কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ছিল নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল ফিতরের জামাত। আজ সোমবার সকাল ১০টায় অনুষ্টিত হয় জামাত। এ জামাতে দুই লক্ষাধিক মুসল্লি একসাথে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহে যুগে যুগে খ্যাত নামা আলেমগণ ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবার ঈদ জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর মহাসচিব মাওলানা মোঃ ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
কড়া নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত
জামাত শুরুর আগে ঈদগাহ ময়দানে আগত মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে প্রতিবারের মতো এবারও জামাত শুরুর সংকেত দেয়া হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর ৫মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি শর্টগানের গুলি ছোঁড়া হয়েছে। ঈদুল ফিতরের জামাতে মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে পাশের সড়ক এমনকি আশপাশের বাসা বাড়িতেও মুসল্লিরা জামাত আদায় করেন। গত বছরের অনাকাঙ্খিত ঘটনার (জঙ্গি হামলা) কারণে মুসুল্লিদের মাঝে আতংক বিরাজ করায় এবার মুসল্লির সংখ্যা কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুসল্লিরা।
কড়া নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত
গতবারের জঙ্গি হামলার ঘটনার কথা মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো ঢেলে সাজানো হয়েছে। ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহর এবং আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বিজিবি, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, আরআরএফসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় হাজারেরও বেশি সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে। ঈদগাহ ময়দানের বাইরে, ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন। ঈদগাহ ময়দান, আশেপাশের এলাকা এবং অলিগলিসহ মাঠ সংলগ্ন চারপাশের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আসা হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় আওতায়। মাঠে স্থাপন করা হয়েছে আটটি ওয়াচ টাওয়ার। এর ছয়টি পুলিশ বাহিনী ও দুইটিতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্যরা অবস্থান নিয়ে ঈদজামাতের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা তদারকি করেন।
কড়া নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত
ঈদগাহ ময়দানের মোট ২১টি প্রবেশ পথের মধ্যে মুসল্লিদের জন্য ছয়টি প্রবেশপথ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ঈদগাহ ময়দানে এসব প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে দেয়া হয়। । এর আগে আরো অন্তত তিন দফা মেটাল ডিটেক্টরে মুসল্লিদের দেহ তল্লাসি করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের ছাতা বা কোনো ধরণের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুধু জায়নামাজ নিয়ে মুসল্লিরা ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করেছেন।
ঈদ জামাতে অংশ নেন বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহাবুবুর রহমান, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনোয়ার হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. আসাদ উল্লাহসহ সরকারি কর্মকর্তা এবং নানা শ্রেণি পেশার মানুষজন।
ঈদ-উল-ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামায়াতে অংশগ্রহনে ইচ্ছুক মুসুলল্লীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে স্পেশাল ২টি ট্রেন চলাচল করেছে।