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে এরইমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৪ লাখ ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এ অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল’ বলে অভিহিত করেছে।

এ অবস্থায় দেশটির নেত্রী সু চির ভূমিকায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। এমনকি তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়ারও দাবি উঠেছে। এ অবস্থায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন সু চি।

২০ সেপ্টেম্বর সিএনএনের খবরে বলা হয়, সু চির ওই ভাষণ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল মিয়ানমারের সংখ্যালঘিষ্ঠ বৌদ্ধ নাগরিকদের মধ্যে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সু চির অবস্থান কি তা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহী তারা। ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী দিক থেকে বৌদ্ধরা চলমান সেনা অভিযানের পক্ষে ও কট্টর রোহিঙ্গাবিরোধী। সু চির ভাষণেও প্রকাশ পেল বৌদ্ধদের মনোভাবই।

ইয়াঙ্গুনের একটি পার্কে বসানো বড় পর্দায় সু চির ভাষণ শুনছিলেন একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ৪১ বছর বয়সী পিউ উইন ই। তিনি বলেন, আমরা অধিকাংশ মানুষ সু চির সঙ্গে আছি। আমরা সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করি, তিনি এ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।

সু চি ভাষণ দিচ্ছিলেন ইংরেজিতে। এতে স্থানীয়দের অনেকেই তা বুঝতে পারছিলেন না। তবে এ নিয়েও গর্বিত বৌদ্ধরা। এদের একজন রিকশাচালক ব্রান স্যান, যিনি টিভিতে সু চি ভাষণ দেখার আশায় কাজ বন্ধ রেখেছেন। বলেন, সু চি আমাদের পক্ষ থেকে বিশ্বকে বলায় আমরা গর্বিত।

সু চির প্রতি সমর্থন জানাতে এদিন অনেকেই নিজেদের ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে সেখানে সু চির ছবি দেন।

মূলত মিয়ানমারের বৌদ্ধ অধিবাসীদের মনোভাবও অনেকটা সু চির মতোই। তারাও সু চির মতো দাবি করছেন, রাখাইন নিয়ে ভুল সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে।

৫৭ বছর বয়সী সরকারি কর্মকর্তা খিন মং মং আরও অনেকের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, রাখাইনের ঘটনা নিয়ে ভুল সংবাদ দিচ্ছে বিশ্ব গণমাধ্যম।

তারা বলেন, গণমাধ্যমগুলো রাখাইনের ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগুলো, যেমন রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি তুলে ধরছে। কিন্তু ধর্মীয়ভাবে সেখানে বৃহৎ বৌদ্ধ লোকজনের অবস্থার কথা বলছে না।

jagonews24

সু চির মতোই ইয়াঙ্গুনের লোকজন রোহিঙ্গাদের এ নামে অভিহিত করে না। তাদের অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে মনে করে। অনেকে আবার রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবেও মনে করে। এবং মিয়ানমার এমন একটি দেশ যেখানে মুসলিম সংখ্যালঘুদের জন্য সামান্য সহানুভূতি দেখা যায়; তবে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটেছে।

মিয়ানমারের লোকজনের প্রচলিত ধারণা রোহিঙ্গারা দেশটির নাগরিক নয়। স্থানীয়দের কাছে রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী- এমনটাই জানালেন ইয়াঙ্গুনের ল্যানমাডং জেলার এক নুডলস বিক্রেতা।

মিয়ানমারে নিজেদের জন্য মুসলিমদের হুমকি মনে করেন বৌদ্ধরা। এমন একজন রাখাইনের রাজধানী সিতেতে দুই বছর ধরে কর্মরত দেশটির অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থার কর্মকর্তা টিন উইন। তিনি বলেন, মুসলমানরা দিন দিন বাড়ছে। তারা অনেক বাচ্চা-কাচ্চা জন্ম দেয়।

তিনি রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে কোনো ভুল দেখছেন না। তবে ওখানে যাননি জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে বাইরে থেকে কারও যাওয়াটা বিপজ্জনক।

মিয়ানমারের ৯০ ভাগ মানুষ বৌদ্ধ। তবে সেখানকার মুসলিমরা বৌদ্ধদের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে এমন ধারণা বেশ প্রতিষ্ঠিত। দিন দিন এ ধারণা বৌদ্ধদের মধ্যে আরও পোক্ত হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হতাশাগ্রস্ত বৌদ্ধরা মনে করে ইসলাম ধর্ম ক্ষতিকর। ফলে অন্য ধর্মের মানুষের উপস্থিতি মেনে নেওয়ায় তাদের (বৌদ্ধ) ধর্মবিশ্বাস দুর্বল হচ্ছে।

সেখানে বিদ্যমান ধর্মীয় বিদ্বেষ, যেটা বৌদ্ধ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত অশ্বিন ওয়ারেথু ধারণ করেন; তা শুধু তার একার নয়, এখন অনেকেরই মনোভাব।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ আরও বলছে, মিয়ানমারের অন্যান্য যে মুসলিম গোষ্ঠী বাস করে, তাদের মসজিদ আক্রান্ত হচ্ছে ও স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটি দেশের সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সম্পর্কে জানান দেয়।

তবে রোহিঙ্গা ইস্যু বা জাতিগত বিষয় নিয়ে সবাই এ মতের নয়। কেউ কেউ স্থিতিশীলতা চান, শান্তি চান। এমনই একজন ২৫ বছর বয়সী নার্সিং শিক্ষার্থী লিয়াম নুয়াম। যিনি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।

তবে সু চি স্টেট কাউন্সিলর হলেও দেশটির ক্ষমতার মূল চাবি সেনাবাহিনীর হাতেই। তারাই সব কিছুর কলকাঠি নাড়ছে। ফলে দেশটিতে বিপুল জনপ্রিয় সু চিও পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনীর পক্ষেই।

যদিও সু চির সমর্থকদের মধ্যে একটা অংশ রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক। তারা চান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ও প্রত্যাশা অনুযায়ী সু চি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা করুক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ