আজ শনিবার ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার এক বছর পূর্তি হচ্ছে। বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সর্ববৃহৎ এ ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ১ জুলাই, শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে। রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের এ রেস্তোরায় সে সময় ৫ জঙ্গির একটি দুর্ধর্ষ দল অতর্কিত হামলা চালিয়ে রেস্তোরায় প্রবেশ করে ২০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৩০ থেকে ৩৫ জনকে জিম্মি করে রাখে এবং রাতভর হত্যাযজ্ঞ চালায়।
এদিন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অনেকেই আসবেন গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর প্লটের বাড়িটিতে। হোলি আর্টিজান বেকারির সেই আগের ভবনটি আগামীকাল ৪ ঘণ্টার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বেকারির আগের সেই বাড়িটিতে মালিকপক্ষ নিজেদের থাকার জন্য মেরামতের কাজ করছে। তবে এখন ভবনের সামনে সাদা কাপড়ে মোড়ানো লম্বা আকৃতির একটি ডায়াসের মতো তৈরি করা হচ্ছে।
গুলশান হামলার বর্ষপূর্তি আজ: ৪ ঘন্টা উন্মুক্ত হলি আর্টিজান
আর্টিজানের মালিকদের একজন সাদাত মেহেদী বলেন, ‘যে কেউ এসে ভবনের সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। আগামীকাল সকাল ১০ থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সর্ববৃহৎ এ ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ১ জুলাই, শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে। রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের এ রেস্তোরায় সে সময় ৫ জঙ্গির একটি দুর্ধর্ষ দল অতর্কিত হামলা চালিয়ে রেস্তোরায় প্রবেশ করে ২০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৩০ থেকে ৩৫ জনকে জিম্মি করে রাখে এবং রাতভর হত্যাযজ্ঞ চালায়।
গুলশান হামলার বর্ষপূর্তি আজ: ৪ ঘন্টা উন্মুক্ত হলি আর্টিজান
পরদিন শনিবার সকালে রেস্তোরায় জিম্মিদের উদ্ধারে কমান্ডো অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। তবে এর আগে শুক্রবার রাতেই জঙ্গিদের সঙ্গে গোলাগুলিতে ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান নিহত হন।
অভিযান শেষে যৌথ বাহিনী বিদেশি নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত এবং মোট ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে।
গুলশান হামলার বর্ষপূর্তি আজ: ৪ ঘন্টা উন্মুক্ত হলি আর্টিজান
নিহত ২০ জনের মধ্যে দু’জন বাংলাদেশি, ১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান, ৯ জন ইতালিয়ান, ৭ জন জাপানি ও ১ জন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।
নিহত দুই বাংলাদেশি হলেন-ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন এবং ডেএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত আখন্দ। এছাড়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান অবিন্তা কবির ও ভারতীয় তরুণী তারুশি জেইনও নিহতদের মধ্যে ছিলেন। অবিন্তা কবির এলিগ্যান্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান রুবা আহম্মেদের একমাত্র মেয়ে। তিনি নিহত হওয়ার মাত্র ৪ দিন আগে ২৭ জুন বাবার সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে এসেছিলেন।
নিহত ইতালিয়ান ৯ নাগরিক হলেন-আদেলে পুগলিসি, মারকো তোন্দা, ক্লদিয়া মারিয়া ডি’আন্তোনা, নাদিয়া বেনেদেত্তি, ভিনসেঞ্জো ডি’আলেস্ত্রো, মারিয়া রিভোলি, ক্রিস্তিয়ান রসি, ক্লদিয়া কাপেলি ও সিমোনা মন্তি। নিহত ৭ জাপানি নাগরিক হলেন-নাকা হিরোশি, সাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই, হাসিমাতো হিদেকো ও কোয়ো ওগাসাওয়ার।
গুলশান হামলার বর্ষপূর্তি আজ: ৪ ঘন্টা উন্মুক্ত হলি আর্টিজান
এ ঘটনায় সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে দু’দিনের শোক ঘোষণা করেছিলেন। এ ধরনের অতর্কিত হামলা চালিয়ে মানুষজনকে জিম্মি করার ঘটনা বাংলাদেশে সেটিই ছিল প্রথম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সম্প্রতি এক আলোচনায় বলেন, ‘শিগগিরই গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার নির্ভুল ও নিখুঁত অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।’
এ হামলা ও হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
এ ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই মামলার তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। নিহত ২০ জনের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে গত ১৯ জুন আমরা হাতে পেয়েছি। জঙ্গিদের লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনও পাইনি। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে।’
বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি করা এ হামলার এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই রহস্য উদ্ঘাটন করার দাবি করে তিনি বলেন, আসামিদের জবানবন্দি, সংরক্ষিত আলামত, সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে হামলার পুরো ছক পাওয়া গেছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ভিন্নধর্মী বিদেশিদের ইসলামের শত্রু বলে অভিহিত করে তাদের হত্যা করতে বলা হয়েছিল বলে জানা গেছে। ‘এ কাজ সফলভাবে করতে পারলে বেহেশত পাওয়া যাবে’ এমন কথা বিশ্বাস করেই তরুণ জঙ্গিরা হিংস্র খুনি হয়ে উঠেছিল।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ন্যক্কারজনক হত্যাযজ্ঞের এ জঙ্গি হামলার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দিনটিকে শোক ও ক্ষোভের সঙ্গে স্মরণ করতে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
নিহতদের স্মরণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতালি ও জাপানি দূতাবাসের সাথে যৌথ আয়োজনে নানা কর্মসূচি পালন করবে। ইতালির ৯ নাগরিকের স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতালি সরকারের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছে। ইতালি দূতাবাস এবং বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে হবে ওই স্মরণ অনুষ্ঠান। জাপানের সাত নাগরিকের স্মরণে শোকসভার আয়োজন করছে জাপান দূতাবাস ও বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় নিহতদের স্মরণে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আজ শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শান্তি সমাবেশ করবে। গণজাগরণ মঞ্চ আগামী ৪ জুলাই বিকাল ৪টায় শাহবাগে নাগরিক শোক সমাবেশ করবে। সমাবেশ শেষে নিহতদের স্মরণে আলোক প্রজ্জ্বালন করে গণজাগরণ মঞ্চ শ্রদ্ধা জানাবে।
এ ছাড়া ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেন, ডেএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত আখন্দ, এলিগেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যানের মেয়ে মার্কিন নাগরিক অবিন্তা কবির এবং ভারতীয় তারিশি জৈন স্মরণে কয়েকটি অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।