1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

খুলবে কী সালমান মৃত্যুর রহস্যজট?

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭
  • ৫৬ Time View

ঢাকাই ছবির অমর নায়ক তিনি। কেউ বলেন এদেশীয় চলচ্চিত্রের রাজ্যের রাজকুমার। কেউ কেউ ভালোবাসার নন্দিত আসনে বসিয়ে হানায়ক বলতেও দ্বিধা করেন না। যে যাই বলুন, যে যেভাবেই সম্বোধন করুন- সালমান শাহ যে আজও এদেশের চলচ্চিত্রের দর্শকদের মনে অনন্য হয়ে আছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ধূমকেতুর মতো তিনি হাজির হয়েছিলেন আমাদের সিনেমার আসমানে। কাঁপিয়ে দিয়ে গেলেন ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা। অল্প কিছু ছবি করতে পেরেছিলেন। সেগুলোর নব্বই ভাগই ছিলো সুপার ডুপার হিট। মৌসুমী ও শাবনূরের সঙ্গে তার জুটি জনপ্রিয়তার আকাশ ছুঁয়েছিলো। তবে লিমা, শাবনাজ, শ্যামা, শিল্পী, সোনিয়াসহ আরও বেশ ক’জন নায়িকার সঙ্গে সফল হয়ে সালমান প্রমাণ দিয়েছিলেন তিনি কোনো গন্ডিতে আবদ্ধ নন।

তার হাসি, কান্না, ফ্যাশন, চলন, বলন, দুষ্টুমি, প্রেম- সব কিছুই লুফে নিয়েছে তার প্রজন্মের দর্শক। বিশেষ করে মাথায় কাপড় বেঁধে কালো চশমার সালমান হয়ে উঠেছিলেন সারা বাংলার যুবকের আইকন। আজও সেই স্থান নিতে পারেননি কোনো নায়ক কিংবা তারকা।

শুধু তাই নয়, আজকালকার সুপারস্টারেরা যখন দর্শকপ্রিয়তা নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে বিয়ে করা বউকে লুকিয়ে রাখে তখন সালমান ছিলেন ভিন্ন উদাহরণ। তিনি বিয়ে করেছিলেন সেটা জানতো সবাই। ইন্ডাস্ট্রির মানুষ ও দর্শকেরাও। তবু এদেশের তরুণীদের কাছে সালমান ছিলেন আরাধ্য। সেই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিলো সালমান শাহের মৃত্যুর পর দেশের নানা প্রান্তের তরুণীরা যখন জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন প্রিয় নায়কের শোক সইতে না পেরে। এমন গল্প কেবল সিনেমাতেই মানায়। কিন্তু সালমান দেখিয়ে গেলেন সিনেমার চেয়েও বাস্তব তিনি। তার কাছে হেরে যায় রুপকথার রাজপুত্ররাও।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। আর দশটা দিনের মতোই শুরু হবার কথা ছিলো দিনটা। কিন্তু হয়নি। সকালের রঙ বদলে দুপুর না গড়াতেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লো ভয়ংকর এক সংবাদ। চলচ্চিত্র সুপারস্টার সালমান শাহ আর নেই। তিনি আত্মহত্যা করেছেন। নিমিষেই যেন চমকে গেল সব, থমকেও গেল। হাটে, মাঠে, ঘাটে-গঞ্জে, নগর-বন্দরে, স্কুল-কলেজ, চায়ের দোকান, বাস, ট্রাক, রেল, লঞ্চ, ধনী-গরীব আর মধ্যবিত্ত, প্রেমিক-প্রেমিকা, নববধুর বাসররাত- সবখানে বিষাদের আলো ছড়ানো একই আলোচনা; আর নেই সালমান শাহ। আর কখনোই তাকে নায়িকার প্রেমের জন্য পাগলামী করতে দেখা যাবে না। আর কখনোই প্রেমিকার পত্র পেয়ে আনন্দ অশ্রু ঝড়িয়ে পড়েতে দেখা যাবে না। কেয়ামত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত তিনি থাকবেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অনেক সময় লেগেছিলো চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকের সালমান হারানোর দুঃখ ভুলতে। তবে একটা আক্ষেপ থেকেই গেছে সবসময়। সেটি হলো, সত্যি কী সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন? তবে কেন? নাকি সালমানের মা নীলা চৌধুরীর দাবিটাই যৌক্তিক; খুন করা হয়েছে সালমান শাহকে। অত্যন্ত নিখুঁত পরিকল্পনায়, জঘন্যতমভাবে। সিআইডি, পুলিশ, র‌্যাব- বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংস্থাকে দেয়া হয়েছে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব। সবাই ঘেঁটেঘুটে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এটি আত্মহত্যাই। তবে সালমানের মা ও সালমান পাগল ভক্তরা এইসব রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আপত্তি জানান।

সালমানের মা আদালতে রিট করেন একের পর এক। তারই প্রেক্ষিতে গেল বছরের মাঝামাঝিতে আদালত এই খুনের তদন্তের দায়িত্ব দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনস (পিবিআই)। নতুন করে স্বপ্ন দেখেন নীলা চৌধুরী ও সালমানের ভক্তরা। তবে দিনে দিনে মরচে পড়ে গিয়েছিলো এই স্বপ্ন দেখায়।

সালমান প্রয়াণের ২১ বছর পূর্তি হবে আসছে আগস্টের ৬ সেপ্টেম্বর। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এই রহস্যের জট যখন খুলছিলো না ঠিক তারই প্রাক্কালে বোমা ফাটিয়ে হাজির হলেন সালমান খুনের দায়ে মামলার ৭ নম্বর আসামি রাবেয়া সুলতানা রুবি। সম্প্রতি আমেরিকা প্রবাসী এই নারী একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে হৈ চৈ ফেলে দিলেন সারা বাংলাদেশ জুড়ে। তিনি সালমানের মাকে ভাবী সম্বোধন করে বারবার আকুতি জানিয়ে বলেন, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি। তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। সালমান শাহকে খুনে জড়িত ছিলেন তার স্বামী যিনি চীনা নাগরিক চ্যান লিং চ্যান ওরফে জন চ্যান নামে বাংলাদেশে পরিচিত। ধানমন্ডির সাংহাই রেস্টুরেন্টের মালিক তিনি।

চীনাদের দিয়ে এই খুন করানো হয়। এতে জড়িত ছিলেন সালমান শাহের স্ত্রী সামিরার পরিবারও। এই খুনের বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানেন। বিষয়টি যেভাবেই হোক, আবার যেন তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি যেভাবেই পারেন আদালতে সাক্ষী দেবেন।

এই ভিডিও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিলো সারা দেশে। গতকাল সোমবার, ৭ আগস্ট ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায় অনলাইনে। প্রায় কয়েক লক্ষবার এটি শেয়ার হয়েছে ফেসবুকে। গতকালই অনলাইন ও ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ হয় ভিডিওটি এবং তার প্রেক্ষিতে সালমান মায়ের বক্তব্য। জানা যায়, সালমান খুনের আসামী রুবির সঙ্গে যোগাযোগ করছে মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআই-ও।

নতুন করে যেন নতুন স্বপ্ন কিংবা সম্ভাবনার শুরু হলো। গভীর অন্ধকারে থাকা সন্দেহ বুঝি এবার আলোতে আসছে চাইছে। সালমান ভক্তদের ভাষায় প্রকাশ হতে চলেছে ‘সত্যের মৃত্যু নেই’। সবাই ভাবছেন রুবি নামের ওই ভিডিওবার্তা প্রকাশকারী নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই বেরিয়ে আসবে সালমানের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জট।

নতুন করে আবারও সবখানে সালমান শাহ ও তার মৃত্যু রহস্য। অনলাইন তো বটেই বাসা, অফিস, ক্যাম্পাস, চায়ের দোকান, রাস্তা, পার্ক, বাস, ট্রেন, মার্কেট- সবখানেই কাল থেকে সালমানের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা। নতুন রহস্যে বেশ রোমাঞ্চিতও সবাই। এফডিসিতে গিয়েও কাল দেখা গেল সালমানমুখর সবাই। এই আলোচনার মূল বিষয় কে এই রুবি, কেন এতদিন চুপ থেকে হঠাৎ মুখ খুললেন। কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন সালমানের মা এই ভিডিওর প্রেক্ষিতে? এই ভিডিও দেখে কী ভাবছেন সালমানের স্ত্রী সামিরা? সত্যি কী সালমানের শ্বশুর শফিউল হক হীরার বক্তব্য অনুযায়ী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রুবি? এই ভিডিও সূত্র করে নতুন করে কী হবে সালমান খুনের মামলার তদন্ত? কী হবে তার ফলাফল?

এমনি অনেক প্রশ্ন নিয়ে ঘুরছেন এখন চলচ্চিত্র প্রেমীরা। সবাই চাইছেন রাবেয়া সুলতানা রুবিকে আইনের আওতায় আনা হোক। তাকে পুলিশি হেফাজতে এনে সব তথ্যের জট খোলা হোক। মীমাংসা হোক একুশ বছরের মামলার।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ